শনিবার, ১৭ জুলাই, ২০২১

বন বাচাও - জীবন বাচাও - Save forest - Save Life


বন বাচাও,জীবন বাচাও,Save forest,Save Life

বন বাচাও - জীবন বাচাও - Save forest - Save Life 

ঘটনাঃ ১
নাইরোবির এক রিজার্ভ সংলগ্ন কিছু গ্রামে এক সময় হাতির জ্বালায় গ্রামবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল রাতের বেলায় এরা এসে মাঠের ফসল সাবাড় করত। বছরে একটাই ফসল। হাতিগুলো একগুণ খায় তো নষ্ট করে চারগুণ। শুধু তাই নয়, হাতিগুলো ওদের গরু-বাছুরগুলোকে ধরে টেনে টেনে পা ছেড়ে। বনবিভাগের কাছে এর প্রতিকার চাইল মানুষ। তারা একজন হাতি শিকারি পাঠিয়ে দিল ওদের গ্রামে শিকারি হাতিগুলোকে হত্যা করবে অথবা ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেবে জঙ্গলের অন্য দিকে।
সব কিছু দেখে শুনে শিকারি বলে, এমন ছাড়া ছাড়া জায়গায় চাষ আর ঘাসহীন জমিতে গরু চরিয়ে তোমাদের কি কোন লাভ হয়? কম জায়গায় ঘন করে সবাই একত্রে চাষ করলে অসুবিধে কি? গরুগুলোকেও যদি ওর আশে-পাশে ঠাই দেয়া যায়-তাহলে কেমন হয়? ওরা কথাটা বুঝল। গ্রামের বাইরের দিকের বড় বড় গাছগুলোকে খাম হিসাবে ব্যবহার করে পুরো গ্রামটা কাটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হলো। চাষাবাদ আর গো-চারণ ওর ভিতরে শুরু করা হলো। হাতিরা এখন আর ফসল নষ্ট করতে পারে না। তারা গ্রামের বাইরে থেকেই ঘোরাফেরা করে। ওদের এখন কেউ তাড়াতেও যায় না। হাতির বিষ্ঠাতে প্রচুর বৃক্ষ-বীজ থাকে। অনুকূল পরিবেশে ওগুলো অঙ্কুরিত হলো। বছর ঘুরতে না ঘুরতে চারাগাছের শ্যামলিমায় ভরে উঠল গোটা প্রান্তর। কয়েক বছরের মধ্যেই সেগুলো আকাশের দিকে ডালপালা মেলে মহীরুহে পরিণত হলো। গ্রামের বাইরে আর গরু চরানো হয় না। তাই বনের সাথে সাথে ঘাসও বেড়েছে। গ্রামবাসীর গো-খাদ্য আর জ্বালানীর অভাব হয় না। একেবারে হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। গ্রামবাসীরা এখন সন্তুষ্ট। শান্তিতে বসবাস করতে পেরে হাতির সংখ্যাও বেড়েছে বছরে বছরে বিদেশী টুরিস্টরা আসছে টিকেট কেটে হাতি দেখতে। হাতির সংখ্যা মাত্রা ছড়িয়ে গেলে বেছে বেছে বুড়ো হাতিগুলোকে শৌখিন শিকারিদের কাছে লাইসেন্সের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এরা এখন হিসাব করে দেখছে যে তাদের বাৎসরিক আয় আগের চেয়ে বেড়ে গেছে বহুগুণে।

ঘটনাঃ ২
বেলুচিস্তানের পাহাড়ী জঙ্গলে বন্দুকের চেয়ে কুড়াল অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। কথাটা বলেছেন ডবলু, ডবলু. এফ. এন. (WORLD WIDE FUND FOR NATURE) একজন সংগঠক (আগে এই সংগঠনটার নাম ছিল WORLD WILDLIFE  FUND) তারা সুলেমান পাহাড়ের বনাঞ্চলে গিয়েছিলেন সেখানকার রুক্ষ মানুষগুলোকে দেখেছেন। ওদের বিয়েতে কোন আনন্দোৎসব করা হয় না। যেন এটা কোন আনন্দের ব্যাপারই নয়।  বিবাহেচ্ছু পাত্রকে প্রথা অনুসারে সর্বপ্রথম ১২৫টি চিল-গোজা গাছ কাটতে হবে। ঘর-বাড়ি তৈরির জন্যে এটি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত কাঠ। কাঠ বিক্রির টাকায় ভালমতই কন্যা-পণ দেয়া যায় মেয়ের বাপ-মাকে। বছর (২০০০ সালে)বিবাহেচ্ছু পাত্র আছে ৪০ জন তার মানে ,০০০ চিল-গোজা গাছকে প্রাণ দিতে হবে। তার পরের বছর...ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। ভাবে আর কতদিন ? সব শেষ হয়ে যাবে না ?
একটা পূর্ণ বয়স্ক চিল-গোজাপ্রচুর ফলন দেয়। এর বাদাম আর তেলের চাহিদা করাচি, লাহোর, পেশাওয়ার, কোয়েটা ইসলামাবাদের বাজারে সব সময়েই রয়েছে। গাছের ওপরে কুড়ালের আঘাত-ঘুরে ফিরে মানুষের ঘাড়েই এসে পড়ে। কি করা যায়? এর প্রতিকার কি? সরকারকে অবহিত করা? যদি কোন সরকার না থাকে? তাহলে কাকে?
বেলুচিস্তানের সুলেমান পর্বতরাজির রাজত্বে বন্দুকের আইনই হচ্ছে আইন। আর কোন আইন নেই সেখানে...।।
গোটা পনেরো উপজাতি এই সুবিশাল বনাঞ্চলের শতকরা ৭০ ভাগের মালিক। এখানে সকল তর্কের নিষ্পত্তি হয় এক ঝাক বুলেট দিয়ে। এমনই এক ঝামেলার জায়গায় গিয়েছিলেন সংগঠক (ডবলু, ডবলু. এফ. এন.) ভদ্রলোকটি। তার কাজ ছিল-ওরা যেন ওদের হাতের কালাশনিকভ (রাশান অ্যাসল্ট রাইফেল) মাটিতে নামিয়ে রেখে শান্তির প্রতীক জলপাই শাখা হাতে তুলে নেয়।  প্রথম সম্মেলনে ওরা সকলে বন্দুক ঝুলিয়েই এসেছিল। ওদের বলা হলো, পাহাড়ই ওদের ভবিষ্যৎ গাছ-পালা মাটি আর পানিকে স্ব-স্থানে থাকতে সাহায্য করে। পশু পাখির চারণ ভূমিকে রক্ষা করে। গাছ না থাকলে উপরের মাটি ধুয়ে যাবে। ধস নামবে বার বার। বৃক্ষশূন্য টিলা আর উপত্যকাগুলো পাহাড়ী ঢলে সয়লাব হয়ে যাবে। ঢল অপ্রতিহত ভাবে নেমে আসবে নিচের দিকে। নদীর পাড় ভাঙবে। ঘর-বাড়ি, খেত-খামার সব ভেসে যাবে প্রবল স্রোতের টানে ফলশ্রুতিতে স্থানীয় জনপদের জান-মাল আর্থিক ক্ষতি।
ব্যাখ্যা করা হলো-জঙ্গলের ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে নতুন গাছ লাগিয়ে আবার তা পূরণ করা সম্ভব। কাঠের চেয়ে বাদাম আর তেলে লাভ বেশি। রুক্ষ লোকগুলো সব কথা শুনল। তারপর নিজেদের মধ্যে বহু বাক্যালাপের পর বাৎসরিক গাছ কাটার পরিমাণের ওপর একটা বিধি নিষেধ আরোপের সিদ্ধান্ত নিল।
এটা ছিল ডবলু, ডবলু. এফ. এন. - এর একটা প্রাথমিক পর্যায়ের বনায়ন প্রকল্প। এটাই শেষ নয়। বরং শুরু বলা যেতে পারে এটাকে। দেশে দেশে মানুষকে প্রকৃতি সম্বন্ধে সচেতন করে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বর্তমানে এদের হাতে ১০০টিরও ওপরে বনায়ন কর্মসূচী পৃথিবীর ৪৫টি দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
বস্তুত: বন এবং বন্যপ্রাণী প্রাকৃতিক উপায়েই বেঁচে থাকে। শুধুমাত্র ক্ষতিকর কাজ গুলো থেকে মানুষ বিরত থাকলেই ওদের অনেক উপকার করা হয়ে যায়। বাকিটা ওরা নিজেরাই করে নিতে পারে। উপরন্তু-প্রয়োজনীয় বনায়ন করতে পারলে অচিরেই এরা বংশ বিস্তার করে এক অমূল্য সম্পদে পরিণত হবে। সেখান থেকে সঠিক নিয়মে গ্রহণ করলে একটুও কমবে না বরং তা বেড়ে যাবে বহুগুণে। কারণ প্রকৃতিতে আল্লাহর দান অফুরান। কিন্তু এই প্রকৃতি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ মানুষকেই দিয়েছেন। একতরফা ভাবে শুধু নিতে থাকলে বেশিদিন আর নেয়া হয় না। নেয়ার মত কিছু অবশিষ্টই থাকে না।
তাই আমাদের দেশেও সময় থাকতেই উপযুক্ত পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কারণ ক্ষতিটা যে- করুক না কেন, কুফলটা ভোগ করতে হবে সবাইকে সমান ভাবে। কেউ বাদ পড়বে না তা থেকে ভুলে গেলে চলবে না-আমরা প্রকৃতিরই অংশ। প্রকৃতির সাথে হানাহানি করা নিজের সাথেই হানাহানি করার নামান্তর।
পাপুয়া নিউ গিনিতে কাজ করতে গিয়ে এদের কর্মীদের ভাষা আর উপভাষা মিলিয়ে মোট ১৪০০টি ভাষা শিখতে হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার কলম্বিয়াতে একটি চির-হরিৎ বনের সংরক্ষণের কাজ স্থানীয় লোকদের সহযোগিতায়ই চলছে। পানামাতে স্থানীয় অধিবাসী বুনা-ইন্ডিয়ানদের নিয়ে ওদের স্বদেশ ভূমি রক্ষণের কাজ বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে চলেছে। এই মহতী এবং ব্যয় সাপেক্ষ কর্মকাণ্ডে ইচ্ছা করলে যে কেউ সাহায্য বা অনুদান দিয়ে ভাংশ গ্রহণ করতে পারেন।
যোগাযোগের ঠিকানা: WORLD WIDE FUND FOR NATURE (FORMERLY WORLD WILDLIFE FUND) INTERNATIONAL SECRETARIAT 1196 GLAND. SWITZERLAND.
(বিঃ দ্রঃ উপরের লেখাটি আজ থেকে ২০ বছর পূর্বে ২০০০ সালে লেখা আংশিক পরিবর্তিত )
- - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
Save forest - Save Life -  বন বাচাও - জীবন বাচাও 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন