এডওয়ার্ড জেনার,বসন্ত রোগের টিকা আবিষ্কার,Edward Jenner, the discovery of smallpox vaccine |
এডওয়ার্ড জেনার ও বসন্ত রোগের টিকা আবিষ্কার - Edward Jenner and the discovery of smallpox vaccine
কিছুকাল আগেও লক্ষ লক্ষ মানুষ বসন্ত রোগে মারা যেত। ১৭০০ সাল থেকে ১৮০০ সাল-এই একশ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র ইউরোপ মহাদেশের ছয় কোটি মানুষ বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। আর আমাদের দেশে যে কত লক্ষ মানুষ এই রোগে মরেছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু এ যুগের অনেক চিকিৎসক আছেন যারা আদৌ কোন বসন্ত রোগী দেখেননি। টিকা দেওয়ার নিয়ম আবিস্কারের ফলে এই ভয়ানক রোগ বর্তমানে প্রায় নির্মূল হয়েছে। এই মহতী উদ্ভাবনটি করেন এডওয়ার্ড জেনার নামক একজন ইংরেজ ডাক্তার।
মেডিক্যাল কলেজে পড়াশুনার সময় থেকেই জেনার বসন্ত রোগের আক্রমণ থেকে কিভাবে মানুষকে বাঁচান যায় তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন।
জেনার দেখেছেন কেউ যদি বসন্তে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে যায় তবে তার আর বসন্ত হয় না। এই জন্য অনেকে ইচ্ছা করেই শরীরের মধ্যে বসন্তের জীবাণু ঢুকিয়ে দিত। জীবাণুকে দুর্বল করে দেওয়ার এই একটা নিয়ম তখন অনেকের জানা ছিল। এর ফলে সে ব্যক্তি সামান্য পরিমাণে বসন্তে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে যেত। সুতরাং বাকী জীবন এই রোগ থেকে নিরাপদ থাকতো। কিন্তু এই পদ্ধতি যে খুব কাজের তা প্রমাণ করা যায়নি। কারণ শরীরে বসন্তের জীবাণু ঢুকিয়ে অনেকেই বেশী রকমভাবে বসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতো।
তখনকার সময়ে সাধারণ মানুষ জানত যে, গো-বসন্তে আক্রান্ত ব্যক্তি ভাল হলে সে জীবনে আর বসন্তে আক্রান্ত হয় না। গো-বসন্ত গরুর মধ্যেই বিস্তার লাভ করে এবং গরুর নিকট থেকেই মানুষের মধ্যেও সংক্রমিত হয়। জেনার বসন্তের কিছুটা জীবাণু নিয়ে যারা গো-বসন্তে আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে গিয়েছে সে ধরনের কিছু লোকদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন, কিন্তু এরপরও তাদের বসন্ত হলো না।
জেনার ষোল বছর ধরে নানারকম পরীক্ষা নীরিক্ষার পর সিদ্ধান্ত নিলেন, গো-বসন্তের টিকা নিলে আর বসন্ত হবে না। এ ব্যাপারে ভালভাবে নিশ্চিত হয়ে ১৭৮৮ সালে তার আবিষ্কারের কথা প্রকাশ করেন। প্রথম প্রথম সাধারণ লোক জেনারকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা শুরু করেছিল। পত্রিকায় কার্টুন ছবি বের হলো, গো বসন্তের টিকা দেওয়ার ফলে একজনের মাথা গরুর মাথার মতো হয়ে গিয়েছে, তার মাথায় শিং গজিয়েছে। এ নিয়ে অনেকে খুব হাসাহাসি করল। রয়াল সোসাইটিতে জেনার তার আবিষ্কারের বিবরণী পাঠালে তারা তার আবিষ্কারকে হাস্যকর বিবেচনা করে সে বিবরণী ফেরত দিলেন।
কিন্তু অদম্য মনোবলের অধিকারী জেনার এতে উৎসাহ হারালেন না। তিনি একজন গো-বসন্ত রোগী থেকে জীবাণু নিয়ে একটি আট বছরের সুস্থ সবল ছেলেকে টিকা দিতে এলেন। সে ছেলেটির নাম জিমি ফিপস্। বছরটি ছিল ১৭৯৬ সাল। জিমি ফিপস্ এর বাড়ীর সকলেই সন্ত্রস্ত। জেনার সকলকে অভয় দিয়ে বললেন, আমি আজ এক নতুন ধরনের টিকা দিয়ে যাব, এতে ছেলেটির এখন বসন্ত দেখা দেবে না অথচ ভবিষ্যতে সে এ রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাবে।
তারপর গো-বসন্ত থেকে নেওয়া পুঁজ দিয়ে ছেলেটিকে টিকা দিয়ে দিলেন। তখন চারদিকে বসন্তের ছড়াছড়ি, কিন্তু জিমির বসন্ত হলো না। জেনারের তখন আর কোন সন্দেহ রইল না যে, তিনি মানুষকে এক মারাত্মক রোগ থেকে মুক্ত করার উপায় বের করতে পেরেছেন।
এরপর তিনি নিজের ছেলেকে তিন তিনবার টিকা দিলেন। নিকটে একটা গ্রামে অনেক গরীব লোক বাস করতো। জেনার তাদের সকলকে টিকা দিয়ে দিলেন। মানুষ দেখল, সে গ্রামের কারো আর বসন্ত হলে না। তখন ধীরে ধীরে জেনারের কথায় মানুষ বিশ্বাস করা শুরু করল।
দু’একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি নিজেদের ছেলে মেয়েকে টিকা নেবার জন্য জেনারের কাছে আনতে আরম্ভ করলেন।
এরপর থেকে তিনি সভ্য জগত থেকে স্বীকৃতি ও সম্মান লাভ করতে থাকেন। বৃটিশ পার্লামেন্ট তাকে নাইট উপাধি দেয় এবং বিশ হাজার পাউণ্ড পুরস্কার দান করে। রাশিয়ার জার জেনারকে সোনার আংটি উপহার দেন। ফান্সের নেপোলিয়ান নিজে টিকা নেন ও তাঁর আবিষ্কারের প্রশংসা করেন। জেনারের আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে বসন্ত রোগে মৃত্যু বেশী দেখা গেল না। অনেক দেশ আইন করে মানুষকে টিকা নিতে বাধ্য করল।
এডওয়ার্ড জেনার,বসন্ত রোগের টিকা আবিষ্কার,Edward Jenner, the discovery of smallpox vaccine |
তোমরা হাতের টিকার দাগটির দিকে লক্ষ্য কর আর চিন্তা করো সেই সব নাম না জানা লোকদের কথা যারা জীবনকে ভয় না করে নিজেদের উপর পরীক্ষার সুযােগ দিতে রাজী হয়েছিলেন। আর জেনারের কথা ভাবো যিনি টিকা দেওয়ার নিয়ম আবিষ্কার করে আমাদেরকে বসন্ত রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন