বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কথা - About Virus and Bacteria

 

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কথা, About Virus and Bacteria

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার কথা - About Virus and Bacteria
সকলেই স্বাস্থ্য চাই রোগকে আমরা চাই এড়িয়ে চলতে রোগ হলে আমরা কাজে অনুপযুক্ত হয়ে পড়ি তখন দুশ্চিন্তা আসে মনে এবং জীবনটা হয়ে পড়ে দুঃখময় দেখা যাক-বা না-যাক রোগ আমাদের দেহের যে-কোনো জায়গায় হতে পারে একমাত্র খাদ্যের দোষেই-যে আমাদের রোগ হয়, তা ঠিক নয় অধিকাংশ রোগই অতি ক্ষুদ্র জীবাণু থেকে, দেহযন্ত্রের গোলযোগে, ভিটামিনের অভাবে এবং আরও অনেক কারণে হয়ে থাকে
পানি আর বাতাস আমাদের জীবন রক্ষায় বড় সহায় আবার এই পানি-বাতাসের মাধ্যমেই কত রোগ-জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করে বাতাসের মধ্যে আছে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য জীবাণু আমরা যেন চারদিকে অজস্র শত্রু নিয়ে বাস করছি ট্রেনের কামরায় লেখা থাকে: মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন চোর, জুয়াচোর, গাঁটকাটা তোমার নিকটেই আছে কিন্তু ট্রেনের বাইরে কী করে আমরা এত চোর-জুয়াচোর গাঁটকাটা রোগ-জীবাণুর মধ্যে বেঁচে আছিভাবলে আশ্চর্য হতে হয়!
কিন্তু ব্যাধিকে বাধা দেয়ার ব্যবস্থাও দেহের মধ্যে অনেকগুলি আছে বাইরের রোগ-জীবাণুকে দেহের চামড়াটা বাধা দেয় সর্বপ্রথম অবশ্য চামড়ার কোনো ক্ষত থাকলে রোগ-জীবাণু সেখান দিয়ে সহজে ঢুকতে পারে ঢুকে পড়ে তারা রক্তকে দূষিত করতে এবং নিজের বংশবৃদ্ধি করতে পারে কিন্তু রোগজীবাণু শরীরে ঢুকে পড়া মাত্রই দেহ তার সুরক্ষিত সৈন্য শ্বেতরক্তকণিকাগুলিকে কাজে লাগিয়ে তারা জীবাণুগুলিকে প্রথমে ঘেরাও করে তারপর চেপে ধরে তাদের সাবাড় করে দেয় কিন্তু রোগজীবাণুর সংখ্যা যেখানে বেশি, যেখানে তারা অধিক শক্তিমানসেখানে শ্বেতকণিকাগুলি তাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না দেহকে তখন রোগে কাবু করে ফেলে
জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া): আমাদের যতরকম অসুখবিসুখ তার জন্য আসল দায়ী হচ্ছে কতকগুলি জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া পচা জিনিশ, ময়লা আবর্জনা এবং যেখানে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সেখানকার পানিতে বা বাতাসে এই জীবাণুর খুব প্রাদুর্ভাব মাছিও এদের পরিবহন করে এই জীবাণুগুলিই এক জায়গা থেকে আর-এক জায়গায় রোগ ছড়িয়ে দেয় লুই পাস্তর নামে এক ফরাসি-বিজ্ঞানী এই জীবাণুর তথ্য আবিষ্কার করে বিজ্ঞান-জগতে তোলপাড় এনে দেন জীবাণুগুলি জীবন্ত আর এত ছোট যে খালিচোখে তাদের দেখাই যায় না! কেবলমাত্র অণুবীক্ষণযন্ত্রের সাহায্যেই তাদের দেখতে পাওয়া যেতে পারে বিভিন্ন রকম রোগের কারণ বিভিন্ন রকম জীবাণু পাস্তুরের আবিষ্কারের পর বিজ্ঞানীরা একটা একটা করে বিভিন্ন রোগের জীবাণুগুলি খুঁজে বের করতে লাগলেন কিন্তু কয়েকটা রোগের জীবাণু তখন খুঁজে পাওয়া গেল না যেমনইনফ্লুয়েঞ্জা বা তার চেয়েও মারাত্মক রোগ-বসন্ত বিজ্ঞানীরা বেশ বুঝতে পারলেন, জীবাণুদের মধ্যেই এমন এক-একটা বিশেষ জাতের জীবাণু আছে যা অতি সূক্ষ্মঅণুবীক্ষণে তারা ধরা পড়ে না কিন্তু এগুলি ভীষণ ছোঁয়াচে যেখানে হাজির হবে সেখানেই রোগ ছড়াবে
ভাইরাস: অণুবীক্ষণ-যন্ত্রে যে-জীবাণু ধরা পড়ল না, তা ধরা পড়ল ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপের কাছে এযাবৎ সবচেয়ে শক্তিশালী অণুবীক্ষণ-যন্ত্রে একটা জিনিশকে বড়জোর দু-হাজার গুণ বড় করে দেখা যেত কিন্তু এই ইলেকট্রন-যন্ত্রের সাহায্যে তা দশ হাজার গুণ বড় করে দেখা যেতে লাগল এবারে আর সেই অদৃশ্য শত্রু লুকিয়ে থাকতে পারল না বিজ্ঞানীরা ধরে ফেললেন তাদের নাম দিলেন ভাইরাস এক-এক জাতের ভাইরাসের চেহারা এক-এক রকম কোনোটা সুতোর মতো, কোনোটা সুচের মতো, কোনোটি গোল, কোনোটি আবার চৌকো! বসন্তের ভাইরাস দেখতে ঠিক পাউরুটির মতো, ইনফ্লুয়েঞ্জার গোল আমাদের শ্বাসপ্রশ্বাসই বাতাসে সাধারণ সর্দিকাশির ভাইরাস ছড়ায় ফলে রোগটা ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মধ্যে
পেনিসিলিন নামে একটা ধন্বন্তরী ওষুধ বেরিয়েছে এই ওষুধটি জীবাণু ধ্বংস করতে ওস্তাদ কিন্তু ভাইরাসকে পেনিসিলিন কিছু করতে পারে না সর্দিরোগের ভাইরাসগুলো কিন্তু রোদের তাপে সহজেই মরে যায় বসন্ত, কলেরা, ডিপথেরিয়া প্রভৃতি রোগের আক্রমণ থেকে টিকা নিয়ে রেহাই পাওয়া যায় কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জার তেমন কিছু প্রতিষেধক বেরোয়নি এখনও ঠাণ্ডা লাগা থেকে যতটা সম্ভব সাবধানে থাকতে হবে এজন্য সুকুমার রায় অবশ্য তোমাদের একটা ওষুধের কথাও বলে দিয়েছেন যদি সম্ভব হয় পরীক্ষা করে দেখতে পারো :
চাঁদের আলোয় পেঁপের ছায়া ধরতে যদি পারো শুকলে পরে সর্দি-কাশি থাকবে না আর কারো
কিন্তু সব রোগই-যে জীবাণু থেকে হয় তাও নয় আগেই বলেছি, শরীরের কয়েকটি গ্রন্থি বিকল হলে বা ভিটামিনের অভাব ঘটলেও রোগ হতে পারে এমনিধারা আর-একটা বেয়াড়া রোগ দেখা যায়, যার নাম দেয়া হয়েছে এলার্জি কারও কারও কোনো জিনিশ সহ্য হয় না কারও ডিম খেলে মুখটা লাল-লাল চাকা-চাকা দাগে ভরে যায়, সারাগায়ে আমবাতের মতো হয়ে পড়ে কারুর বা চিংড়ি মাছ সহ্য হয় না একেবারেই এগুলিকে বলা হয়েছে এলার্জি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন