গ্রিনহাউস ইফেক্ট কতটা বিপজ্জনক,The danger of the greenhouse effect |
গ্রিনহাউস ইফেক্ট কতটা বিপজ্জনক? - The dangers of the greenhouse effect
গ্লোবাল ওয়ার্মিং ও গ্রিনহাউস ইফেক্ট—এ দুটি কথা আজকাল আমরা সব সময় শুনছি। অর্থাৎ পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ধীরে ধীরে গরম হয়ে যাচ্ছে। গ্রিনহাউস ইফেক্ট এর কারণে এটা হচ্ছে বলে বৈজ্ঞানিকরা বলছেন। কয়েক দিন আগে জাতিসংঘ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিজ্ঞানীরা বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের ফলে এক মহাবিপর্যয় দেখা দেবে। বাংলাদেশসহ সমুদ্র উপকূলবর্তী আরো অনেক দেশের অংশবিশেষ সমুদ্রের পানিতে ডুবে যেতে পারে। অবশ্য হঠাৎ করে তা হবে না। ধীরে ধীরে হয়তো ৫০-৬০ বছর বা ১০০ বছরও লাগতে পারে। ঝড়-বৃষ্টি-বন্যার উপদ্রব ক্রমশ বাড়বে।
গ্রিনহাউস কথাটার একটা সহজ অর্থ আছে। ইংল্যান্ড, আমেরিকাসহ অনেক দেশে বরফ পড়ে বলে সেখানে শীতের সময় চাষাবাদ করা কঠিন। এজন্য কাচের ঘর বানিয়ে তার ভেতর সজির চাষ করা হয়। এতে সুবিধা হলো সূর্যের আলো কাচের মধ্য দিয়ে ভেতরে ঢুকে ঘরের মাটি তপ্ত করে তোলে। মাটি আবার সেই তাপ বিকিরণ করতে থাকে। কিন্তু তাপের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য বেশি বলে সেটা কাচের মধ্য দিয়ে বাইরে যেতে পারে না। ফলে ঘরের ভেতরটা গরম থাকে এবং শাকসবজি ফলানো যায়। এ রকম কাচের ঘরকে বলে গ্রিনহাউস, কারণ হিমশীতল আবহাওয়ার মধ্যেও এ রকম ঘরের ভেতর উষ্ণতা ধরে রেখে সবুজ সজির চাষ করা সম্ভব হয়।
আমাদের পৃথিবীকেও এ রকম একটি বিশাল গ্রিনহাউস বলে ধরে নেওয়া যায়। এর চারপাশে কাচের ঘের না থাকলেও রয়েছে বায়ুমণ্ডলের আবরণ। এর মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসে এবং মাটিকে তপ্ত করে তোলে। এই তাপ যখন আকাশের দিকে উঠে যায় তখন বায়ুমণ্ডলে বাধা পেয়ে কিছু তাপ আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। এই উষ্ণতাটুকু
থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষা সম্ভব হতো না। এভাবেই হাজার হাজার বছর ধরে চলছিল। কিন্তু সমস্যা দেখা দিল সভ্যতার বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে যখন মানুষ তেল, কয়লা, কাঠ পুড়িয়ে গাড়িঘোড়া চালানো, রান্নাবান্না ও অন্যান্য কাজকর্ম ব্যাপক আকারে শুরু করল । এসব জ্বালানি পোড়ানোর ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনোক্সাইডসহ আরো নানা ধরনের গ্যাস বের হয়ে আকাশে গিয়ে জমা হতে শুরু করল এবং বেশি হারে তাপ পৃথিবীতে ফিরিয়ে দিতে থাকল। এই গ্যাসগুলোকে বলা হয় গ্রিনহাউস গ্যাস। অন্যদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে মানুষ বন কেটে বসতি গড়ছে, কৃষিজমি বানাচ্ছে। গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে সমস্যা আরো বাড়ছে। কারণ সবুজ গাছপালা নিজেদের খাদ্য তৈরির জন্য বাতাস থেকে যে পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিত সেটা কমে গেল। তাই বন কমে যাওয়ার মানে হলো আকাশে আরো বেশি কার্বন-ডাই অক্সাইড জমা হওয়া এবং সূর্যের আলোয় উত্তপ্ত পৃথিবীর তাপ মহাকাশে মিলিয়ে যাওয়ার পথে বেশি হারে বাধা দেওয়া। এভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এমন এক আশঙ্কাজনক পর্যায়ে এসেছে, যাকে বলা হচ্ছে ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং'।
প্যারিসে সম্প্রতি ‘জলবায়ুর পরিবর্তন বিষয়ক আন্তঃসরকার মূল্যায়ন প্যানেলের চতুর্থ সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে দেখা যায় ১৯৯৫ থেকে ২০০৬, এই বারো বছরের মধ্যে এগারোটি বছরই ছিল বিগত দেড় শ’ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণ আবহাওয়ার । তাদের হিসাবে গত শতাব্দীতে পৃথিবীর তাপমাত্রা প্রায় পৌনে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় এক শ' বছর পর ২১০০ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ১.১ ডিগ্রি থেকে সর্বোচ্চ ৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে। তাপ বৃদ্ধির ফলে উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের হাজার হাজার বছরের জমাট বাধা বরফ তথা হিমবাহ গলতে শুরু করেছে। গলছে হিমালয়সহ বিশ্বের উচু পর্বতমালার চূড়ায় জমাট বাঁধা বরফ। এই বরফ গলা পানি নদী বেয়ে সমুদ্রে যাচ্ছে। বাড়ছে সমুদ্রতলের উচ্চতা। ১৯৯৩-২০০৩ সময়কালে সমুদ্রতলের উচ্চতা গড়ে বছরে ৩.১ মিলিমিটার হারে বেড়েছে। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক অংশ সমুদ্রতলের প্রায় সমান উচ্চতায় রয়েছে। তাই গ্রিনহাউস ইফেক্ট ও গ্লোবাল ওয়ার্মিং আমাদের জন্য সাংঘাতিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে ।
বিশ্বের সব দেশ এখন একটি চুক্তি করছে যেন কাঠ-কয়লা-তেল-গ্যাস পোড়ানো যথাসম্ভব কমিয়ে এনে গ্রিনহাউস ইফেক্ট নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন চেষ্টা করলেও হয়তো বিপর্যয় রোধ করা কঠিন। তাও চেষ্টা করে যেতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন