![]() |
আলো ও আলোর প্রতিফলন,About Light, reflection of light |
আলো ও আলোর প্রতিফলন - About Light and it’s reflection
ঘরটার দোর-জানালা সব বন্ধ করে একেবারে ঘুটঘুটে অন্ধকার করে দাও, কেবল একটা জানালার একটা খড়খড়ির এতোটুকু ফুটো দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়ুক ঘরের মধ্যে। এমনিতে যদি আলোটা চোখে না পড়ে তাহলে একটুখানি পাউডারের গুড়ো উড়িয়ে দিলেই দেখতে পাবে ফুটো দিয়ে ঢুকে সরু আলোর ফালিটা সোজা এগিয়ে গিয়েছে। এইবার ওই আলোর পথটায় একটা আয়না ধরো--প্রথমে এমনভাবে ধরো যে আলোটা সোজা আয়নাটার ওপর এসে পড়ে। যদি ঠিক সেই ভাবে ধরতে পারো তা হলে দেখবে আলোটা যে পথ দিয়ে আসছে ঠিক সেই পথ দিয়েই আয়না থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু আয়না টাকে একটুখানি বাঁকিয়ে দাও। দেখবে আলোটা আয়না থেকে প্রতিফলিত হয়ে অন্য দিকে চলে যাচ্ছে। আয়নাটা ঠিক কোন দিকে কতোখানি বাঁকা করে ধরলে তার ওপর পড়ে আলোটা ঠিক কোন দিকে কী ভাবে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে তা ছবি থেকে বোঝার চেষ্টা করো।
কিন্তু এবার আয়নাটা রেখে এক টুকরো ব্লটিং পেপার ধরো আলোটার ওপর। দেখবে, আয়নার ওপর আলোটা যে-রকম একদিকে না একদিকে ফিরে যাচ্ছিলো এখন আর তা হচ্ছে না। তার বদলে সারা ঘরময় আলো ছড়িয়ে পড়ছে— অন্ধকারে ঘরের কোণায় আগে যা চোখে পড়ছিলো না এখন তা চোখে পড়ছে। কিন্তু ব্যাপারটা কী?
আয়নার ওপর পড়লে আলো তো প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়, ব্লটিং কাগজের ওপর পড়লে আলো আর প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় না নাকি?
তা নয়। ব্লটিং-এর ওপর পড়লেও আলো প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায়। তবে এ-রকম ব্যাপার হবার আসল কারণ হলো ব্লটিং কাগজের গা-টা আয়নার মতো মসৃণ নয় : খসখসে, এবড়োখেবড়ো। আর তাই, ব্লটিং পেপারের গায়ের ওপর আলোটা এসে পড় বার পর ব্লটিং কাগজের গায়ের ছোটো ছোটো উচু নীচু নানান রকমের অংশ আলো টাকে নানান দিকে ছিটিয়ে দেয়। ব্লটিং পেপারের প্রতিটি দানার ওপর আলো তো আর সমান কোণাকুণিভাবে এসে পড়ছে না যে সমস্ত দানা থেকেই সমান কোণাকুণিভাবে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে। এ-দানার ওপর একরকম কোণাকুণিভাবে এসে পড়ছে আর তাই এ-দানা থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরছে একদিকে, ও-দানার ওপর অন্য রকম কোণাকুণিভাবে এসে পড়ছে আর তাই ও-দানা থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরছে অন্যদিকে—আর এইভাবে নানান দানা থেকে আলো নানান দিকে প্রতিফলিত হয়ে গিয়ে সারা ঘর আলোময় করে দেয়।
আয়নার বেলায় কিন্তু অন্য রকম। কেননা, আয়নার যে-গায়ের ওপর আলোটা এসে পড়লো সেই গাটা অমন এবড়ো-খেবড়ো নয়; মসৃণ, সমান। আর তাই তার ওপর যখন আলো এসে পড়ে তখন তার প্রত্যেক বিন্দুর ওপরই সমান কোণাকুণি ভাবে পড়ে। প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবার সময় তাই নানান বিন্দু থেকে নানান দিকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যায় না, একই দিকে ফিরে যায়।
দেখতে পাবার কথা
সূর্যের দিকে চোখ তুললাম, সূর্যের আলো আমার চোখে এসে পড়লো, আমি সূর্যকে দেখতে পেলাম। কিন্তু যাদের নিজস্ব আলো নেই তাদের দেখা যায় কী করে?
সূর্য বা অন্য কিছুর আলোতে।
কেমন করে?
ধরো আমার সামনের খাতাখানা : সূর্যের আলো তার ওপর এসে পড়েছে, সেই আলো তার গা থেকে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসছে আমার চোখ পর্যন্ত আর এই প্রতিফলিত হয়ে-আসা আলোটা থেকেই আমার চোখ বইটার খবর পাচ্ছে। কিন্তু এখানে একটা দারুণ সমস্যা রয়েছে। একটু আগেই আমরা দেখেছি, একটা জিনিসের গায়ে আলো গিয়ে পড়ার পর আলোর পক্ষে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে আসবার ব্যাপারে বাঁধাধরা নিয়ম আছে : কোন রকম কোণাকুণিভাবে আলো এলে কোন রকম কোণাকুণি বরাবর প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবে তাই নিয়ম। তাহলে তো, বইটাকে ঘরের যে-কোনো জায়গা থেকে দেখতে পাওয়া উচিত নয়। কেননা, বইটার ওপর নিশ্চয়ই একটা বিশেষ কোনো কোনাকুনিভাবে আলো এসে পড়ছে আর তাই একটা বিশেষ কোনো কোনাকুনি বরাবর আলোটার পক্ষে প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাবার কথা। আর যদি তাই হয় তাহলে তো শুধুমাত্র আলোর ওই ফিরতি-পথে চোখ রাখলেই, আমাদের পক্ষে বইটাকে দেখতে পাওয়া উচিত। অথচ ঘরের যে কোনো দিক থেকে দেখলেই তো বইটাকে আমরা দেখতে পাই! তা কেমন করে সম্ভব হয়?
তার আসল কারণ হলো, বইটা আয়নার গায়ের মতো মসৃণ নয়, অল্পবিস্তর এবড়ো-খেবড়ো। তাই, এবড়ো-খেবড়ো ব্লটিং কাগজের গা থেকে যে-রকম চার দিকেই আলো প্রতিফলিত হয় বইটার গা থেকেও সেই রকমই প্রতিফলিত হয়। তা না হলে চারদিক থেকেই বইটাকে আমরা দেখতে পেতাম না। অবশ্য, আমরা সাধারণত যে-সব আয়না ব্যবহার করি সেগুলোর গা ব্লটিং বা বইয়ের চেয়ে বেশি মসৃণ হলেও একেবারে নিখুত মসৃণ নয়—তাই অন্ধকার ঘরে সেগুলোর ওপর এক ফালি আলো এসে পড়ার পর চারদিক থেকেই আয়নাগুলোকে দেখতে পাওয়া যায়। যদি সম্পূর্ণ রকমের মসৃণ কোনো আয়না হয় তাহলে অন্ধকার ঘরে তার ওপর এক ফালি আলো এসে পড়ার পর শুধুমাত্র যে-পথে ওই আলো প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাচ্ছে সেই পথে চোখ রাখলে তাকে দেখতে পাওয়া সম্ভব হতো, আর কোনোখান থেকেই নয়।।
পরের পর্ব - আলোর প্রতিসরণ – Refraction of light
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন