বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

সায়েন্স ফিকশন - দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট পজেশন - আইজ্যাক আজিমভ - বাংলা অনুবাদ – Science Fiction – The Magnificent Possession - Isaac Asimov – Bengali Translation

 সায়েন্স ফিকশন - দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট পজেশন,আইজ্যাক আজিমভ,বাংলা অনুবাদ,Science Fiction,The Magnificent Possession,  Isaac Asimov,Bengali Translation

সায়েন্স ফিকশন - দ্যা ম্যাগনিফিসেন্ট পজেশন - আইজ্যাক আজিমভ - বাংলা অনুবাদ Science Fiction – The Magnificent Possession -  Isaac Asimov Bengali Translation


গম্ভীর মুখে নিজের ছোট্ট, অপরিসর ল্যাবরেটরিতে বসে আছেন প্রফেসর ওয়াল্টার সিলস। বেশিরভাগ সময় মুখ গোমড়া করেই থাকেন তিনি। কারণ জীবন তার কাছে নিরানন্দ এবং কঠিন। খুব কষ্টে সৃষ্টে দিন চলছে ওয়াল্টার সিলসের। মাঝে মাঝে আকরিক বিশ্লেষণ করে আর কয় পয়সাই বা মেলে? অথচ অনন্যরা, যারা বাইরের ইন্ডাস্ট্রিগুলোতে কাজ করছে, তারা সিলসের কয়েকগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করে।
জানালা দিয়ে হাডসন নদীর দিকে তাকালেন ওয়াল্টার সিলস। পড়ন্ত সূর্যের আবিরে লাল টকটকে নদীর জল। সিলস ভাবছেন তার এবারের গবেষণা ফলপ্রসূ হবে কিনা। যদি হয় রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাবেন তিনি। আর না হলে? থাক, সে কথা না বলাই ভাল। ভেজানো দরজাটা ক্যাঁঅ্যাঅ্যাচ শব্দে খুলে গেল। উঁকি দিল প্রফেসরের সদা হাস্যময় সহকারী ইউজেনি টেলর। ওকে ভেতরে আসতে ইঙ্গিত করলেন সিলস। ল্যাবরেটরিতে ঢুকল ইউজেনি।
-হ্যাল্লো, প্রফেসর, হাসি হাসি মুখে বলল সে। চলছে কেমন?
এদিক-ওদিক মাথা নাড়লেন প্রফেসর।
-তোমার মত জীবনটাকে সহজভাবে দেখতে পারলেই ভাল হত, জেনি। তোমার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি কিছুই ভাল চলছে না। আমার টাকার দরকার। আর যত টাকা আমি চাই ততই কম পাই।
-আমার পকেটও ফাঁকা, বলল ইউজেনি। তাতে কি? পকেটে পয়সা নেই বলে কি আমি মুখ গোমড়া করে থাকি? আপনার পঞ্চাশ চলছে। বিয়েও করেননি। মাথায় দ্রুত টাক পড়ে যাবার দুশ্চিন্তা ছাড়া আর কোন বিষয় নিয়ে আপনার ভাববার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না আমার। আমি ত্রিশে পা দিয়েছি। খামোকা দুশ্চিন্তা করে এই বয়সেই আমার সুন্দর, বাদামী চুলগুলো হারাতে চাই না। সে যাক। নতুন আইডিয়ার কি খবর বলুন তো?
-দেখবে? বেশ চলো
সিলসের পেছন পেছন একটা ছোট টেবিলের ধারে চলে এল টেলর। টেবিলের ওপর সারি সারি টেস্ট টিউব। এর একটার মধ্যে আধ ইঞ্চির মত চকচকে ধাতব কি একটা পদার্থ রাখা।
-এটাকে সোডিয়াম-মার্কারী মিকশ্চার বা সোডিয়াম অ্যামালগামও বলতে পারো, জিনিসটার দিকে আঙুল তুলে দেখালেন সিলস। অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড সল্যুশন' লেখা একটা বোতল তুলে নিলেন তিনি শেলফ থেকে। খানিকটা ঢাললেন টিউবে। সাথে সাথে সোডিয়াম অ্যামালগামের চেহারা বদলাতে শুরু করল, রূপান্তর ঘটল স্পঞ্জের মত একটা জিনিসে।
-ওটা, অ্যামোনিয়াম অ্যামালগাম ওদিকে চোখ রেখে বললেন প্রফেসর,  আমোনিয়াম র‍্যাডিকাল (NH4) এখানে ধাতব হিসেবে কাজ করছে, মিশছে পারদের সঙ্গে। মিশ্রণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন তিনি। তারপর ঢাললেন লিকুইড
-অ্যামোনিয়াম অ্যামালগাম খুব বেশি টেকসই নয়, জানালেন টেলরকে। কাজেই দ্রুত কাজ করতে হবে। ফেকাসে হলুদ রঙের, সুগন্ধযুক্ত একটা লিকুইডের ফ্লাস্ক হাতে নিলেন প্রফেসর, তারপর ওটা ঢাললেন টিউবে। কিছুক্ষণ টিউবটা ঝাকানোর পরে অ্যামোনিয়াম অ্যামালগাম অদৃশ্য হয়ে গেল, তলায় পড়ে রইল ছোট্ট, ধাতব এক টুকরো লিকুইড।
হাঁ করে টেস্ট-টিউবের দিকে তাকিয়ে রইল টেলর
-কি হলো?
-এই লিকুইড হলো হাইড্রাজিন থেকে প্রাপ্ত বস্তু। এ জিনিসটিই আমার আবিষ্কার। এর নাম দিয়েছি অ্যামোনালিন। এটার ফর্মুলা নিয়ে এখনও কাজ করিনি তবে তাতে কিছু আসে যায় না। আসল কথা হলো এটা অ্যামালগাম থেকে অ্যামোনিয়াম গলিয়ে ফেলার ক্ষমতা রাখে। টিউবের তলার ওই ড্রপগুলো খাঁটি পারদ। অ্যামোনিয়াম এখন দ্রবীভূত।।
টেলর চুপ করে রইল। সিলস উৎসাহের সঙ্গে বলে যাচ্ছেন, এর মানে বুঝতে পারছ না? খাটি অ্যামোনিয়াম বিচ্ছিন্ন করে ফেলার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গেছি আমি। আমার আগে, এ কাজ আর কেউ করেনি। কাজটার সফল সমাপ্তি মানে খ্যাতি, সাফল্য, নোবেল প্রাইজ আরও কত কি!
ওয়াও!' এতক্ষণে বুলি ফুটল টেলরের মুখে, দেখি তো জিনিসটা। টিউবের দিকে হাত বাড়াল সে। তাকে বাধা দিলেন সিলস।
কাজ এখনও শেষ হয়নি, জেনি। এটার ফ্রি মেটালিক পর্যায়ে আমাকে যেতে হবে। যখনই অ্যামোনালিনকে অদৃশ্য করে ফেলতে যাই, ভেঙে পড়ে অ্যামোনিয়াম...তবে এ সমস্যার সমাধান আমি করবই!
হপ্তা দুয়েক পরের ঘটনা। ঘটনাস্থল ওয়াল্টার সিলসের গবেষণাগার। রসায়নবিদ বন্ধু এবং গুরুর কাছ থেকে জরুরী ফোন পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসেছে টেলর। ল্যাবরেটরিতে ঢুকেই জানতে চাইল, সমস্যার সমাধান হয়েছে?
হয়েছে। যা ভেবেছি তারচে অনেক বেশি পেয়ে গেছি, বললেন প্রফেসর আসলে আমার শুরুটাই ছিল ভুল পদ্ধতিতে। দ্রাবকটাকে গরম করে নিতাম আমি। ফলে দ্রবীভূত অ্যামোনিয়াম সব সময় ভেঙে যেত। এবার ফ্রিজিং পদ্ধতিতে ওটাকে আলাদা করে নিয়েছি। লবণ জারণ করার মত ঘটনাটা ঘটেছে। ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে ওটা বরফে পরিণত হয়েছে। ১৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেই ফ্রিজ হয়েছে অ্যামোনালিন
ছোট একটি বীকারের (রাসায়নিক কাজে ব্যবহৃত কাঁচের পাত্র) দিকে আঙুল তুলে দেখালেন তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে। একটা কাঁচের কেসের মধ্যে বীকারটা। বীকারের মধ্যে ম্লান, হলদে রঙের, ছুঁচের মত ক্রিস্টাল। ক্রিস্টালের ডগায় হলুদ রঙের পাতলা একটা আস্তরণ।
-কেস কেন? জিজ্ঞেস করল টেলর।
-অ্যামোনিয়াম ঠিক রাখতে আর্গন (বায়ুমণ্ডলীয় গ্যাস) ভরতে হয়েছে আমাকে। গ্যাসটা খুবই কাজের। প্রশংসার দৃষ্টিতে প্রফেসরের দিকে তাকাল টেলর, খুশি মনে পিঠ চাপড়ে দিল।
-দাঁড়াও, জেনি। আরও আছে। টেলরকে ঘরের আরেক প্রান্তে নিয়ে গেলেন সিলস। কাঁপা আঙুল তুলে আরেকটি এয়ার টাইট কেস দেখালেন। ওতে এক খণ্ড হলুদ রঙের ধাতু তীব্র আলোকছটা নিয়ে ঝলসাচ্ছে। বন্ধু, ওটা হলো অ্যামোনিয়াম অক্সাইড (NH402) ওটা সম্পূর্ণ নিষ্ক্রীয় ওটা দিয়ে সহজে অ্যালুমিনিয়াম তৈরি করা যায়। তবে জিনিসটাকে সোনার মত দেখাচ্ছে, তাই না? এটার সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছ তুমি?
-আমি দেখতে পাচ্ছি? লাফিয়ে উঠল টেলর। আরে এ জিনিসে সারা দেশ ভরে যাচ্ছে তা দেখতে পাচ্ছি আমি। আপনি এ দিয়ে অ্যামোনিয়াম গহনা, অ্যামোনিয়াম প্লেটের টেবল-অয়্যার সহ আরও কত শত জিনিস যে বানাতে পারবেন। তাছাড়া এ দিয়ে শিল্প কারখানায় আরও কত কাজে যে লাগবে তা কে জানে? আপনি বড় লোক হয়ে গেছেন, ওয়াল্ট, বড় লোক!
-আমরা বড়লোক হয়ে গেছি, তাকে শুধরে দিলেন প্রফেসর। পা বাড়ালেন টেলিফোনের দিকে। সংবাদপত্রগুলোকে আমার যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্পর্কে জানানো দরকার।
-কিন্তু ব্যাপারটা আরও ক'টা দিন গোপন রাখলে ভাল হত, প্রফেসর, কপালে ভাঁজ পড়েছে টেলরের।
-আরে, আমি ওদেরকে স্রেফ সাধারণ একটা আইডিয়ার কথা জানাব। তাছাড়া আমাদের কোন সমস্যা হবে না। কারণ প্যাটেন্ট অ্যাপ্লিকেশনটা এ মুহূর্তে ওয়াশিংটনে।
প্রফেসর সিলস ভেবেছিলেন কোন ঝামেলা হবে না। কিন্তু বড় ধরনের ঝামেলা হয়ে গেল। পরবর্তী দুটো দিন ওদের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।
একমি ক্রোমিয়াম অ্যান্ড সিলভার প্লেটিং কর্পোরেশনের অত্যন্ত বদমেজাজী মালিক শিল্পপতি জে. থ্রগমর্টন ব্যাঙ্কহেড সকালে নাস্তার টেবিলে বসে রুটিতে মাখন লাগাচ্ছিলেন আর খবরের কাগজে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আরেক শিল্পপতির খবর পড়ে তার চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করছিলেন। রেগে গেলে তার মুখ লাল হয়ে ওঠে, বেড়ে যায় প্রেশার। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী শিল্পপতির চোদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতে গিয়ে নয়, তাঁর প্রেশার মাথায় উঠে গেল আরেকটি খবর পড়ে। খবরটির শিরোনাম এরকম: পণ্ডিত রসায়নবিদের সোনার বিকল্প আবিষ্কার, ব্রেড গিলে মাত্র ধূমায়িত কফির কাপ হাতে নিয়েছেন গ্রুগমর্টন, খবরটা দেখে কাপটা তাঁর হাতেই রয়ে গেল, মুখে তোলা হলো না। দ্রুত পড়ে ফেললেন খবরটি: এই নতুন পদার্থটি,' লেখা হয়েছে, সম্পর্কে এর আবিষ্কর্তা বলছেন এটি ক্রোমিয়াম, নিকেল বা সিলভারের চেয়েও উন্নত এবং এই বস্তু দিয়ে তৈরি গহনার মূল্যও পড়বে অনেক কম।
এ পর্যন্ত পড়েই থেমে গেলেন জে. থ্রগমর্টন। কল্পনায় দেখতে পেলেন নতুন ধাতুর কাছে মার খেয়েছে তাঁর ক্রোমিয়াম এবং সিলভার, ধ্বংস হয়ে গেছে তার বিশাল সাম্রাজ্য। সাথে সাথে প্রেশার উঠে গেল গ্রুগমর্টনের। হাত কাঁপতে শুরু করল। কাঁপা হাতে ধরা কফির কাপ থেকে গরম কফি ছলকে পড়ল ঊরুতে।
আউ!' করে উঠলেন প্রগমর্টন। একই সাথে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন কফির কাপ। দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ঝনঝন শব্দে ভাঙল ওটা।
তার স্ত্রী ভয়ানক আঁতকে উঠল।
-কি হয়েছে, জোসেফ? কি হয়েছে? বলতে বলতে এগিয়ে এল সে।
-কিছু হয়নি, খেঁকিয়ে উঠল খ্রগমর্টন। এখান থেকে যাও তুমি।
বলে নিজেই উঠে দাঁড়ালেন, ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন ঘর ছেড়ে। আর তার স্ত্রী ভাঙা কফির কাপের দিকে নজর না দিয়ে পত্রিকায় চোখ বুলাতে লাগল হন্যে হয়ে খুঁজছে সেই খবর যা তার বদরাগী স্বামীকে ভয়ানক রাগিয়ে দিয়েছে।
ফিফটিনথ স্ট্রীট-ববস ট্যাভার্ন'-এ প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান পিটার কিউ হর্নসওগল বরাবরের মত উজির-নাজির মারছিল।
কংগ্রেসে থাকাকালীন সে কি কি মহা কাণ্ড ঘটিয়েছে তারই বানানো গপপো কয়েকজন আগ্রহ নিয়ে শুনছে তার গল্প বার টেন্ডারের হাতে খবরের কাগজ। তবে পড়ছে না সে। হাঁ করে গল্প শুনছে। গল্প বলতে বলতে হঠাৎ কাগজের বিশেষ একটা খবরের দিকে নজর আটকে গেল হর্নসওগলের। এ খবরটাই উত্তেজিত করে তুলেছিল শিল্পপতি জে থ্রগমর্টনকে। পিটারও খবরটা পড়ে উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে তার শ্রোতাদের দিকে ফিরে বলল, বন্ধুগণ, সিটি হল-এ খুব জরুরী একটা কাজ আছে আমার। এক্ষুণি যেতে হবে সেখানে। সে বার-কীপারের দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করল, তোমার কাছে পঁচিশ সেন্ট হবে, ভায়া? আমার মানি ব্যাগটা আবার মেয়রের অফিসে ফেলে এসেছি ভুলে। কাল টাকাটা দিয়ে দেব।
শত হলেও প্রাক্তন কংগ্রেসম্যান! মানি ব্যাগ ভুল করে কোথাও ফেলে আসতেই পারে। বারম্যান পঁচিশ সেন্ট দিল পিটারকে। টাকাটা চট করে পকেটে পুরে বার থেকে বেরিয়ে এল পিটার কিউ হর্ণসওগল
ফাস্ট অ্যাভিনিউর ঘিঞ্জি কোন এক এলাকার ছোট, স্বল্পালোকিত একটি ঘর। মাইকেল ম্যাগুয়ের, পুলিশের খাতায় যার নাম লেখা আছে মাইক দ্য স্লাগ, সে তার রিভলভার পরিষ্কার করতে করতে একটি গানের সুর ভঁজছিল। হঠাৎ দরজায় শব্দ হতে মুখ তুলে তাকাল মাইকেল।
-স্ল্যাপি?
-হু, বস্। ভেতরে ঢুকল বেঁটেখাটো, হাড়গিলে চেহারার রোগাপাতলা এক লোক। আপনার জন্যে খবরের কাগজ এনেছি। পুলিশ এখনো ভাবতেছে সেইদিনকার কাজটা ব্রাগোনিই ঘটিয়েছে।
-তাই নাকি? বেশ বেশ। নিজের রিভলভারের ওপর আবার ঝুঁকে পড়ল মাইকেল। আর কিছু?
-না। এক মহিলা আত্মহত্যা করছে। এই নেন। পড়েন। মাইককে খবরের কাগজটা দিয়ে চলে গেল স্ল্যাপি। মাইক কাগজের পাতা ওল্টাতে লাগল
একটি খবরের হেডলাইনে তার দৃষ্টি আটকে গেল ছোট্ট খবর। আগ্রহ নিয়ে পড়ল মাইক। পড়া শেষ করে ছুঁড়ে ফেলে দিল কাগজ। সিগারেট ধরাল। কিছুক্ষণ গভীর চিন্তা করল। তারপর দরজা খুলে ডাকল, অ্যাই, স্ন্যাপি। শুনে যাও। তোমার জন্যে একটা কাজ আছে।
-      - - - - - - - - - - - - - - - - -
বেশ খুশি খুশি লাগছে প্রফেসর ওয়াল্টার সিলসকে। ল্যাবরেটরিতে দৃপ্ত পায়ে পায়চারী করছেন। নিজেকে রাজা মনে হচ্ছে। ইউজেনি টেলর বসে আছে। দেখছে ওকে। তাকে তেমন উফুল্ল মনে হচ্ছে না।
-বিখ্যাত হতে কেমন লাগছে? জিজ্ঞেস করল টেলর সিলসকে।
-মিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পারলে যেমন লাগবে তেমন লাগছে। মিলিয়ন ডলারেই অ্যামোনিয়াম মেটাল-এর রহস্য বিক্রি করে দেব স্থির করেছি। ঈগল স্টিল-এর স্ট্যাপলস-এর সঙ্গে কথা হবে আজ। ভাল দাম দেবে বলেছে। বেজে উঠল ডোর বেল। বেলের শব্দে লাফিয়ে উঠল সিলস, দৌড়ে গিয়ে খুলল দরজা।
-এটা কি ওয়াল্টার সিলস-এর বাড়ি? ঘোৎ ঘোৎ করে জানতে চাইলেন লম্বা, চওড়া এক লোক। অবজ্ঞার দৃষ্টি চোখে।
-জ্বী। আমিই সিলস। আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন?
-হ্যা। আমার নাম জে. থ্রগমর্টন ব্যাঙ্কহেড। আমি একমি ক্রোমিয়াম অ্যান্ড সিলভার প্লেটিং কর্পোরেশনের মালিক। আপনার সাথে কথা আছে।
-ভেতরে আসুন! ভেতরে আসুন! ইনি ইউজেনি টেলর, আমার সহকারী। ওঁর সামনেই যা বলার স্বচ্ছন্দে বলতে পারেন।
-বেশ, বিশাল শরীর নিয়ে ধপ করে একটা চেয়ারে বসলেন প্রগমন। আমার আগমনের কারণ বোধহয় অনুমান করতে পারছেন।
-আমার নতুন অ্যামোনিয়াম মেটালের খবরটা শুনেছেন, তাই ?
-হ্যা। আমি দেখতে এসেছি ব্যাপারটা সত্যি কিনা। সত্যি হলে আপনার আবিষ্কার আমি কিনে নিতে চাই।
-সত্যি না মিথ্যা নিজেই যাচাই করে দেখুন, স্যার
সিলস বিজনেস ম্যাগনেটকে নিয়ে আর্গন ভর্তি কন্টেনারের সামনে নিয়ে গেলেন। ওতে খাটি অ্যামোনিয়াম এর কয়েক গ্রাম পড়ে আছে।
-ওই যে জিনিসটা। ডান দিকে তাকান। এমন অক্সাইড যা নিজের বৈশিষ্ট্যকে ছাড়িয়ে গিয়ে অনেক বেশি ধাতব হয়ে উঠেছে। এটাকেই কাগজঅলারা নাম দিয়েছে বিকল্প সোনা।
বিতৃষ্ণা নিয়ে সেটা দেখলেন থ্রগমর্টন ব্যাঙ্কহেড। বললেন, ওটা বাইরে আনুন। ভাল করে দেখি।
ডানে-বামে মাথা নাড়লেন সিলস। তা সম্ভব নয়, মি. ব্যাঙ্কহেড, ওগুলো প্রথম অ্যামোনিয়ামের স্যাম্পল। ওগুলো মিউজিয়াম পিস। সংরক্ষণের জন্যে। চাইলে আপনার জন্যে কিছু বানিয়ে দিতে পারি।
-এ থেকে টাকা পেতে চাইলে কাজটা তো করতেই হবে, ঘোৎ ঘোৎ করে উঠলেন ব্যাঙ্কহেড। আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে আপনার পেটেন্ট আমি এক হাজার ডলারে কিনে নিতে রাজি।
-এক হাজার ডলার? এক সঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল সিলস এবং টেলর।
-যথেষ্ট ভাল দাম বলা হয়েছে, ভদ্রমহোদয়গণ।
-ওর দাম মিলিয়ন ডলারেরও বেশি, রাগে গরগর করে উঠল টেলর। এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। একটা সোনার খনি।
-এক মিলিয়ন! আপনারা আসলে স্বপ্ন দেখছেন, ভদ্রমহোদয়গণ। সত্যি বলতে কি আমার কোম্পানি অ্যামোনিয়ামের ওপর কয়েক বছর ধরে গবেষণা করে আসছে। সমস্যাটার সমাধান প্রায় করে এনেছি আমরা। তার আগেই, দুর্ভাগ্যবশত এ জিনিস আপনারা আবিষ্কার করে বসলেন। এ কারণেই আপনাদের প্যাটেন্ট আমি কিনে নিতে চাই। আপনারা বিক্রি করতে না চাইলে আমরা আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ধাতুটা বাজারজাত করব।
-করেই দেখুন। স্রেফ মামলা ঠুকে দেব, হুমকি দিল টেলর।
-দীর্ঘদিন মামলা চালানোর মত ক্ষমতা পকেটের আছে তো? খ্যাকখ্যাক হাসলেন ব্যাঙ্কহেড। আমার আছে। তবে আমি একেবারে অবিবেচক নই। দামটা আরও এক হাজার বাড়িয়ে দিতে পারি।
-আমাদের দামের কথা তো শুনেছেনই, পাথর গলায় বলল টেলর, এর বেশি কিছু আমাদের বলার নেই।
-ঠিক আছে, ভদ্রমহোদয়গণ, দরজার দিকে পা বাড়ালেন ব্যাকহেড।
-বিষয়টি নিয়ে আবার ভেবে দেখতে বলছি। আপনারা আমার কথাই শেষে মেনে নেবেন এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।
দরজা খুললেন ব্যাঙ্কহেড। মুখোমুখি হয়ে গেলেন প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য পিটার কিউ হর্নসওগলের। সে দরজার কী হোলে চোখ রেখে দাঁড়িয়ে ছিল। ফট করে দরজা খুলে যেতে ভয়ানক অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। ব্যাঙ্কহেড তার দিকে তাকিয়ে নাক সিটকালেন, তারপর গটগট করে চলে গেলেন। সাথে সাথে ভেতরে ঢুকে পড়ল হর্নসওগল। বন্ধ করে দিল দরজা। তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল সিলস এবং টেলর। ব্যাঙ্কহেডের গমন পথের দিকে আঙুল তুলে দেখাল হনসওগল।
-ওই লোকটা, ডিয়ার স্যার, প্রচণ্ড ধনী একজন মানুষ। তবে এ দেশের অর্থনীতিরও বারোটা বাজাচ্ছে লোকটা। ওই লোকের প্রস্তাব অগ্রাহ্য করে বুদ্ধিমানের কাজ করেছেন আপনারা।
বুকে হাত বেঁধে মিষ্টি করে হাসল সে-ওদের দিকে তাকিয়ে।
-আপনি কে? বিস্ময়ের ধাক্কা সামলে নিয়ে জিজ্ঞেস করল টেলর।
-আমি? ওদের চেয়েও বেশি অবাক হয়েছে হর্নসওগল কেন আমি-ইয়ে-পিটার কুইনটাস হর্নসওগল, আমাকে চিনতে পারলেন না! আমি গত বছরও হাউজ অভ রিপ্রেজেনটেটিভস-এ ছিলাম।
-আপনার নাম কখনও শুনিনি। কি চান?
-খবরের কাগজে আপনাদের আশ্চর্য আবিষ্কারের কথা শুনে ছুটে এসেছি সাহায্যের জন্যে।
-কিসের সাহায্য?
-আপনাদেরকে সাহায্য করতে চাই, স্যার। আপনারা তো আর বাইরের জগৎটাকে ভাল চেনেন না।
নতুন আবিষ্কার আপনাদের অনেক বিপদ ডেকে আনতে পারে! ব্যাঙ্কহেডের মত বহু ধুরন্ধর মানুষ ওঁৎ পেতে আছে আপনাদের আবিষ্কার হাতিয়ে নেয়ার জন্যে। আমি এসব মানুষ ভাল চিনি। এদের নিয়ে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতাও প্রচুর। কাজেই আমি আপনাদেরকে সাহায্য করতে পারব।
যেমন কোন প্রয়োজন নেই, এমন একটা ভাব নিয়ে এতক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলেন প্রফেসর, উঠে দাঁড়ালেন।
-বেরিয়ে যান। আমার কথা কানে যাচ্ছে? পুলিশ ডাকার আগেই এখান থেকে কেটে পড়ন।
-প্রফেসর সিলস, দয়া করে উত্তেজিত হবেন না, সিলসের রাগী চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গেছে প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্য। দরজার দিকে পা বাড়াল। টেলর খুলে দিল দরজা। হর্নসওগল চৌকাঠের বাইরে পা রাখা মাত্র দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিল সে। একটা চেয়ারে বসে পড়লেন সিলস।
-এখন কি করব, জেনি? লোকটা মাত্র দুহাজার ডলার সাধল! অথচ এক হপ্তা আগেও আমি কত স্বপ্ন দেখেছি...
-ভুলে যান। ব্যাটা ব্লাফ দিয়েছে। আমি স্ট্যাপলসকে খবর দিচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশিত দামেই পেটেন্টটা বিক্রি করে দিতে পারব বলে আশা করি। আর ব্যাঙ্কহেড যদি কোন ঝামেলা করে তো-যাক, সেটা স্ট্যাপলসের মাথা ব্যথা।
সিলসের কাঁধ চাপড়ে দিল সে। আমাদের ঝামেলা কিন্তু মিটে গেছে।
ভুল। টেলর জানে না তাদের ঝামেলা মাত্র শুরু হয়েছে।
-      - - - - - - - - - - - - - - - - - - - - -
ওয়াল্টার সিলস-এর বাড়ির রাস্তার ওপাশে রোগা-পাতলা, বেঁটে একটা লোক বাড়িটির দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ হলো মাইক দ্য স্লাগের সাগরেদ স্ল্যাপি। বাড়িতে ঢোকার রাস্তা খুঁজছে সে। কিভাবে ঢোকা যায় তার প্ল্যান করছে।
ও বাড়িতে ঢোকার চিন্তা করছে আরও দুজন-ব্যাঙ্কহেড এবং হর্নসওগল। সিলস-এর আবিষ্কারের ফর্মুলা চুরি করার বদ মতলব তাদেরও। তবে ব্যাঙ্কহেড ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে তার এক সোর্সের সাথে কথা বলেছেন। এখন শুধু ঘটনা ঘটার অপেক্ষা।
-নিচে কিসের যেন শব্দ হলো? জেনি! জেনি!
-আঁ, জেগে গেল ইউজেনি টেলর। ধড়মড় করে উঠে বসল বিছানায়। জড়ানো গলায় বলল, কি হয়েছে? কেন রাত দুপুরে ডাকাডাকি......
-চুপ করো কান পেতে শোনো কিছু শুনতে পাচ্ছ?
-কি শুনব? খামোকা কেন যে বিরক্ত করেন।
সিলস ঠোটে আঙুল চাপা দিলেন। চুপ হয়ে গেল অপরজন। নিচে, ল্যাবরেটরি থেকে খচমচ শব্দ আসছে টেলরের চোখ বড় বড় হয়ে গেল, ঘুম মুহুর্তে উধাও।
-চোর! ফিসফিস করে বলল সে।
চুপিসারে বিছানা থেকে নেমে পড়ল দুজনে, গায়ে বাথরোব পেঁচিয়ে, পায়ে স্লিপার গলিয়ে পা টিপেটিপে এগোল দরজার দিকে। টেলরের ডেস্কে একটি রিভলভার ছিল। ওটা বের করে আগে আগে চলল সে। নামতে শুরু করল সিড়ি বেয়ে।।
মাত্র অর্ধেক সিড়ি বেয়েছে, হঠাৎ কে যেন বিকট আর্তনাদ করে উঠল নিচে। পরক্ষণে ধুপধাপ, দুড়ম দাড়ুম শব্দ। কয়েক সেকেন্ড এরকম চলল। তারপর কাঁচ ভাঙার শব্দ শোনা গেল।  
-আমার অ্যামোনিয়াম! আঁতকে উঠলেন সিলস। টেলর বাধা দেয়ার আগেই তীর বেগে ছুটলেন তিনি। ঝড়ের বেগে ল্যাবে ঢুকে পড়লেন প্রফেসর। পেছন পেছন তার সহকারী। আলো জ্বাললেন। হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে চোখ ঝলসে গেল ঘরের দুই অগম্ভকের। তারা মেঝেতে শুয়ে কুস্তি লড়ছিল। আলো জ্বলে উঠতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল পরস্পরের কাছ থেকে।
কাজটা মোটেই ভাল হচ্ছে না, টেলর তাদের দিকে বন্দুক তাক করে বলল
একজন সিধে হলো মেঝে থেকে। বীকার আর ফ্লাস্কের ভাঙা কাঁচের গুড়ো গড়িয়ে পড়ল গা থেকে। লোকটার কব্জি কেটে গেছে। হাত চেপে ধরে আছে। এ পিটার কিউ হনসওগল। রিভলভারের দিকে ভয়ে ভয়ে তাকাতে তাকাতে সে বলল, পরিবেশ খুবই রহস্যময় তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে পুরো ব্যাপারটার সহজ ব্যাখ্যা দিতে পারি আমি। আপনারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা সত্ত্বেও এখানে কেন এসেছি জানেন? আপনাদের প্রতি একটা মায়া পড়ে গেছে আমার। জানতাম আপনাদের ওপর কারও কারও বদ নজর আছে। তাই আজ রাতে এই বাড়ির ওপর তীক্ষ্ণ নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিই আমি। কারণ আপনারা আমার সাবধান বাণী কানে তোলননি। তবে এই কাপুরুষ ব্যাটাকে দেখে অবাক হয়ে যাই, নাক ভোতা, নোংরা চেহারার লোকটাকে আঙুল দিয়ে দেখাল সে। হতভম্ব হয়ে বসে আছে এখনও মেঝেতে। জানালা দিয়ে চোরের মত.ভেতরে ঢুকছিল ব্যাটা।
সাথে সাথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্রিমিনালটার পিছু নিতে শুরু করি আমি। উদ্দেশ্য আপনাদের মহা মূল্যবান আবিষ্কার রক্ষা করা। চোরটার বদ মতলব বুঝতে পেরে ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ি। কাজেই বুঝতেই পারছেন আপনাদের ব্যাপারে আমি কত আন্তরিক?
বিদ্রুপের হাসি ঠোটে ঝুলিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সদস্যের গল্প শুনছিল টেলর। বলল, আপনি দেখছি বেশ গুছিয়ে মিথ্যা বলতে পারেন, পি. কিউ।
মেঝেতে শুয়ে থাকা লোকটা এবার জোর গলায় বলে উঠল, ঠিকই বলেছেন, সার। ওই মোটকুটা শুধুশুধুই আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। আমার কোন দোষ নেই, সার। আমি খালি আরেক সারের হুকুম তামিল করতে ছিলাম। সেই সারে ভাড়া করছে আমারে। কারও ওপর হামলা করার নিয়ত আমার নাই, সার...এই মোটকুটা খালি খালি...
-চোপ, মিথ্যাবাদী! গর্জে উঠল হর্নসওগল। চোরের মার বড় গলা।
-আপনারা দুজনেই চুপ করুন! ভীতিকর ভঙ্গিতে হাতের অস্ত্রটা নাচাল টেলর। আমি পুলিশে খবর দিচ্ছি। তাদেরকে আপনাদের গল্প শোনান গে।
-ভাল কথা, প্রফেসর, সব ঠিক আছে তো?
-মনে হয়, গবেষণাগারের ওপর চোখ বোলানো শেষ সিলসের। খালি কাঁচের বার ভেঙেছে ওরা। এ ছাড়া সব ঠিক আছে।
-বেশ, বলল টেলর। তারপর কি যেন দেখে ঢোক গিলল ভয়ে ভয়ে।
হলওয়ে থেকে ভেতরে ঢুকেছে রিভলভার হাতে এক লোক। মাথার হ্যাট চোখের ওপর ফেলা। সে টেলরের দিকে অস্ত্রটা তাগ করে বেঁকিয়ে উঠল, ফেলে দাও ওটা!'
যন্ত্রচালিতের মত অস্ত্রটা হাত থেকে পড়ে গেল টেলরের।
আগন্তক ঘরের চার মূর্তির দিকে বিদ্রুপের দৃষ্টিতে তাকাল। বলল, বেশ, আরও দুজন আমার ওপর বাটপাড়ি করতে চেয়েছে, আঁ? আচ্ছা, এবার দেখাচ্ছি মজা।
সিলস এবং টেলর হাঁ করে তাকিয়ে আছে আগন্তুকের দিকে, হনসওগলের দাঁত কপাটি লেগে গেছে। চোরটা ভীত ভঙ্গিতে পিছু হঠতে হঠতে বলল, খাইছে। এইটা দেখছি মাইক দা স্লাগ।
-হ্যা, ধমকের সুরে বলল মাইক। আমিই মাইক দা স্লাগ অনেকেই আমাকে চেনে। এবং তারা জানে রিভলভারের ট্রিগার টেপার জন্যে আমার হাতের আঙুল সব সময় নিশপিশ করতে থাকে। এই যে টাকু প্রফেসর, এদিকে আসুন। কি সব নকল সোনা-টোনা বানিয়েছেন। আমি পাঁচ গোনার আগেই ওটা দিয়ে দিন।
ঘরের কোনার দিকে আস্তে আস্তে এগোলেন সিলস। মাইক তাকে যাবার রাস্তা করে দিতে পেছনে সরতেই ধাক্কা খেল একটা শেলফের সঙ্গে। সোডিয়াম সালফেট সল্যুশনের ছোট একটা কাঁচের বোতল নিচে পড়ে ভেঙে চুর চুর হয়ে গেল।
আঁতকে উঠলেন সিলস।
-মাই গড। সাবধান! ওটা নাইট্রোগ্লিসারিন।
কথাটা কানে যাওয়া মাত্র লাফ দিল মাইক। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাল টেলর। লাথি মেরে বসল মাইককে। একই সময়ে সিলস এগোলেন টেলরের অস্ত্র দিয়ে বাকি দুজনকে কভার করতে। তবে তার দরকার ছিল না। মাইক দ্য স্লাগকে দেখে ইতিমধ্যে দুজনেই খোলা জানালা দিয়ে কেটে পড়েছে।
ওদিকে টেলর এবং মাইক দ্য স্লাগ পরস্পরকে কুস্তির প্যাচে আটকে জড়াজড়ি করে চলেছে ল্যাবের মেঝেতে। আর পিস্তল হাতে লাফাচ্ছেন প্রফেসর। তাক করার চেষ্টা করছেন। সুযোগ পেলেই গ্যাংস্টারটার কপাল ফুটো করে দেবেন। কিন্তু সে সুযোগ এল না। মাইক হঠাৎ টেলরের থুতনিতে দড়াম করে এক ঘুসি মেরে মুক্ত করে নিল নিজেকে। তারপর দৌড় দিল। ভয়ঙ্কর চিৎকার করে সিলস তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লেন। কিন্তু লাগল না গুলি। অক্ষত শরীরে পালিয়ে গেল মাইক। সিলস গুণ্ডা সর্দারের পিছু নেয়া সমীচীন মনে করলেন না। নজর দিলেন ঘুসি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সহকারীর দিকে।
ঠাণ্ডা পানির ছিটা মেরে জ্ঞান ফিরিয়ে আনলেন টেলরের। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে উঠে বসল টেলর। চারপাশের ধ্বংসস্তূপের দিকে তাকিয়ে মন্তব্য করল, উহ, শালার রাত একটা!
গুঙিয়ে উঠলেন প্রফেসর।
-এখন কি করব, জেনি? এখন দেখছি আমাদের প্রাণ নিয়ে টানাটানি। স্বপ্নেও ভাবিনি চোরের হামলা হবে আমার বাড়িতে। আসলে খবরের কাগজে আবিষ্কার সম্পর্কে কথা বলাই উচিত হয়নি।
-যা হয়েছে হয়েছে। এখন এ নিয়ে কান্নাকাটি করে লাভ নেই। এখন আমাদের দরকার চমৎকার একটা ঘুম চোরগুলো আজ রাতে আর আসবে বলে মনে হয় না। কাল আপনি ব্যাঙ্কে গিয়ে কাগজ পত্রগুলো ব্যাঙ্কের ভল্টে রেখে আসবেন। স্ট্যাপলস বিকেল তিনটায় আসবে। তখন ওর সঙ্গে কথা বলব। তারপর এ নিয়ে আর ঘুম নষ্ট করতে হবে না।
চেহারা করুণ করে বললেন সিলস, অ্যামোনিয়াম বড় ঝামেলার বিষয়, এটা নিয়ে গবেষণা করাই উচিত হয়নি আমার। এরচে আকরিক নিয়ে থাকতাম তাই ভাল ছিল।
ব্যাঙ্কে এসেছেন ওয়াল্টার সিলস। রাস্তার পাশেই ব্যাঙ্ক। রিভলভিং ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকতে যাচ্ছেন, দুজন লোক ওঁর রাস্তা আটকে দাঁড়াল। একজন শক্ত কি একটা ঠেসে ধরল বুকে, পাঁজরে লাগল খুব। আঁক করে উঠলেন প্রফেসর। হিম শীতল একটা কণ্ঠ ফিসফিস করল কানের পাশে, আস্তে, জনাব টাকু। কাল রাতে আমার সঙ্গে যে বেয়াদবি করেছেন চিল্কার করলে তা এখন কড়ায় গণ্ডায় শোধ করে দেব।'
ভয়ে কেঁপে উঠলেন সিলস। স্থির হয়ে গেলেন। চিনতে পেরেছেন মাইক দ্য স্লাগের গলা।।
-ফর্মুলাটা কই? জিজ্ঞেস করল মাইক। জলদি বের করুন।
-জ্যাকেটের পকেটে, কাঁপা গলায় বললেন সিলস। মাইকের সঙ্গী হাত ঢুকিয়ে দিল সিলসের জ্যাকেটে। বের করে আনল এক তাড়া ফুল স্কেপ কাগজ।
-এইটা, মাইক? মাথা ঝাকাল গুণ্ডা সর্দার।
-হ্যা। যে জিনিসের খোঁজে এসেছি তা পেয়ে গেছি। ঠিক আছে, জনাব টাকু। আপনি এখন যেতে পারেন। সিলসকে ধাক্কা মেরে রাস্তায় ফেলে দিল দুই গুণ্ডা। তারপর ঝটপট তাদের গাড়িতে উঠে পড়ল। উধাও হয়ে গেল চোখের পলকে। ফুটপাথে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলেন সিলস। কয়েকটি সদয় হাত এগিয়ে এল তাঁকে উঠতে সাহায্য করতে।
-ঠিক আছে, হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন সিলস। আমি একাই। উঠতে পারব।
সিধে হলেন প্রফেসর। টলতে টলতে ব্যাঙ্কে ঢুকলেন। এবারের মত জানে বেঁচে গেছেন বলে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া জানালেন মনে মনে নিজেকে গালিও দিলেন। আরও সাবধান হওয়া উচিত ছিল তাঁর। কারণ টেলর আগেই সতর্ক করে দিয়েছিল তাঁকে।
যাক যা হবার হয়ে গেছে এরকম একটা ভঙ্গি করে কাঁধ ঝাকালেন সিলস। খুললেন মাথার টুপি। টাকের সাথে বাধা স্যুইট ব্যান্ডের নিচ থেকে কতগুলো কাগজ বের করলেন। পাঁচ মিনিট লাগল কাগজগুলো ভল্টে জমা দিতে। ইস্পাতের দরজাটা বন্ধ হতে নিশ্চিন্ত বোধ করলেন তিনি।
বাড়ি ফেরার পথে গুণ্ডাদের কথা ভাবছিলেন সিলস। ওরা ওই ফর্মুলা অনুসারে কাজ করতে গেলেই সেরেছে। ভয়াবহ এক বিস্ফোরণের শিকার হবে গুণ্ডাগুলো
বাড়ি এসে দেখলেন গেটের সামনে জনাতিনেক পুলিশ অলস ভঙ্গিতে পায়চারি করছে।
-পুলিশ প্রহরা, সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করল টেলর। গত রাতের মত আবার ঝামেলা পোহাতে চাই না।
সিলস রাস্তার ঘটনাটা জানালেন তার সহকারীকে। মুখ অন্ধকার করে গল্পটা শুনল টেলর। তারপর বলল, তবে ওরা আর কিছুই করতে পারবে না। স্ট্যাপলস ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে চলে আসছে। ততক্ষণ পুলিশ তো থাকছেই। তারপর, কাঁধ ঝাকাল সে, সমস্ত দায়দায়িত্ব স্ট্যাপলসের।
-শোনো, জেনি, বললেন রসায়নবিদ, অ্যামোনিয়াম নিয়ে আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেছি। এখনও ওটার গিলটি করার ক্ষমতা পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। আর এটাই সবচে জরুরী বিষয়। স্ট্যাপলস এল আর এদিকে দেখলাম জিনিসটা থেকে কিছুই পাইনি আমরা। তখন খুবই বিশ্রী হবে ব্যাপারটা।
-হুমম, থুতনি চুলকাতে চুলকাতে বলল টেলর। ঠিকই বলেছেন। তবে স্ট্যাপলস আসার আগে কিছু একটা গিলটি করে ফেলি আমরা। যেমন ধরুন চামচ বা এরকম কিছু একটা।
দুপুরের খাওয়া সেরে কাজে লেগে গেল ওরা। বেশ কিছু জিনিস জোগাড় করতে হয়েছে। একটি আয়তাকার টাবের মধ্যে অ্যামোনালিনের সল্যুশন ঢালা হয়েছে। ক্যাথোড (ঋণাতক বৈদ্যুতিক তার) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরানো একটা চামচ আর অ্যানোড (বিদ্যুৎ প্রবাহের ধন-তড়িৎ প্রান্ত) হচ্ছে অ্যামোনিয়াম অ্যামালগাম। তিনটি ব্যাটারি বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
উৎসাহের সাথে ব্যাখ্যা করছেন প্রফেসর, সাধারণ তামার গিলটির মত একই নিয়মে এটা কাজ করবে। অ্যামোনিয়াম আইওন বিদ্যুৎ প্রবাহ শুরু হলে ক্যাথডের প্রতি আকর্ষিত হবে, আর ক্যাথোড হলো চামচ। সাধারণ অবস্থায় হলে এটা ভেঙে যেত। কি অ্যামোনালিনে দ্রবীভূত হবার সময় এটার ক্ষেত্রে তা ঘটবে না। অ্যামোনালিন খুবই সামান্য আয়নাইজড করা হয়েছে আর অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে অ্যানোডকে। তবে এটা হলো থিওরী। প্রাকটিস কি বলে সেটাই এখন দেখার বিষয়।
চাবি বন্ধ করলেন সিলস। নিশ্বাস বন্ধ করে সেদিকে তাকিয়ে রইল টেলর। কিন্তু এক মুহূর্ত কিছুই ঘটল না। হতাশ দেখাল টেলরকে। এমন সময় তার কনুই খামচে ধরলেন সিলস। দ্যাখো! হিসিয়ে উঠলেন তিনি, অ্যানোডের দিকে তাকাও।
অ্যামোনিয়াম অ্যামালগাম থেকে বাবল গ্যাস বেরুতে শুরু করেছে। চামচটার দিকে তাকালেন ওঁরা। ওটার রং বদলাচ্ছে। রূপালি রংটা ধীরে ধীরে তার ঔজ্জ্বল্য হারাচ্ছে। আস্তে আস্তে হলুদ একটা আস্তরণ ফুটে উঠছে চামচের গায়ে। মিনিট পনেরো প্রবাহিত হলো বিদ্যুৎ, তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে সার্কিট খুলে ফেললেন সিলস।
-দারুণভাবে গিলটি হয়েছে, বললেন তিনি।
-বেশ! জিনিসটা বের করে আনুন। দেখি একবার।
-কি? অবাক হলেন সিলস। বের করে আনব? ওটা খাটি অ্যামোনিয়াম। বাইরে আনলে বাতাসের সংস্পর্শে জলীয় বাষ্প শুকিয়ে যাবে। তা করা যাবে না।
তিনি টেবিলে মোটাসোটা একটা যন্ত্র রাখলেন।
-এটা, বললেন সিলস। একটা কমপ্রেসড এয়ার কন্টেনার। এটা ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড ড্রায়ার্সের মধ্যে চালিয়ে দেব। তখন শুকনো অক্সিজেন বাবল-এ পরিণত হবে এবং দ্রবীভূত হয়ে পড়বে। তিনি কন্টেনারের নাক চামচের নিচে, সল্যুশনে ঢুকিয়ে দিলেন। চালু হয়ে গেল মেশিন। বইতে লাগল বাতাস। যাদুর মত কাজ হলো বিদ্যুৎগতিতে হলদে গিলটি আরও চকচকে এবং ঝলমলে হয়ে উঠল।
দুরুদুরু বুকে দৃশ্যটা দেখছেন ওঁরা, ঘন ঘন শ্বাস ফেলছেন। বাতাসের প্রবাহ বন্ধ করে দিলেন সিলস। আশ্চর্য চামচটার দিকে তাকিয়ে রইলেন দুজনে। মুখে রা নেই। ফিসফিস করল টেলর, ওটা বের করুন! বের করে আনুন! মাই গড!-অ্যাতো সুন্দর!
প্রফেসর হাত বাড়ালেন চামচের দিকে, ফরসেপ দিয়ে ধরলেন, বের করে আনলেন তরল পদার্থটা থেকে।
তারপর যা ঘটল তা কহতব্য নয়। পরে পত্রিকার সাথে সাক্ষাঙ্কারে টেলর বা প্রফেসর কেউই আসলে কি ঘটেছিল তার আসল ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। যা ঘটল তা হলো, চামচটাকে মুক্ত বাতাসে নিয়ে আসা মাত্র বিকট একটা গন্ধে দূষিত হয়ে উঠল ঘর। এমন বিশ্রী, পচা এবং বীভৎস সেই গন্ধ যার কাছে নরকের ভয়ঙ্করতম দুর্গন্ধও কিছু না।
গন্ধের ধাক্কায় শ্বাস বন্ধ হয়ে এল প্রফেসরের। আঁতকে উঠে চামচটা ফেলে দিলেন তিনি। দুজনেই বেদম কাশতে শুরু করলেন, চোখ দিয়ে দরদর ধারায় জল পড়তে লাগল। সেই সাথে একটানা চলছে হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো।
তীর বেগে চামচটার দিকে ছুটে গেল টেলর। ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ওদিকে প্রতি সেকেন্ডে দুঃস্বপ্নের মত গন্ধটা বেড়েই চলেছে। প্রফেসর এবং তার সাগরেদের লাফালাফির চোটে ইতিমধ্যে কয়েকটা কাঁচের টিউব মেঝেতে পড়ে ভেঙে একসা। এ মুহূর্তে করণীয় একটাই ছিল। সে কাজটাই করলেন সিলস। চামচটাকে ধরে ছুঁড়ে ফেলে দিলেন জানালা দিয়ে। টুয়েলভথ অ্যাভিন্যুর মাঝখানে, এক
পুলিশের গায়ে পড়ল চামচটা। গ্রাহ্য করলেন না প্রফেসর।
-জামা-কাপড় খুলে ফেলো, কাশতে কাশতে সহকারীকে বললেন তিনি। পুড়িয়ে ফেলো তারপর শক্তিশালী একটা কিছু স্প্রে করে দাও ল্যাবে। সালফার পোড়াও কিংবা লিকুইড ব্রোমাইড নিয়ে এসো যা খুশি করো জলদি!
ওরা পাগলের মত জামা কাপড় খুলছেন, এমন সময় টের পেলেন খোলা দরজা দিয়ে কেউ ঢুকে পড়েছে ভেতরে। এ স্ট্যাপলস। ইস্পাতের রাজা বলা হয় তাকে। দরজা খোলা পেয়ে বেশ ভারিক্কী ভাব নিয়ে ঘরে ঢুকল সে।
কিন্তু ঘরে পা দেয়া মাত্র গাম্ভীর্য এবং আভিজাত্যের কথা বেমালুম ভুলে গেল স্ট্যাপলস বোটকা গন্ধটার প্রচণ্ড ধাক্কা খেয়ে দিশাহারা বোধ করল সে। পরের মুহুর্তে পড়িমরি করে দৌড় দিল রাস্তায়। টুয়েলভথ অভিনর পথচারীরা অবাক হয়ে দেখল সুবেশী, ছয়ফুট লম্বা, দীর্ঘদেহী এক ভদ্রলোক কাঁদতে কাঁদতে ছুটছে রাস্তা দিয়ে। সেই সাথে পাগলের মত গায়ের কাপড় ছিড়ে ফেলছে।
ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত চামচটার ভয়ানক কার্যকলাপ তখনও শেষ হয়নি। যে পুলিশটার গায়ে আছড়ে পড়েছে চামচ সে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান। সাথে তার দুই সঙ্গীও। আর আশপাশের বাড়িঘরে বিকট গন্ধটা ছড়িয়ে পড়ার কারণে লোকজন পাগলের মত চেঁচামেচি 'করতে করতে বেরিয়ে আসতে লাগল ঘর ছেড়ে। দমকল বাহিনী টুয়েলভথ অ্যাভিতে ম্যাসাকার হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ছুটে এল। দেখা গেল গাড়ি ফেলে রেখে তারা চো চা দৌড়। এক স্কোয়াড্রন পুলিশ এসেছিল। বদ গন্ধে তারাও ছুটে পালাল যে যেদিকে পারে। সব মিলে যেন নরক ভেঙে পড়ল টুয়েলভথ অ্যাভিনিউতে।
সিলস এবং টেলর ওদিকে শুধু ট্রাউজার পরে দৌড়াতে দৌড়াতে হাডসন নদীতে চলে এসেছেন। এক লাফে পানিতে। গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে, মুখ হাঁ করে তাজা বাতাস নিতে লাগলেন দুজনে।
টেলর সিলসের কানে কানে বলল, ওরকম বীভৎস গন্ধ হবার কারণ কি? আপনি বলেছিলেন জিনিসটা টেকসই। টেকসই জিনিসের তো গন্ধ থাকার কথা নয়। ওই বাস্পের কারণে এমন হয়েছে, না?
-কস্তুরীর গন্ধ শুকেছ কখনও? গুঙিয়ে উঠলেন সিলস। একটি অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত, কোন ওজন না হারিয়ে ওটা গন্ধ ছড়িয়ে যায়। আমরা মনে হয় ওরকম কিছু একটার মুখোমুখি হয়েছি।
চুপচাপ পানিতে বসে রইলেন দুজন। ভয়ে আছেন অ্যামোনিয়াম ভেপারটা আবার বাতাসের ধাক্কায় না জানি চলে আসে এদিকে।
নিচু গলায় বলল টেলর, চামচ রহস্য যখন ওরা বের করে ফেলবে, জানবে কারা বানিয়েছে এ জিনিস তখন আমরা ধরা খেয়ে যাব। জেল ঠেকাতে পারবে না কেউ।
চোয়াল ঝুলে পড়ল সিলসের। ওই হারামজাদাটাকে কেন যে আবিষ্কার করতে গেলাম! ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই জুটল না ওটা থেকে। ফুপিয়ে কাঁদতে শুরু করলেন তিনি।
তার টাক মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে টেলর বলল, কাদবেন না, প্লীজ। আমার বিশ্বাস এ আবিষ্কার আপনাকে বিখ্যাত করে তুলবে। দেশের যে কোন ইন্ডাস্ট্রি আপনাকে লুফে নেবে। ভাল দামও পাবেন। তাছাড়া নোবেল প্রাইজও পেয়ে যেতে পারেন।
-তা পারি, হাসি ফুটল সিলসের মুখে, তবে ওই বিকট গন্ধটা দূর করার একটা উপায় বের করতে হবে। আশা করি পেয়ে যাব।
-আমারও তাই আশা, বলল টেলর, চলুন যাওয়া যাক। এতক্ষণে নিশ্চয়ই চামচটাকে সরিয়ে ফেলেছে ওরা।
মূলঃ আইজাক আসিমভ
রূপান্তর: অনীশ দাস অপু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন