দুষ্ট মৌল হাইড্রোজেন,গল্পে গল্পে অণু ও পরমাণু,saroj kanti singh hazari,সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী,Naughty element Hydrogen,Story of Molecules and Atoms |
দুষ্ট মৌল হাইড্রোজেন – গল্পে গল্পে অণু ও পরমাণু – ৬ – এসকেএস হাজারী - Naughty element Hydrogen – Story of Molecules and Atoms – 6 – SKS Hazari
আড্ডার মাঝে এক বন্ধু বললো, “বাংলাদেশে রাজনীতি সত্যই এক উদ্ভট ব্যাপার। যেমন মাঝখানে সত্তর দল মিলে একটি সম্মিলিত বিরোধী দল হয়েছিল যার নেতা ছিলেন আবদুর রব। হাসির ব্যাপার হচ্ছে সত্তুর দলে সত্তর জন সদস্য ছিলো কিনা সন্দেহ।”
বন্ধুদের মধ্যে ছিলেন রাজনীতিবিদ্যার এক অধ্যাপক, তিনি কথাটি লুফে নিলেন, “এ জন্যই তো বলি রাজনীতি বিজ্ঞান খুবই কঠিন। বিজ্ঞানের ছাত্র শিক্ষকেরা কেবল বলে বিজ্ঞান শিখতে অনেক কষ্ট করতে হয়, অথচ তারা জানেনা রাজনীতি বিজ্ঞান এ সব থেকে অনেক অনেক কঠিন। যেমন রাসায়নিক মৌলরা তো দল বদল করে না, অথচ আমাদের অনেক রাজনীতিবিদ প্রায় সময় দল বদল করে, সাথে সাথে তাদের কথাবার্তা আচার আচরণ বদলে যায়। এ সব ব্যাখ্যা করা কত কঠিন।” .
এক বন্ধু টিপ্পনি কাটলো, “একটু অর্থনীতির তত্ত্ব যোগ করো, দেখবে ব্যাখ্যা অতি সহজ।”
আরেক বন্ধু আলোচনা একটু অন্যদিকে ফিরানোর চেষ্টা করলো, “সাধারণ রাজনীতিকদের কথা বাদ দাও। তবে আমাদের দেশের রাজনীতিতে ডঃ কামাল হোসেন এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন, যার সাথে অন্যদের তুলনা হয় না। যেমন তিনি আওয়ামী লীগের একজন বড় নেতা ছিলেন, বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা ছিলেন, শেখ মুজিবের অত্যন্ত ঘনিষ্ট ছিলেন; বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তার সাথে একত্রে জেলে ছিলেন। সুতরাং শেখ মুজিব হত্যা এবং পরবর্তীতে জেলে চারজন বড় নেতা হত্যার পরে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা হওয়ার কথা তারই। অথচ তিনি আওয়ামী লীগে নেই। তার অনেক বক্তব্য শুনে মনে হয়, তিনি এখনো আওয়ামী লীগের লোক। অনেক বি.এন.পি ওয়ালা তো তাই বলে। আবার তাঁর কিছু আচরণে মনে হয় তিনি আওয়ামী লীগ বিরোধী। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা তাই তাঁকে বি,এন,পি সদস্য বলে মনে করেন। এখন অবশ্য তিনি একটি দল করেছেন, তবে সে দলের সত্যিকার নাম কেউ জানে বলে মনে হয় না। সেটি ডঃ কামাল হোসেনের দল নামেই বেশী পরিচিত। সে দলে সম্ভবত তিনিই একমাত্র সদস্য।”
রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক রসায়নের অন্ধ অধ্যাপককে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার রসায়ন বিজ্ঞানে কি এ ধরনের চরিত্র আছে?”
অন্ধ বন্ধু বললেন, “অবশ্যই আছে। হাইড্রোজেন হচ্ছে সে মৌল, যাকে বাংলাদেশের। রাজনীতির ডঃ কামাল হোসেনের সাথে তুলনা করা যায়। তাত্ত্বিকভাবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ অবস্থানে ডঃ কামাল হোসেন থাকার কথা। একইভাবে হাইড্রোজেনের ইলেকট্রন বিন্যাস 1s1. সুতরাং গ্রুপ IA এর শীর্ষ বিন্দুতে হাইড্রোজেনের অবস্থান। কিন্তু হাইড্রোজেনকে গ্রুপ IA এর সদস্য হিসেবে মেনে নেওয়া হয় না। এ গ্রুপের সদস্যদের আরেক নাম হচ্ছে ক্ষার ধাতু। হাইড্রোজেনকে বাদ দিয়ে এ গ্রুপের অন্যান্য সকল সদস্যকে ক্ষার ধাতু বলা হয়। আবার হাইড্রোজেনের কিছু আচরণ গ্রুপ VII A অর্থাৎ হ্যালোজেন গ্রুপের সদস্যদের ন্যায়। তাই কেউ কেউ একে সে গ্রুপের সদস্য মনে করেন, যেমন উঃ কামাল হোসেনকে কেউ কেউ বি.এন.পির সদস্য মনে করেন। দুদল বিজ্ঞানীকে সন্তুষ্ট রাখতে যেয়ে পর্যায় সারণীতে হাইড্রোজেনকে গ্রুপ IA অর্থাৎ ক্ষার ধাতু এবং গ্রুপ VIIA অর্থাৎ হ্যালোজেন মৌল উভয় গ্রুপে রাখা হয়েছে। অথচ হাইড্রোজেনকে কেউ ক্ষার ধাতু বা হ্যালোজেন বলে স্বীকার করে না। আসলে হাইড্রোজেন হচ্ছে একটি স্বতন্ত্র গ্রুপের সদস্য যে গ্রুপে একমাত্র সদস্য হচ্ছে হাইড্রোজেন। বিজ্ঞানীরা এ গ্রুপকে “গণফোরাম” (ড. কামালের দলের নাম) বা এ ধরনের কোন নাম দেননি, তবে তাঁরা হাইড্রোজেনকে একটি স্বতন্ত্র মৌল হিসেবেই বিবেচনা করেন। পর্যায় সারণির আবিস্কারক ম্যান্ডেলিফ পর্যায় সারণিতে হাইড্রোজেনকে কোন স্থানে রাখবেন, তা নিয়ে এতো অসুবিধায় পড়েছিলেন যে, তিনি একে “দুষ্ট মৌল” নামে অভিহিত করেছিলেন।”
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন