বৃহস্পতিবার, ৮ জুলাই, ২০২১

গ্রাম পজেটিভ বনাম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া - Gram Positive vs. Gram Negative Bacteria

 গ্রাম পজেটিভ বনাম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া -  Gram Positive vs. Gram Negative Bacteria

তোমরা হয়তো জীববিজ্ঞান বইতে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে পড়তে গিয়ে একটা জিনিস খেয়াল করেছো কোনটাতে লেখা গ্রাম পজিটিভ আবার কোনটাতে লেখা এটা (ব্যাকটেরিয়াটা) গ্রাম নেগেটিভ। এই গ্রাম পজিটিভ বা নেগেটিভ হওয়া নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়ার কোষের দেয়ালের বৈশিষ্ট্য বা দেয়ালটি কি দিয়ে তৈরী তার উপর। গ্রাম স্টেইন (Gram Staining)পরীক্ষা বা বিজ্ঞানী গ্রাম এর পদ্ধতির মাধ্যমে এটি নির্ণয় করা হয়। পরীক্ষার এই নামটি ডেনিশ বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান গ্রাম এর নাম থেকে এসেছে।

গ্রাম পজেটিভ বনাম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া,Gram Positive vs. Gram Negative Bacteria,পেপটিডোগ্লাইক্যান,peptidoglycan,lipopolysaccharide,exotoxins

ঐতিহাসিকভাবে, গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে মনেরা রাজ্যকে (Kingdom Monera) মানে ব্যাকটেরিয়াদেরকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা হতঃ ফিরমিকিউটস (Firmicutes; গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতিতে পজিটিভ), গ্র্যাসিলিকিউটস (Gracilicutes; গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতিতে নেগেটিভ), মলিকিউটস (Mollicutes; গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতিতে নিরপেক্ষ) এবং মেন্ডোকিউটস (Mendocutes; গ্রাম স্টেইনিং পদ্ধতিতে পরিবর্তনশীল)

গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলোর কোষ প্রাচীর সাধারণত পেপটিডোগ্লাইক্যান বা মুরেইন (peptidoglycan, or murein) দ্বারা তৈরী। এই ব্যাকটেরিয়া গুলো গ্রাম স্টেইনিং পরে বেগুনি দেখায়। আর গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলোর প্রাচীরের ভেতরের অংশটি পাতলা পেপটিডোগ্লাইক্যান এবং বাহিরের অংশটি লিপোপলিস্যাকারাইড ( lipopolysaccharide ) দিয়ে গঠিত। প্রাথমিকভাবে গ্রাম স্টেইনিং এর সময় এই ব্যাকটেরিয়াগুলো বেগুনী রঙ ধরে রাখতে পারে না। গ্রাম স্টেইনিং টেস্ট করার পরে এই ধরণের ব্যাকটেরিয়া লাল বা গোলাপি রঙ প্রদর্শন করে।

গ্রাম পজেটিভ বনাম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া,Gram Positive vs. Gram Negative Bacteria,পেপটিডোগ্লাইক্যান,peptidoglycan,lipopolysaccharide,exotoxins

পেপটিডোগ্লাইক্যান কি?

এটা হল চিনি আর অ্যামাইনো অ্যাসিড তৈরী ক্ষুদ্র অণু। (চিত্র দেখো) এখানে চিনি আর অ্যামাইনো অ্যাসিড এর মূল উপাদান এন-অ্যাসিটাইলগ্লুকোজঅ্যামাইন (N-acetylglucosamine or NAG) এবং এন-অ্যাসিটাইলমুরামিক অ্যাসিড (N-acetylmuramic acid or NAM) এরা একটার পর আর একটা সুন্দরভাবে সাজানো থাকে। এরা একে অপরের সাথে এমনভাবে ক্রসলিঙ্ক করা থাকে যাতে কোষপ্রাচির শক্তিশালী হয় আবার একটা সুন্দর আকৃতিও লাভ করে থাকে।

এই লেয়ার গুলোর ভিতরে কোষ প্রাচীর থাকে এবং প্রাচীরের ভেতরে টেইকোইক অ্যাসিড (teichoic acid) থাকে যা ব্যাকটেরিয়াকে অন্যের কোষে আক্রমন করতে সাহায্য করে। কিছু কিছু গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীরে মাইকোলিক অ্যাসিড (mycolic acid) থাকে। এটা প্রাচীরের গায়ে মোমের মত স্তর তৈরী করে যা ব্যাকটেরিয়া গুলোকে আরেকটু বেশি নিরাপত্তা দেয়। এই ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মাইকো ব্যাকটেরিয়া বলা হয়। যেমন মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস (Mycobacterium tuberculosis) মাইকোলিক অ্যাসিডযুক্ত ব্যাকটেরিয়াগুলো আবার অ্যাসিড-ফাস্ট ব্যাকটেরিয়া নামেও পরিচিত। কারণ এদেরকে মাইক্রোস্কোপে পর্যবেক্ষণের জন্যে বিশেষ পদ্ধতিতে গ্রাম স্টেইনিং করতে হয় যাকে বলে অ্যাসিড ফাস্ট গ্রাম স্টেইনিং।  

রোগ সৃষ্টিকারী গ্রাম পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলো এক্সোটক্সিন (exotoxins) নামক এক প্রকার বিষাক্ত প্রোটিন নিঃসরণ ঘটায় যা দেহের যে কোন অঙ্গের কোষের জন্যেই মারাত্বক ক্ষতিকর। কিছু কিছু গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াও এক্সোটক্সিন নিঃসরণ ঘটায়।

গ্রাম পজেটিভ বনাম গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া,Gram Positive vs. Gram Negative Bacteria,পেপটিডোগ্লাইক্যান,peptidoglycan,lipopolysaccharide,exotoxins

 গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া গুলোর কোষ প্রাচীর অনেক জটিল হয়ে থাকে। কোষ পর্দার উপর প্লাজমা পেপটিডোগ্লাইক্যান এর একটি পাতলা স্তর থাকে। তার উপর প্রোটিনের পর্দা, মুরেইন লিপোপ্রোটিন (murein lipoproteins) থাকে। এখানে লিপোপলিস্যাকারাইড (lipopolysaccharide or LPS) এর উপস্থিতিও দেখা যায়। এটা ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর জিনিস থেকে রক্ষা করে। লিপোপলিস্যাকারাইড তিনটি জিনিস নিয়ে গঠিত। লিপিড (Lipid A), পলিস্যাকারাইড (polysaccharide), অ্যান্টিজেন (O antigen) (চিত্র) এই লিপোপলিস্যাকারাইড গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়ার এন্ডোটক্সিন নামেও পরিচিত। এরা মানুষের রক্তে প্রবেশ করলে এন্ডোটক্সিনের কারণে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন