বুধবার, ২১ জুলাই, ২০২১

বিজ্ঞান কল্পকাহিনী - কুরবানী - Science Fiction - Kurbani

বিজ্ঞান কল্পকাহিনী,Science Fiction,সায়েন্স ফিকশন,
 বিজ্ঞান কল্পকাহিনী - কুরবানী - Science Fiction - Kurbani

বারো কোটি টাকা দেব, পশুটা আমাকে দাও। কোরবানির হাটে চড়া গলায় বলেন রোবটের কন্ট্রাকটারি ব্যবসা-করা রমিজ।  কিছুদিন আগে তিনি আমেরিকার নাসাতে একলক্ষ পিস তৃতীয় প্রজন্মের রোবট পাঠানোর ফরমায়েশ পেয়েছিলেন এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্থ ও কাজের সংখ্যা এরই মধ্যে হু-হু করে বেড়েছে এতটাই বেড়েছে যে, বিশ্বের ১০০০ জন ধনীর মধ্যে তার অবস্থান ৯৫৭ অথচ তিন বছর আগেও তিনি বাড়ি-বাড়ি গিয়ে রোবটের সাপ্লাই করতেন।
স্যার, আরেকটু বাড়ান, আমার মেমোরিতে সেভ্‌ করা আছে, পশুটা কিনতেই খরচ হয়েছে বারো কোটি টাকা যান্ত্রিক গলায় বলে দ্বিতীয় প্রজন্মের রোবটটি
শালার রোবট, মনে মনে গাল পাড়েন তিনি তারপর মুখে বলেন, আচ্ছা, ঠিক আছে, চোদ্দ কোটি দাও, রশি দাও
অনেকদিন পর কোরবানিতে পশু খাওয়া যাচ্ছে বলে মনে মনে আত্মপ্রসাদের একটা ঢেকুর তোলেন রমিজ শেষ কোরবানি দিয়েছিলেন দুই বছর আগে কোরবানির পশুর দাম এখন সোনার চেয়েও বেশি দড়ি-বাধা ক্লান্ত-অবসন্ন পশুটি বার বার হোচট খেয়ে পড়ছে, সেদিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেন না রমিজ অমানবিকের মত টেনে-হিচড়ে নিয়ে চলেন কোরবানির পশুকে

দুই

৫০০০ সাল। মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণ করেছে। বৃহস্পতি গ্রহে ইতোমধ্যেই তারা বসতি স্থাপন করেছে। ব্ল্যাক হোলকে বিজ্ঞানীরা, প্রযুক্তির- দ্বারা বানিয়েছেন অবকাশযাপন কেন্দ্র পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাস ও বিবর্তন তাদের হাতের মুঠোয় মানুষের সৃষ্ট রোবট এখন মানুষের মতই সব কাজ করতে পারে। কিন্তু মানুষ সবদিক থেকে এগিয়ে গেলেও- সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে মানুষের সংখ্যা ইতোমধ্যেই-কয়েক হাজার বিলিয়ন ছাড়িয়ে গেছে। খোলা মাঠ, প্রান্তর বা বিশাল বনভূমি এখন হারিয়ে যাওয়া কোনও দূরের
অতীত মানুষের বসবাসের জায়গা করে দিতে আর কোনও জায়গায় এখন তিল ধারণের জায়গা নেই। মানুষের যেটা সবচেয়ে প্রয়োজন, উৎপাদনের জন্য কোনও ফসলি জমি আর অবশিষ্ট নেই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে এক ধরনের কৃত্রিম তরল সুপ বিজ্ঞানীরা তৈরি করেছেন; যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষদের খাদ্যের চাহিদা অনেকাংশে পূরণ হয়েছে। কিন্তু যারা উচ্চবিত্ত তাদের কি আর এই সামান্য খাদ্যে পেট ও মন ভরে! তাই তারা প্রচুর টাকা খরচ করে কোরবানির পশু কেনে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট এসব তৃণভোজী প্রাণী মানুষদের ব্যাপক চাহিদার ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে দুই হাজার বছর আগেই এমনকী মাংসাশী প্রাণীও
আর অবশিষ্ট নেই তাই উচ্চবিত্ত মানুষরা এক হাজার বছর আগে থেকেই মাংসের চাহিদা পূরণ করছে নিম্নবিত্র, নিঃস্ব, গরিব মানুষদের দিয়ে। শতাব্দীর এই লগ্নে এসে সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষরা পরিণত হয়েছে নরমাংসভোজীতে। প্রথম দিকে সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে বিরোধিতা করলেও উচ্চবিস্তদের টাকা ও ক্ষমতার কাছে তারা টিকতে পারেনি গরিব মানুষগুলো টাকার জন্য নিজেকে নির্দিধায় উৎসর্গ করছে বলে বিভিন্ন দেশের সরকারও আর এতে আপত্তি করেনি।
এ ছাড়াও সরকারগুলো কোরবানির মাংসের বড় একটা ভাগও পায়। দরিদ্র মানুষগুলো ঋণের বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবার জন্য, অথবা মৃত্যুর শেষবেলায় পরিবারকে একটু সচ্ছল দেখবার আশায় নির্দ্বিধায় ধারাল ছুরির নীচে গলা পেতে দেয়, ধনী মানুষদের মাংসের চাহিদা পূরণ করবার জন্য

তিন

প্লেটে মাংসের শেষ টুকরোটাও তৃপ্তির সাথে চিবোন রমিজ। আহ, শান্তি বেশ জোরের সাথেই বলেন তিনি। কিন্তু মনের মধ্যে খুঁতখুঁতানিটা গেল না। গলায় ছুরি চালানোর সময় দরিদ্র মানুষটা ডাগর-ডাগর দুটি চোখ
মেলে চার পাশে তাকাচ্ছিল। হয়তো মৃত্যুর আগে শেষবারের মত এই অপূর্ব সুন্দর পৃথিবীটার সৌন্দর্য দুচোখ ভরে দেখে নিতে চেয়েছিল। হয়তো নাক দিয়ে শিশির ভেজা কচি ঘাসের খাতাল করা মিষ্টি সুগন্ধ শেষবারের মত টেনে নিতে চেয়েছিল শালার কোরবানির পশুগুলোর ঢং দেখে আর বাচি না,
গজরাতে গজরাতে বলেন রমিজ! 
MARUF
---------------------------------------End--------------------------------------

আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) নবী (সাঃ)বলেনঃ (শেষ যামানায়) জ্ঞান উঠিয়ে নেয়া হবে, অজ্ঞতা ও ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে এবং হার্জ বেড়ে যাবে। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! হার্জ কী? তিনি হাত দ্বারা ইঙ্গিত করে বললেনঃ এ রকম। যেন তিনি এর দ্বারা হত্যা বুঝিয়েছিলেন। (সহীহ বুখারী)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন