মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স,ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আই. সি.),ডায়োড ভালভ,ট্রায়োড ভালভ, Microelectronics,Integrated Circuit,Diode Valve,Triode Valve |
মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আই. সি.), ডায়োড ভালভ এবং ট্রায়োড ভালভ – Microelectronics, Integrated Circuit, Diode Valve and Triode Valve
মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স (Microelectronics)
ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে ততই বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র মাপে ছোট হচ্ছে। যেমন প্রথম ইলেকট্রনিক কম্পিউটারের মাপ ছিল প্রায় ৩০ মিটার লম্বা, ৩ মিটার উঁচু এবং ১ মিটার পুরু। আর এখন একটা কম্পিউটার টেবিলের ওপরেই বসানো যায়। এর কারণ অর্ধ-পরিবাহী দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস, যেমন ট্রানজিস্টর, ডায়োড ইত্যাদি ক্রমশই মাপে ছোট হচ্ছে। মাপে ছোট করার এই যে প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের এই শাখাকেই বলা হয় মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স । উদাহরণ হিসেবে একটি মাইক্রো-ট্রানজিস্টরের কথা বলা যেতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি এই ট্রানজিস্টরের মাপ ০.৮ X ০.৮ মিলিমিটার। আর এর বেধ ৪ মিলিমিটারের প্রায় এক কোটি ভাগের এক ভাগ। এ রকম ৫০টা ট্রানজিস্টরকে যদি ওপরে ওপরে রাখা যায় তাহলে হয়তো খবরের কাগজের একটা পাতার মতো পুরু হবে। আর প্রমাণ মাপের একটা নস্যির ডিবেতে এ রকম ৮০,০০০ ট্রানজিস্টর সহজেই ঢুকে যাবে।
মাইক্রো-ইলেকট্রনিক্স,ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট (আই. সি.),ডায়োড ভালভ,ট্রায়োড ভালভ, Microelectronics,Integrated Circuit,Diode Valve,Triode Valve |
ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বা আই সি (Integrated Circuit)
১৯৫৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের জন্ম হয়। খড়কের চেয়েও সরু আর ১২ মিলিমিটার লম্বা জারমেনিয়াম অর্ধ-পরিবাহীর একটি চিপ-এর ওপরে তৈরি করা হয়েছিল প্রথম আই সি, যার আবিষ্কারক ছিলেন আমেরিকার ‘টেকসাস ইস্ট্রমেন্টস'-এর তিরিশ বছর বয়স্ক ইঞ্জিনিয়ার জ্যাক কিলবি। আই সি-কে একটি সূক্ষ্ম সার্কিট বলা যেতে পারে। খুব ছোট অর্ধ-পরিবাহী পদার্থের টুকরোর মধ্যে ডায়োড, ট্রানজিস্টর, রোধক, ক্যাপাসিটর ইত্যাদি বহুসংখ্যক বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ জুড়ে গোটা একটি বর্তনী তৈরি করে ফেলা হয়। পরিভাষায় এই অর্ধ-পরিবাহী পদার্থের টুকরোকে বলা হয় সেমি-কনডাকটার চিপ। বর্তমানে সাধারণত এই কাজে সিলিকন ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয়। কোনো একটি বিশেষ আই সি চিপের মাপ ৬ মিলিমিটার X ১৮ মিলিমিটার হতে পারে। আর তার বেধ ২ থেকে ৩ মিলিমিটার। আই সি প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে, ইলেকট্রনিক বর্তনী ততই ছোট হচ্ছে মাপে। কোনো একটি জটিল ইলেকট্রনিক বর্তনীতে তিন-চারটি আই সি ব্যবহার করলে বর্তনীটি যে শুধু মাপেই ছোট হবে তা নয়, তার কারিগরী জটিলতাও অনেক কমে যাবে। কোনো আই সি-কে বর্তনীতে যুক্ত করার জন্য ‘পিন টার্মিনাল থাকে। বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত আই সি-র টার্মিনালের সংখ্যা বিভিন্ন হতে পারে। যেমন ৮, ১০, ১৪, ১৬, ৪০ ইত্যাদি পিন টার্মিনালের সংখ্যা সম্পন্ন আই সি পাওয়া যায়।
ডায়োড ভালভ কী? (Diode Valve)
টমাস আলভা এডিসন যখন ‘এডিসন এফেকট পর্যবেক্ষণ করেন তখন তিনি বুঝতে পারেন নি উত্তপ্ত ফিলামেন্টের ইলেকট্রন বিকিরণই এর মূল কারণ। ১৮৮৩ সালে এডিসনের পক্ষে এ রহস্য না জানাটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ তখনো পরমাণুর অন্যতম উপাদান হিসেবে ইলেকট্রনকে সঠিকভাবে চেনা যায়নি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে স্যার জন অ্যামব্রোস ফ্লেমিং এডিসনের পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি করেন। তখন ইলেকট্রনের স্বরূপ সদ্য জানা গেছে। সুতরাং এডিসন এফেকট’-এর মূল কারণ যে ইলেকট্রন বিকিরণ সেটা ফ্লেমিং বুঝতে পেরেছিলেন। ১৯০৪ সালে এই তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে তিনি তৈরি করলেন ডায়োড ভালভ। একটি বায়ুশূন্য কাচের বারে ভেতরে একটি উত্তপ্ত ফিলামেন্ট ইলেকট্রন-বিকিরণ করে, আর ব্যাটারির পজিটিভ তড়িৎ-দ্বারের সঙ্গে যুক্ত একটি ধাতব পাত সেই মুক্ত ইলেকট্রনকে আকর্ষণ করে টেনে নেয়। অর্থাৎ এডিসনের ব্যবহার করা শীতল ধাতব তারের বদলে ধাতব পাত ব্যবহার করা ছাড়া ডায়োড ভালভ তৈরির জন্য আর কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করেননি ফ্লেমিং। তিনি লক্ষ্য করলেন, ধাতব পাতটি যদি পজিটিভ থাকে তাহলেই ইলেকট্রন প্রবাহিত হবে। কিন্তু পাতটিকে যদি নেগেটিভ তড়িৎ-দ্বারের সঙ্গে যুক্ত করা যায় আর ফিলামেন্টকে পজিটিভ তড়িৎ-দ্বারে যুক্ত করা হয়, তাহলে ইলেকট্রন-প্রবাহ তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে। এই ধারণা থেকেই ফ্লেমিং সিদ্ধান্তে পৌছোলেন যে, যদি ধাতব পাত ও ফিলামেন্টকে ব্যাটারি দ্বারা যুক্ত না করে কোনো এসি ভোল্টেজ জেনারেটরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাহলে এসি থেকে ডিসি ভোল্টেজ পাওয়া সম্ভব। একেই বলা হয় ‘রেকটিফিকেশন বা একমুখীকরণ। এই কারণেই ভালভ-এর সঙ্গে তুলনা করে ডায়োডকে বলা হয় ডায়োড ভালভ। ডায়োড-এর ধাতব পাতটিকে বলা হয় অ্যানোড বা পজিটিভ তড়িৎদ্বার এবং ফিলামেন্টকে বলা হয় ‘ক্যাথোড’ বা নেগেটিভ তড়িৎ-দ্বার। দুটি ইলেকট্রোড বা তড়িৎ-দ্বার ব্যবহার করা হয় বলেই এই ভালভটির নাম হয়েছে ডায়োড।
ট্রায়োড ভালভ কী? (Triode Valve)
ফ্লেমিং-এর ডায়োড আবিষ্কারের ঠিক দু'বছর পরে, ১৯০৬ সালে, মার্কিন আবিষ্কারক লী ডি ফরেস্ট ট্রায়োড ভালভ আবিষ্কার করেন। সেই সময়ে অন্তত তিনশো পেটেন্টের অধিকারী হলেও ট্রায়োড ডি ফরেস্ট-এর জীবনে সেরা আবিষ্কার। তিনি এই ভালভটির নাম দিয়েছিলেন অডিয়ন। কিন্তু পরে অডিয়ন নামটি বাতিল হয়ে গিয়ে ট্রায়োড নামটি জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে ট্রায়োড ভালভে তড়িৎ-দ্বারের সংখ্যা তিনটি। আসলে ডি ফরেস্ট যে কাজটি করেছিলেন তা হলো ফ্লেমিং-এর ডায়োড এর ক্যাথোড ও অ্যানোডের মাঝে আর একটি নতুন তড়িৎদ্বার ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। শুনে কাজটুকু নিতান্ত তুচ্ছ মনে হলেও এই নতুন তড়িৎ-দ্বারই বলতে গেলে বিপ্লব এনেছিল ইলেকট্রনিক্স জগতে। এক রকম রাতারাতি ইলেকট্রনিক ভালভের প্রয়োগ হয়ে গিয়েছিল। বহুমুখী। ডি ফরেস্ট যে নতুন তড়িৎ-দ্বারের প্রবর্তন করেছিলেন তার নাম গ্রিড। বায়ুশূন্য কাচের বাল্বে ক্যাথোড ও অ্যানোডের মাঝে তড়িৎ-দ্বার দু’টির সঙ্গে সমান্তরালভাবে গ্রিডকে বসানো হয়। গ্রিড কিন্তু ক্যাথোড বা অ্যানোডের মতো ধাতব পাত নয়, এটি ঘন তারজালি দিয়ে তৈরি। কারণ গ্রিডের তারজালির ফাঁক দিয়ে ইলেকট্রন কণার স্রোত সহজেই ক্যাথোড থেকে অ্যানোডের দিকে প্রবাহিত হতে পারবে। গ্রিড ছিদ্রহীন ধাতব পাত হলে সেটা সম্ভব হত না। ট্রায়োড়-এর কার্যপ্রণালী থেকে স্পষ্টই দেখা যায় যে, কীভাবে গ্রিডের সামান্য ভোল্টেজ পরিবর্তন করে অ্যানোড ও ক্যাথোডের মধ্যে তড়িৎ প্রবাহ মাত্রা বাড়িয়ে তোলা যায়। এভাবেই ট্রায়োড ভালভ অ্যামপ্লিফায়ারের কাজ করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন