কার্বনের রুপভেদ, হীরক ও গ্রাফাইটের কথা, About diamond and graphite, Allotropes of carbon,Pressure Metalization |
কার্বনের রুপভেদ – হীরক ও গ্রাফাইটের কথা - About diamond and graphite - Allotropes of carbon
রসায়নের জাদুঘরে দেখার জিনিস গুলোর মাঝে হীরক শ্রেষ্ঠতম নয়। দেখতে অনন্য হলেও এর গড়ন খুবই সরল। এর সুন্দর ষড়ভুজাকৃতির কার্বন-কঙ্কাল দেখে আজ আর কেউই অবাক হয় না। সেই সপ্তদশ শতকে রসায়নবিদরা মামুলি আতস কাঁচের সাহায্যে সূর্যরশ্মি দিয়ে হীরক কেলাস পোড়াতে পেড়েছিলেন।
বিজ্ঞানীরা মনে মনে বহুকাল অন্য আর একটি চিন্তা লালন করছিলেন। তাঁরা কৃষ্ণসীস (গ্রাফাইট) থেকে হীরক তৈরির কথা ভাবতেন। করণ এরা উভয়েই কার্বন এর রুপভেদ মাত্র এবং এখানে একমাত্র করণীয় কৃষ্ণসীসের কার্বন কাঠামোকে হীরকের কাঠামোয় পুনর্বিন্যস্ত করা। আর তা হলেই চিচিংফাঁক; কোন কিছু, সরিয়ে বা যোগ না করেই, অতি কোমল একটি উপকরণ থেকে তৈরি হবে কঠিনতম পদার্থ।
শেষে, পথের সন্ধান মিলল। কাহিনীটি কৌতুকপ্রদ আর আমরা তা যথাস্থানে বলব। এখন শুধু এটুকুই স্মরণীয় যে, কৃত্রিম হীরক তৈরিতে প্রচণ্ড চাপের প্রয়োজন হয়েছিল।
তাই চাপই এই গল্পটির নায়ক। আর এই চাপ এক, দুই কিংবা দশ বায়ুমণ্ডলিয়
চাপ নয়। এটি অতি উচ্চ চাপ, সেখানে সমান তলের প্রতি বর্গ সেন্টিমিটারে শত লক্ষ কিলোগ্রাম ভরের চাপ।
Atomic structure of diamond and graphite
অতি উচ্চ চাপে বেশ কয়েকটি অজ্ঞাত পদার্থ তৈরি সম্ভব হয়েছে। রসায়নবিদরা শুধু, দুই ধরনের ফসফরাস এর বিষয়েই জানতেন – সাদা ও লাল। এখন ফসফরাসের আরও একটি প্রকার আমরা জানি। এটি কালো। কালো ফসফরাস সবচেয়ে ভারি, সবচেয়ে নিরেট আর ধাতুর মতোই বিদ্যুৎপরিবাহী। বিশিষ্ট অধাতু এই ফসফরাস অতি উচ্চ চাপে ধাতুর মতই এক পদার্থে রপান্তরিত হয়েছে এবং তা বেশ সুস্থিতও।
ফসফরাসের উদাহরণ অনুসরণ করেছে আর্সেনিক এবং অতঃপর, আরও কয়েকটি অধাতু। বিজ্ঞানীরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই এদের ধর্মের চমকপ্রদ পরিবর্তন লক্ষ্য করে। অতি উচ্চ চাপের বলিষ্ঠ হাত চোখের সামনেই এই গুণগত রপান্তরণ ঘটিয়েছে। পদার্থবিদ্যা অনুসারে ব্যাপারটি মোটেই অত্যাশ্চর্য কিছু নয়। অতি উচ্চ চাপে শুধুমাত্র মৌলের কেলাস এর গঠনের পুনর্বিন্যাস ঘটেছে এবং সেজন্যই এই বাড়তি ধাতব বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব। গত ক'বছরে অতি উচ্চ চাপে ধাতব কার্বন ও সিলিকন তৈরি সম্ভব হয়েছে। আর বিজ্ঞানীরা এখন ধাতব হাইড্রোজেনের কথা ভাবছেন!
এরই ফলশ্রতি বিশুদ্ধ পদার্থবিদ্যাজাত শব্দ : ‘চাপ-ধাতবীকরণ' (Pressure Metalization)।
একটি প্রশ্নঃ
রাসায়নিক মৌলগুলো কি সর্বত্র অভিন্ন? পর্যায়বৃত্তের সুত্র ও মেন্দেলীভের সারণীর বা পর্যায় সারণীর পরাক্রম বিনা ব্যতিক্রমেই মহাবিশ্বের সর্বত্রই কি বিরাজমান? নাকি রুশ বিজ্ঞানীর এই প্রতিভাধর সৃষ্টি কেবল পৃথিবীতেই গ্রাহ্য ?
আশা করি, পাঠকরা আমাদের অগণিত প্রশ্নে অস্বস্তি বোধ করছেন না। বলতে কি, উত্তর দেওয়া অপেক্ষা প্রশ্ন করা অনেক সহজ।
এ সম্পর্কে দার্শনিকদের উত্তর দ্ব্যর্থহীন। তাঁদের মতে পর্যায়বৃত্ত সূত্র ও পর্যায় সারণী বিশ্বজগতের সর্বত্র অভিন্ন। এটাই এগুলির সার্বজনীনতার লক্ষণ। কিন্তু এই সার্বজনীনতা শর্তাধীন যে যেখানে প্রতিবেশ পৃথিবী অপেক্ষা তত বেশি পৃথক নয়, যেখানে তাপ ও চাপমাত্রা বহু সংখ্যায় চিহ্নিত নয়, শুধ, সেখানেই তারা নির্বিশেষ সত্য।
আর এখানেই এর সীমাবদ্ধতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন