আগের পর্ব - আলোর প্রতিসরণ – Refraction of light
বিজ্ঞানী নিউটন প্রিজম দিয়ে আলোর তরঙ্গের পরীক্ষা করছেন। আলো ভেঙে দেখা,Prism and light refraction |
আলো ভেঙে দেখা - Prism and light refraction
এসো একটুখানি সূর্যের আলো ভেঙে দেখা যাক তার মধ্যে কী আছে। কিন্তু কথা হলো, আলো আবার ভাঙবো কেমন করে?
ওঃ, সে খুব সহজ ব্যাপার। কেবল একটা কাচের প্রিজম জোগাড় করো। যে-দোকানে বিজ্ঞানের জিনিসপত্র কিনতে পাওয়া যায় সেই দোকানেই এই তে-কোনা কাঁচ কিনতে পারবে।
সূর্যের এক ফালি আলোর মুখে ধরো এই কাচের টুকরোটা, দেখবে এটাকে পেরিয়ে যেতে গিয়ে সূর্যের আলো ভেঙে গেলো আর তার মধ্যে থেকে বেরিয়ে পড়লে। কত রকম রঙিন আলো। এই সব রঙিন আলো গুলো পাশাপাশি সাজানো রয়েছে, একপ্রান্তে বেগুনি রং আর একপ্রান্তে লাল। তাহলে সূর্যের আলোর মধ্যে লুকানো ছিলো এতো রকমের রঙিন আলো! কিন্তু, কথা হলো, প্রিজমটা পার হতে গিয়ে সূর্যের আলো কেন এমনভাবে ভেঙে গেলো?
তার কারণটা বুঝতে গেলে প্রথমে জানতে হবে আলো জিনিসটা কী?
আলো আসলে আর কিছুই নয়, ঢেউ বা তরঙ্গ। ঢেউরা অবশ্য ছোটো বড়ো মাঝারি নানান মাপের, আর এই মাপের ওপরই নির্ভর করছে আলোর রং। তার মানে, এক এক মাপের ঢেউয়ের এক এক রকম রং। সবচেয়ে লম্বা লম্বা যে আলোর ঢেউ সেগুলোই হলো লাল, সবচেয়ে ছোটোগুলো হলো বেগুনি। আর মনে আছে তো আলোর তির্যক-গমন বা refraction নিয়ে আলোচনা করার সময় আমরা দেখেছি যে আলো যখন একরকমের পদার্থ ছেড়ে আর একরকম পদার্থের মধ্যে ঢোকে তখন। তার গতিপথ বদল হয়ে যায়। কিন্তু গতিপথ ঠিক কেমন ভাবে বদলায়? কোন দিকে বদলায়? তারও একটা বাঁধাধরা হিসাব আছে। এই হিসাবটা আসলে খুব খটোমটো। তবু মোটের ওপর বোঝার চেষ্টা করা যায়। প্রথমে মনে রাখতে হবে, আলো যখন বাতাসের মধ্যে দিয়ে চলে তখন তার গতিবেগ এক রকম; যখন কাঁচের মধ্যে দিয়ে চলে তখন গতিবেগ অনেক কম। আর এই গতিবেগের ওপরই নির্ভর করে আলো কতোখানি বেঁকে যাবে সেই মাপটা।
শুধু তাই নয়। বাতাসের মধ্যে দিয়ে চলার সময় ছাড়া আর সবের মধ্যে দিয়ে চলার সময় আলোর গতিটা নির্ভর করে আলোর ঢেউয়ের বাঁ তরঙ্গের মাপের ওপর। তাই, যদি দুরকম মাপের ঢেউয়ের আলো হাওয়া দিয়ে একই পথে একসঙ্গে এসে কাচের মধ্যে ঢোকে তাহলে দুটো আলোর মোড় ঘোরার মাপ আলাদা হবে। সূর্যের আলোর মধ্যে যেসব রকমারি আলো একসঙ্গে দল পাকিয়ে ছিলো সেগুলোর ঢেউয়ের বাঁ তরঙ্গের মাপ তো আলাদা আলাদা। তাই প্রিসম-এর মধ্যে ঢুকে এই সব রকমারি আলো তাদের রকমারি মাপ অনুসারে রকমারি ভাবে মোড় নিলো আর তার ফলে তাদের মধ্যে দল ছাড়াছাড়ি হয়ে গেলো। প্রিজমটা পার হয়ে যখন আলোগুলো হাওয়ার মধ্যে বের হলো তখন আবার, তাদের গতিপথের দিক বদল হলো, কিন্তু ভাঙা দল আর জোড়া লাগলো না। আমাদের চোখে আলোগুলো ধরা পড়লো আলাদা আলাদা ভাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন