স্যামুয়েল কোল্ট,invention of pistol, invention of revolver,পিস্তল আবিষ্কার, রিভলভার আবিষ্কার,বন্দুক আবিষ্কারের কাহিনী,রিভলভার উদ্ভাবন |
পূর্বের পর্বঃ পর্ব ২ লিঙ্ক
বিজ্ঞানী স্যামুয়েল কোল্ট এর রিভলভার উদ্ভাবনের দু:সাহসিক কাহিনী - story of the invention of revolver by Samuel Colt - part 3 of 3
ডলার রোজগারের এই অদ্ভুত পরিকল্পনার কথাটি বাড়ি গিয়ে সে বাবার কাছে খুলে বললো। একথা শুনেই স্যামের বাবা আঁতকে উঠলেন। তবে এটাও ঠিক, তাঁর ছেলের আবিষ্কারের খরচ চালাবার দৃঢ়তা ও একাগ্রতা দেখে তিনি মুগ্ধ হলেন। তাই মিঃ ক্রিস্টোফার বাধা দেবার কোনো চেষ্টাই করলেন না। বরং তিনি তার পুরানো বন্ধু হেনরী এলসওয়ার্থ ওয়াশিংটনের কমিশনার অব পেটেন্টস -এর নিকট একখানা পত্র লিখে দিলেন।
স্যাম আশায় উল্লসিত হয়ে রাজধানীর উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। পকেটে ডলার, পেটেন্ট কমিশনারের বরাবরে বাবার দেয়া পরিচয়পত্র আর তার রিভলবারের সর্বাধুনিক মডেলগুলি থাকতে রেজিষ্ট্রেশন-এর ফল কোনো কিছু খারাপ হতে পারে না এটা স্যামের বদ্ধমূল ধারণা।
মিঃ এলসওয়ার্থ স্যামকে স্বপ্ন জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরিয়ে আনলেন। তিনি রিভলবারগুলো পরীক্ষা করে স্বীকার করলেন যে, জিনিষগুলো খুবই চমৎকার হয়েছে। কিন্তু স্যামের এই আবিষ্কারগুলো পেটেন্ট করার মতো উচ্চমানে এখনো পৌঁছায়নি। মডেলগুলো এখনো সূক্ষ্মভাবে তৈরি হয়নি। তাছাড়া, এগুলোতে আরো অনেক উন্নতি সাধনের প্রয়োজন। পেটেন্ট অফিসের গোপনীয় রক্ষণাগারে তার দুটো মডেলসহ তার রিভলবারের একটা বিবরণ পেশ করার জন্যে মিঃ এলসওয়ার্থ স্যামকে উপদেশ দিলেন।
আনুষ্ঠানিক পেটেন্টের জন্যে দরখাস্ত করার সঠিক সময় না হওয়া পর্যন্ত এভাবে তার আবিষ্কার রক্ষিত থাকবে এই পেটেন্ট অফিসের মালখানায়। এরপর
এলসওয়ার্থ স্যামকে কাজ চালিয়ে যেতে বললেন এবং স্যাম-এর বাবা- তাঁর বন্ধুকে একটা চিঠি লিখে জানলেন,
প্রিয় বন্ধু ক্রিস্টোফার, বন্ধু, তোমার চিঠির জন্য শুভেচ্ছা।
‘স্যামুয়েল এখন এখানে তার নতুন আবিষ্কার নিয়ে বেশ অগ্রসর হচ্ছে। বৈজ্ঞানিক ও বিখ্যাত সব লোকেরা তার আবিষ্কারের খুব প্রশংসা করেছেন। আশা করছি, সে তার প্ররিশ্রমের জন্যে উপযুক্ত পুরস্কার পাবে। আমি তাকে সাহায্য করতে পারলে খুশি হবো...
বাবার বন্ধু শ্রদ্ধেয় এলসওয়ার্থের আগ্রহে উৎসাহিত হয়ে রাজধানীতে সবচেয় ভালো এক বন্দুক মিস্ত্রী পাওয়া গেলে, স্যাম তাকেই নিযুক্ত করলো। লোকটি বাল্টিমোরের, নাম ‘জন পিয়ার্সন'। স্যাম পিয়ার্সনকে তার সব সরঞ্জাম ও একমাসের বেতনের সবটা অগ্রিম দিয়ে দিলো। তার জমানো ডলার এতে প্রায় শেষ হয়ে গেলো। তাই আবার সে ছদ্মনামের ডাঃ কোল্ট হিসাবে পথে বেরিয়ে পড়লো। প্রথম কয়েক সপ্তাহ সে ওয়াশিংটন ও বাল্টিমোরের চারপাশের ক্ষুদ্র শহরগুলো ভ্রমণ করলো ! হাসির গ্যাস বিপুল উৎসাহী জনতা আকর্ষণ করছে দেখে স্যাম বুঝতে পারলো, ছোটো-ছোটো জনপদে গিয়ে সে হয়তো তার সময় অনেক বেশী নষ্ট করছে। হয়তো বা সে তার প্রদর্শনী পেশাদারী ভিত্তিতে দেখিয়ে বড়ো বড়ো শহরের থিয়েটার ও হলগুলোতে অনেক বেশি বেশি রোজগার করতে সক্ষম হবে—এবং সাম তাই স্থির করলো,--রাজধানী শহরের সেরা হলগুলোয় এবং সেই সাথে সেরা স্থানে প্রদর্শনী করবে। প্রথম লক্ষ্য হিসাবে সে বোস্টন শহরকে নির্বাচন করলো। দেশের মধ্যে এ শহরটাই সবচেয়ে বেশি শহুরে ও আমুদে মনের স্বচ্ছল লোকজনের বসবাস। বোস্টনের ম্যাসোনিক টেম্পল শহরের বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার স্থল। স্যাম বুঝেছিলো, যদি সে ম্যাসোনিক টেম্পল দর্শক দিয়ে ভর্তি করতে সক্ষম হয়, তাহলে অ্যামেরিকার অন্য যে কোনো স্থানে তার হল ভর্তি করতে কষ্ট হবে না বিন্দুমাত্র।।
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ! স্যাম যথারীতি এর কিছুদিন পর বোস্টনবাসীদের মধ্যে অসংখ্য হ্যান্ডবিল ছড়িয়ে দিলো। তাতে বিজ্ঞাপন হিসেবে লেখা ছিলো অনেক কথা।
যেমন তাতে লেখা ছিলোঃ
“আসুন। আসুন। আসুন। বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক-বক্তৃতা ও কৌতুক তামাশা। স্থান : ম্যাসোনিক টেম্পল, ২১শে ও ২২শে জুন। দেখাবেন, তামাশা ও হাসির বোমা, ডাঃ কোল্ট! নিউ ইয়র্ক, লণ্ডন ও কোলকাতায় পূর্বে যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। এবার বোস্টনো টিকিট মাত্র ২৫ সেন্ট। আপনি আমন্ত্রিত।”
১৮৩২ সনের ২১শে জুন সন্ধ্যায় ‘ম্যাসোনিক টেম্পলের মঞ্চে পা দিয়ে ডাঃ কোল্ট হল ভর্তি উৎসাহী দর্শকের সম্মুখীন হলো। স্যামের ১৮তম জন্মদিনের তখনো আরো পুরো একটি মাস বাকি। কিন্তু তাকে এই পোশাকে দেখতে খুবই ভারিক্কি মনে হচ্ছিলো। তার গায়ে ছিলো, আনকোড়া কালো লম্বা কোট আর মাথায় ছিলো লম্বা রেশমী হ্যাট। দাড়ি সুন্দরভাবে ছাঁটা। রূপোলী সুতোর কাজ-করা কালো কাপড়ে ঢাকা একটি টেবিলের উপর ছিলো তার বৈজ্ঞানিক নানা রকম সরঞ্জাম। মঞ্চে দর্শকদের কিছুটা সামনে এসে গলা পরিষ্কার করে সে বিজ্ঞজনোচিতভাবে ঘোষণা করলো,
-“নাইট্রাস অক্সাইড আমাদের যুগের আজ অব্দি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারগুলোর অন্যতম। প্রাণীর দেহে এই বিশেষ পদার্থের মিশ্রণের অদ্ভুত প্রভাব সর্ব প্রথম বিখ্যাত ইংরেজ রসায়নবিদ স্যার হামফ্রী ডেভী লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে নাইট্রাস অক্সাইড স্নায়ুতন্ত্রীতে অত্যাশ্চর্য প্রভাবের সৃষ্টি করে...।”
নাটকীয় ভঙ্গিতে ডাঃ কোল্ট মঞ্চের আরো একটু সম্মুখে গিয়ে দর্শকদের দিকে সামান্য ঝুঁকে বললো,-“নিঃশ্বাসের সঙ্গে এ গ্যাস গ্রহণ করলে কোনো কোনো-লোক হাসে, কেউ কেউ গান গায়, আবার কেউ-কেউ আবৃত্তি ও বক্তৃতার তুবড়ি ছোটায়। বেশির ভাগ লোকের মধ্যে শারীরিক কসরতের মানে, একরোবেটিং-এর অপ্রতিরোধ প্রভাব দেখা দেয়। যেমন কুস্তি ও বক্সিং। তারা আবার মাঝে মাঝে অসংখ্য অবিশ্বাস্য রকমের সাহসিকতাপূর্ণ কার্যকলাপ করে বসে। নাইট্রাস অক্সাইড এর অনুভূতি খুবই আনন্দদায়ক এবং এতে কোনোরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা কু-ফল দেখা দেয় না। দর্শকদের মধ্যে এ গ্যাস প্রয়োগ করার পূবে আমি নিজের উপর এর অসাধারণ ফলাফল প্রয়োগ করে ব্যাপারটা যে বিশ্বাসযোগ্য সেটা দেখাতে চাই আজকের উপস্থিত গুণীজনদের।”
নানা রকম অঙ্গভঙ্গী করে তার বক্তৃতা শেষ করার সঙ্গে-সঙ্গে ডাঃ কোল্ট দর্শকদের মন জয় করে ফেললো। তাই ২১শে জুনের প্রদর্শনী অতাধিক সফল ও লাভজনক হলো। বোস্টন ত্যাগ করার সময় স্যামের পকেট ভর্তি ছিলো শুধু ডলার আর ডলারে। ফলে দেশের প্রতিটি বড়ো বড়ো শহরে এসব বৈজ্ঞানিক তামাশা দেখানোর জন্যে স্যাম তৈরি হয়ে গেলো বেশ পাকা পোক্ত ভাবেই।
আশ্চর্য—–পর্যায়ক্রমিক ঠিক তাই করলো স্যাম! পরবর্তী তিন বছর ধরে সে অ্যামেরিকার ২৪টি অঙ্গরাজ্যের বেশির ভাগই ভ্রমণ করলো। এ সময়ে সে স্ট্রেটকোচ, স্টিমবোট আর নতুন দু’বগি রেলে চড়ে ভ্রমণ করেছিলো। দক্ষিণে ‘নিউ অর্লিয়েন্স’ আর উত্তরে কানাডা ছিলো তার যাতায়াতের সীমা। সিনসিনাটি’র অন্তর্গত ‘পশ্চিমের রানী বলে বিখ্যাত শহর ‘ডফেভিলে’র ‘ওয়েস্টার্ন মিউজিয়ামে বেশ কয়েক মাস ধরে সে তার প্রদর্শনী দেখিয়েছিলো।।
সব সময়েই অভিনয়কে সৃজনশীল, রুচিশীল করার প্রচেষ্টা ছিলো তার। সে নানা ধরনের নতুন-নতুন খেলার সংমিশ্রন করলো তার বর্তমান খেলার সাথে প্রচারকার্যেও পারদর্শী হয়ে উঠলো সে। সে আস্তে আস্তে তার---আসুন! আসুন!! আসুন!!!" ধরনের প্রচারপত্র ত্যাগ করে আরো বেশি মার্জিত ভাষা সম্পন্ন ঘোষণার ব্যবহার শুরু করলো। তা ছিলো নিম্নরূপ ---
ডাঃ কোল্ট, (ইতিপূর্বে নিউইয়র্ক, লন্ডন ও কোলকাতা) লোয়েল ও তার আশে-পাশের ভদ্রমহোদয় ও মহিলাদের নিকট সবিনয় নিবেদন করেছেন যে, অদ্য সন্ধ্যায় তিনি টাউন হলে নাইট্রাস অক্সাইড বা হাসির গ্যাসের উপর বক্তৃতা দেবেন ও তা প্রয়োগ করবেন.......ডাঃ কোল্ট হাতে কলমে শিক্ষাপ্রাপ্ত রসায়নবিদ, তাই দুষিত গ্যাস প্রয়োগের কোনো ভয় নেই। তাছাড়া, বিজ্ঞানে দখল আছে এমন যেকোনো লোকের পরীক্ষার্থে তিনি তার উদ্ভাবিত সরঞ্জাম দেখাতে প্রস্তুত ডাঃ কোস্ট অ্যামেরিকার বিভিন্ন শহরে অগণিত অভিজাত মহিলা ও পুরুষ দর্শকদের সামনে এই গ্যাসের অসাধারণ আশ্চর্য গুণাবলি প্রদর্শন করেছেন। তিনি বিশ হাজারের অধিক লোকের উপর এটা প্রয়োগ করেছেন এবং নিজে এক হাজার বারেরও বেশি গ্রহণ করেছেন”
-- যেখানেই গেছেন সেখানেই স্যাম হল ভর্তি লোকের সামনে তার খেলা দেখিয়েছেন। নিম্নে বর্ণিত সংবাদপত্রের খবর থেকেই বোঝা যায়, যে স্যাম তার দর্শকদের টিকেট কিনে প্রদর্শনী দেখার তুষ্টি পুরোপুরিই দিয়েছে। নিম্নে একটি পত্রিকার খবরের
অংশ বিশেষ তুলে দেয়া হলো,
‘ডাঃ কোল্টের গ্যাসের আশ্চর্য প্রভাব দেখার জন্যে গত সপ্তাহে যে উদ্দীপনা আমরা লক্ষ্য করেছি এ রকম আর কখনো দেখা যায়নি। প্রতি সন্ধ্যায় মিউজিয়ামে ঠাই হতো না। আগ্রহ এতো তীব্র ছিলো যে প্রায় প্রতি সন্ধ্যায়ই ডাক্তার দুটো করে প্রদর্শনী দেখাতে বাধ্য হয়েছেন...’
ডাঃ কোল্ট হিসেবে স্যামের এই প্রদর্শনীর অভিযান কাহিনী নিয়েই একটা স্বতন্ত্র মোটা আকারের গ্রন্থ হতে পারতো। উদাহরণ স্বরূপ মুদ্রিত আকারে বই প্রকাশের কথা বলা যায়।
প্রদর্শনীতে অংশ নেবার জন্যে একবার স্যাম সিনসিনাটি’তে ছ’জন রেড ইন্ডিয়ানকে ভাড়া করলো। সেই সন্ধ্যায় ‘ডফেভিল মিউজিয়াম’ লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো। সাঙ্ঘাতিক রেড ইন্ডিয়ান বর্বরদের উপর নাইট্রাস অক্সাইডের প্রভাব দেখার জন্যে সবাই উদগ্রীব। ভীষণ কিছু হতে পারে মনে করে কেউ কেউ সঙ্গে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলো। কিন্তু রেড ইন্ডিয়ানদের কোনো সহযোগিতা পাওয়া গেলো না। বন্য রণ--হুঙ্কার ছাড়ার পরিবর্তে তারা ঘুমিয়ে পড়লো। তাই প্রদর্শনীর ক্ষতি হতে পারে মনে করে স্যাম শঙ্কিত হয়ে পড়লো। সে তাদের ভীষণ জোড়ে গাল পারলো, শরীর ধরে নাড়া দিলো, শেষে তাদের কানে জোরে জোরে চিৎকার করলো; কিন্তু তাদের জাগাতে সক্ষম হলো না স্যাম।
তাৎক্ষণিক একটা চিন্তার পর স্যাম জনতার দিকে ফিরে গুরুগম্ভীরভাবে ঘোষণা করলো যে, প্রিয় দর্শকবৃন্দ নাইট্রাস অক্সাইড-এর অদ্ভুত গুণাবলীর আরো একটির প্রমাণ পেলেন। নিশ্বাসের সাথে সামান্য একটু গ্যাস যাওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে ঐ সাংঘাতিক লাল ইন্ডিয়ানগুলো কেমন মৃতবৎ হয়ে পড়েছিলো----সবাই পরিষ্কার দেখেছেন যে ওরা শিশুর মতো নিরীহ হয়ে গিয়েছিলো।
ভ্রমণের সময়েও স্যাম তার রিভলবারের প্রতি বেখেয়ালি থাকতো না। যতোবার সম্ভব স্যাম তার বন্দুক-মিস্ত্রী জন পিয়ার্সনের সঙ্গে পুনঃপুন পরামর্শ করার জন্যে বাল্টিমোরে ফিরে যেতো। চলার পথে বন্দুকটার আরো উন্নতি সাধনে সজাগ থাকতো সে। অবশেষে রাইফেল এবং পিস্তলেও সে রিভলবার পদ্ধতির সন্নিবেশ ঘটালো। ডাঃ কোল্ট হিসেবে সে বহু ডলার রোজগার করলেও তার ভ্রমণে খরচও লাগতে প্রচুর। তাই অনেক সময় বন্দুকের মিস্ত্রী পিয়ার্সনের টাকা পরিশোধ করতে তার অসুবিধায় পড়তে হতো। অবশ্য পিয়ার্সনের সঙ্গে মডেল তৈরীর প্রশ্নে নিম্নলিখিত চুক্তি হয়েছিলো, চুক্তিটি ছিলো, --- আমি জন পিয়ার্সন (রবিবার বাদে) প্রতিদিন দশ ঘন্টা করে প্রতি সপ্তাহে দশ ডলার হিসাবে বারো মাসের জন্যে মিঃ স্যামুয়েল কোল্টের কাজ করতে সম্মত আছি। এ থেকে আমার মজুরী, দোকান ও হাপর ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে চার ডলার করে কাটা যাবে। আমি আমার মজুরী প্রতি সপ্তাহে গ্রহণ করবো। কোনো প্রকার গড় মিল হলে এক মাসের নোটিশ দিয়ে উভয়পক্ষেই এই চুক্তি বাতিল করতে সক্ষম হবো।"
তখনকার দিনে বেতন সপ্তাহে দশ ডলার চাট্টিখানি কথা নয়। স্যামের প্রায়ই এই মজুরীর অর্থ ধার করতে হতো। পিয়ার্সন সঙ্গে-সঙ্গে অনুযোগ করতো। একবার বন্দুক মিস্ত্রী পিয়ার্সন কাজ ছেড়ে দেবার ভয় দেখালে স্যাম তাড়াতাড়ি তাকে একটি চিঠি লিখেছিলো। সেই চিঠিটা ছিলো এরকম
"Sir, I improve this Lies lies hour moment in infoming you that my affairs here are like to terminate as wel as I had expected & on Monday or Tuesday next I will make you a reinitance that wil inable you to commense my work. You can therefore make your arrangements accordingly, At all events dont ingage yourself to anyone until you hear from me again which will be on Monday or Tuesday next (possatively). **
নিম্নে ক্ষুদে পাঠকবৃন্দের জন্যে চিঠিটা বাংলা অনুবাদ করে দেয়া হলো।
“স্যার, আমি এই অবসর মুহুর্তে আপনাকে জানাচ্ছি যে, আমার ইচ্ছেনুযায়ীই আমার এখনকার কাজকর্ম সমাধা হবে এবং আগামী সোমবার কিংবা মঙ্গলবারে আপনাকে কিছু মজুরী দেবো। তাতে আমার কাজ শুরু করতে আপনি সক্ষম হবেন। সুতরাং, সে অনুযায়ী আপনি আপনার যন্ত্রপাতি জোগাড় শুরু করতে পারেন। যাই হোক না কেনো,--আমার কাছ থেকে খবর না পাওয়া পর্যন্ত আপনি অন্য কারো কাজে হাত দেবেন না (অবশ্যই) আগামী সোমবার বা মঙ্গলবারের মধ্যে আপনি আমার খবর পাবেন।”
উনিশ বছর বয়সী স্যাম একজন আবিষ্কারক ছিলো বটে এবং বিজ্ঞানে তার বিস্ময়কর অবদানও অনস্বীকার্য, তবুও ইংরেজীতে লেখা চিঠি পড়ে বোঝা যায়, যে তার অগোছালো শিক্ষাজীবনে সঠিক বানান শিক্ষারও সময় পায়নি। ** তাই ভুল বানানের মূল চিঠিটিই ছাপা হলো। স্যামের নিয়মিত আর্থিক সঙ্কট এবং মাঝে মাঝে কাজ ছেড়ে দেবার কথা বলে পিয়ার্সনের হুমকি সত্ত্বেও বাল্টিমোরের এই বন্দুক-মিস্ত্রী মনোযোগী ও খুবই বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন কারিগর ছিলো এবং তিন বছরের মধ্যে সে স্যামের মডেল অনুযায়ী অনেকগুলো চমৎকার নিখুঁত রিভলবার তৈরি করে ফেললো। ১৮৩৫ সালের প্রথম দিকে স্যাম মনটাকে স্থির করলো এই ভেবে যে, ডাঃ কোল্টের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। তার শেষ খেলা দেখার পর বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদি গুটিয়ে সে বাল্টিমোরে ফিরে এলো। এখানে তার ঘূর্ণায়মান পিস্তল ও রাইফেলের তৈরি কয়েকটা মডেল নিয়ে আবার সে রওয়ানা দিলো রাজধানীর উদ্দেশ্যে। নিয়মনীতি মতো পেটেন্টের জন্যে দরখাস্ত করতে আবার ওয়াশিংটনের দিকে স্যাম যাত্রা করলো দ্বিতীয়বারের মতো।
এবার জমা দেয়া মাত্রই স্যাম-এর পেটেন্ট মঞ্জুর করা হলো। সাগরের অপর তীরে যাতে তার তৈরি অস্ত্রগুলো নকল না হতে পারে সেজন্যে বৈদেশিক পেটেন্ট লাভের উদ্দেশ্যে কয়েক সপ্তাহ পরে এই বিশ বছর বয়সের তরুণ বিজ্ঞানী ইউরোপের পথে রওয়ানা দিলো। এবার তার যাতায়াত খরচ তাকে তার পরিবার থেকে ধার করতে হলো। কেননা, তার অস্ত্রের পরীক্ষামূলক মডেলগুলো তৈরি করতেই হাসির গ্যাস থেকে অর্জিত সমস্ত লভ্যাংশ শেষ হয়ে গিয়েছিলো।
ইউরোপে এসে স্যাম প্রথমবারের মতো জানতে পারলো যে, স্যাম এবং এলিশা কোলিয়েরই কেবলমাত্র আবিষ্কারক নন--যারা বাস্তব পুনঃপুনঃ ক্রিয়াশীল অস্ত্র তৈরি করতে চেষ্টা করেছে। অন্ততঃ তিনশো বছর পূর্বেও রিভলবারের কার্যপ্রণালী লোকের জানা ছিলো। স্যাম সত্যি ঘটনাটা উদঘাটনের জন্যে অনেকগুলি মিউজিয়ামে গেলো। সেগুলোতে পুরোনো আগ্নেয়াস্ত্রের প্রচুর সংগ্রহ ছিল। সেগুলোতে গিয়ে সে দেখতে পেলো, পনেরো শতকের আদিম বন্দুকের পশ্চাদ্ভাগও ঘূর্ণায়মান ছিল। সে কোলিয়েরের জিনিস ধার করেছে আর সম্ভবতঃ কোলিয়ের তার পূর্বের বন্দুক-মিস্ত্রীদের কাজ দেখে ধারণা নিয়েছে। পুনরায় গুলী না ভরে কয়েকবার গুলি করা যায় এমন অস্ত্র তৈরির প্রচেষ্টা প্রায় আগ্নেয়াস্ত্র আবিষ্কারের প্রথম দিককার ইতিহাসের মতোই প্রাচীন।
সে যাই হোক না কেনো, সামের ভাগ্যেই প্রথম সফলতা এসেছে। অদ্যাবধি পুনঃপুন ক্রিয়াশীল অস্ত্রের মধ্যে কেবলমাত্র তার রিভলবারগুলোই স্বয়ংক্রিয় ও সত্যিকারের কার্যক্ষম। স্বয়ংক্রিয় রিভলবার চালনার পক্ষে তার পেটেন্ট বা মডেল এতো মৌলিক যে সেই পেটেন্টের মেয়াদ ফুরোবার আগে অন্য কোনো বন্দুক মিস্ত্রী অনুরূপ রিভলবার আইনতঃ তৈরি করতে সক্ষম ছিলো না।
১৮৩৬ সালের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রে প্রযোজ্য কতোগুলো উন্নতি সাধনের জন্য স্যাম যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে পেটেন্ট পেলো। স্বয়ংক্রিয় রিভলবারের তিনটি অত্যাবশ্যক গঠন প্রণালী সংক্রান্তই ছিলো স্যামের সমস্ত পেটেন্টগুলো।
১। রিভলবারের ঘোড়া টানার সাহায্যেই সিলিন্ডার ঘোরানো
২। একই মাধ্যমে দিয়ে নলের সঙ্গে একই লাইনে সিলিন্ডার আটকানোও খুলে দেয়।
৩। সিলিন্ডারের মধ্যকার সবগুলো গুলীর চেম্বার (কোঠা) যাতে এক সঙ্গে ফেটে না যায় তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
স্যামের বহু সাধনার ফসল পেটেন্টগুলো কিন্তু তার আকাঙ্ক্ষিত যশ ও সৌভাগ্য একদিনে এনে দেয়নি। এই কোল্ট রিভলবার জনসাধারণের অনুমোদন পেতে আরো অনেক বছর লেগেছিলো।
কোল্ট রিভলবার উৎপাদনের প্রথম প্রচেষ্টা নিদারুণ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিলো। আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের আর্থিক সাহায্য নিয়ে স্যাম নিউজার্সী সিটির পিটার্সনে “পেটেন্ট আমস ম্যানুফ্যাকটোরিং কোম্পানী” করলো। তারপর সে নিজেই তার আবিষ্কারের গুণাবলী ব্যাখ্যা করে এর প্রচলন বৃদ্ধি করতে দেশের নানা স্থানে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
কিন্তু তেমন কেনো আশানুরূপ বিক্রি হলো না তার রিভলবার। স্যাম জনগণের সামনে প্রদর্শনী করলো এবং দায়িত্বশীল মিলিটারী ও সরকারী কর্মচারীদের সঙ্গে দেখা করলো। কিন্তু তাঁরা খুব কমই আগ্রহ দেখালো। ঐতিহ্যবাহী ব্রিটিশ আর্মির লোকেরা কোল্ট রিভলবার পছন্দ করলেন না। তাঁদের মতে, ওটা খুবই সেকেলে এবং সেনাবাহিনীতে ব্যবহারের পক্ষে বিশেষ উপযোগী হবে না। তাই জনসাধারণ এই নতুন অপ্রচলিত অস্ত্র সন্দেহের চোখে দেখতে লাগলো। কয়েক বছরের মধ্যেই স্যাম ও তার কোম্পানীর মূলধন শেষ হয়ে গেলো।
অন্য জীবিকা গ্রহণে বাধ্য হয়ে স্যাম আবার তার প্রথম আবিষ্কারের কাজেই ফিরে গেলো। পানির নিচে ব্যবহারযোগ্য যুদ্ধজাহাজের জন্যে মাইনকে আরো বড়ো, উন্নততর এবং কর্মক্ষম করার পর নৌ-বাহিনী আগ্রহী হয়ে নিউইয়র্ক নৌ-বন্দরে পরীক্ষাকার্যের জন্যে ব্যবহারার্থে স্যামকে একটা পুরোনো জাহাজ দান করলো। ডাঃ কোল্ট হিসেবে তার যে প্রচার চালানো হয়েছিলো সে কথা স্যাম ভোলেনি। তাই এবারো এই প্রদর্শনীর কথা স্যাম ভালোভাবে প্রচার করলো। নির্দিষ্ট দিনে হাজার হাজার লোক নিউইয়র্কের সেনা নৌ বন্দরে জমা হয়ে নৌ-বাহিনীর জাহাজটা বিদীর্ণ শব্দে টুকরো টুকরো ভেঙে যেতে দেখলো স্বচক্ষে। এতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস মুগ্ধ হয়ে স্যামের পরীক্ষাকার্য চালিয়ে যেতে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ হাজার ডলার মঞ্জর করলেন।
জাহাজ উড়িয়ে দেবার কাজের ব্যস্ততার মধ্যে সাম তার পানির নীচের তারের (কেবল একটা নতুন প্রয়োগের ভালো সুযোগ এবং অধিক কর্মক্ষম জিনিষ লক্ষ্য করলো। মাইনের কাজে সে এই তারকে ত্রুটিমুক্তভাবে তৈরী করেছিলো। আর তাতেই এ সুযোগটা এসে গেলো। চুম্বক টেলিগ্রাফের আবিষ্কতা স্যামুয়েল মোর্সের সঙ্গে সে যৌথ কারবারের একটা চুক্তি সম্পাদন করলো। পৃথিবীর প্রথম পানির নীচের টেলিগ্রাফ লাইন বসানোর জন্যে এই দুজনে মিলেই একটা কোম্পানী গঠন করলো। তারা কোনী দ্বীপের সঙ্গে নিউইয়র্ক সিটি, ব্রকলীন ও নিউ জার্সীর মধ্যে 'Under Water Cable line Corpiection' এই অভিনব পথে সংযোগ সাধন করলো। কোনী দ্বীপ থেকে দেখা জাহাজের আগমনের বার্তা এই কোম্পানী তাদের গ্রাহকদের অবগত করাতে সক্ষম হলো পানির তলদেশে টেলিফোনের এই সংযোগ-এর মাধ্যমেই।
এই উভয় প্রচেষ্টাতেই স্যামের প্রচুর খ্যাতি হলো, কিন্তু কোনোটাতেই তার সৌভাগ্য প্রসন্ন হলো না। এক বিরাট নতুনত্ব হিসাবে ‘টেলিগ্রাফ কোম্পানী প্রশংসা পেলো সত্যি, কিন্তু তা সত্ত্বেও এটা আবারো আর্থিক দুর্গতির সম্মুখীন হলো। জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ও স্বপক্ষে কোল্টের প্রচেষ্টার প্রশংসা করা সত্ত্বেও কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিলেন যে,—“শান্তির সময়ে নৌ-বাহিনীর ঘাঁটিগুলো এবং বাণিজ্যিক পোতাশ্রয়গুলো রক্ষার কাজে এতো মোটা দাগের অর্থ খরচের প্রয়োজন যুক্তিযুক্ত মনে করি না।”
রিভলবারের প্রথম পেটেন্ট পাবার এগারো বছর পরেও, ১৮৪৬ সালে স্যাম নিজেকে গীজার প্রার্থনা বেঞ্চের ফাকে ফোকরে লুকিয়ে থাকা ইঁদুরের মতো গরীব বলে বর্ণনা করেছিলো।
তবে তাকে বেশীদিন এমনি অর্থকষ্টে থাকতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের সংযুক্তির ফলে ১৮৪৬ সালের প্রথমদিকে মেক্সিকান যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদলের তখন অধিনায়ক ছিলেন, জেনারেল জ্যাচারী টেলার। কোল্ট রিভলবার সম্পর্কে তাঁর জানা ছিলো এবং যে কজন সামরিক অফিসার সে সময়ে এটার শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করেছিলেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। জেনারেল টেলার তাঁর এক সহকর্মীকে সময় নষ্ট না করে দ্রুত পাঠিয়ে দিলেন। জেনারেল জ্যাচারী টেলারের উদ্দেশ্য,—কোল্টের সঙ্গে একবার সাক্ষাত করে যতোগুলো সম্ভব তার উদ্ভাসিত পিস্তল, বন্দুক ও রিভলবার জাতের অস্ত্র কিনে নিয়ে আসা। তখন, অবশ্য স্যামের অস্ত্র উৎপাদনের কোনো আর্থিক সঙ্গতি ছিলো না। কানেক্টিকাট এর এক বন্দুক-কারখানায় কাজটার দায়িত্ব অর্পন করতে বাধ্য হলো স্যাম। এতো বছর যুদ্ধ করার পর অন্য কেউ তার আবিষ্কারের লাভ পাবে এটা তার পছন্দ হয়নি। তাই, যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব পুঁজি জোগাড় করে সে হার্টফোর্ডে নিজেই একটা অস্ত্রকারখানা তৈরির কাজ শুরু করে দিলো। ঠিক উপযুক্ত সময়ে এবং যথেষ্ট নিষ্ঠার সঙ্গে।
এমন কি তখনো হার্টফোর্ডের কারখানা তৈরির কাজ শেষ হয়নি। ইতিমধ্যেই মেক্সিকান যুদ্ধে প্রমাণিত হলো যে, ছয় গুলীওয়ালা বন্দুকের সঙ্গে অন্য কোনোরকম অন্ত্রের একেবারেই তুলনা চলে না। সেনা বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ অফিসার বলেছিলেন,—“প্রচলিত সাধারণ অস্ত্রে সজ্জিত এক হাজার লোক নিয়ে এক হাজার শত্রুর মোকাবেলা করার চেয়ে আমি কোল্টের পিস্তলে সজ্জিত আড়াইশো লোক নিয়ে এক হাজার অস্ত্রধারী শত্রুর সম্মুখীন হতে সুস্থ মাথায় রাজি আছি।”
সত্যি বলতে, সেই থেকে কোন্ট রিভলবার পশ্চিমা অস্ত্রের ইতিহাসের ভুবনে এক অতি প্রয়োজনীয় বস্তু হয়ে উঠলো। ছয় গুলী ওয়ালার সঙ্গে অন্য কোনো দ্বিতীয় পদ্ধতির অন্ত্রের তুলনাই হতো না—কারণ জঙ্গলে লুকোবার পূর্বে লক্ষ্যভেদ করার জন্যে কোনো লোক অন্য কোনো অন্ত্রে দু'বার গুলী করার সুযোগ পেতো না। অশ্বারোহী রেড ইন্ডিয়ানকে পরাজিত করার ব্যাপারে জাঁদরেল সমস্ত সীমান্তবাসীগণ কোল্ট-এর রিভলবারকে একমাত্র অস্ত্র মনে করতো, যা থেকে অতি দ্রুত গুলী করা যায়।
-কোল্ট রিভলবার সঙ্গে না থাকলে লাল ইন্ডিয়ানদের এলাকা দিয়ে ডাক বহনকারী অশ্বারোহীরা (ডাক-হরকরা) ভ্রমণ করতে সরাসরি অস্বীকার করে বসে। তারা বলতো – “কোস্ট রিভলবার না নিয়ে পশ্চিমে যাওয়া আর বুট ও জিন না নিয়ে ঘোড়ায় চড়া একই পর্যায়ের বোকামী হবে।"
যুদ্ধের জন্যে মারাত্মক অস্ত্র হওয়া সত্ত্বেও কোল্ট রিভলবার'-এর নাম, শান্তির হাতিয়ার হিসাবেও খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লো। কোল্টের শান্তিস্থাপনকারী মডেল বাস্তবিকই ভয়ংকর সীমান্ত শহরগুলোর আইন শৃংখলা রক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে দাঁড়ালো। স্যাম তাই বলেছিলো,—“আমার আবিষ্কৃত অস্ত্র ধারী কোনো ভদ্রলোক এক ডজন দস্যুকে কাবু করতে সক্ষম; কারণ, তার কাছে ছটি গুলী রয়েছে এ কথা জানে বলেই দস্যুরা বলতে পারে না-কার ভাগ্যে কোটা জুটবে; তাই তারা যে যার পথে সটকে পড়ে।”
১৮৫৫ সনের মধ্যে কোল্টের হার্টফোর্ড অস্ত্র কারখানা পৃথিবীর বৃহত্তম বেসরকারী অস্ত্রগার হয়ে দাঁড়ালো। সেখানে ক্ষুদে পকেট পিস্তল থেকে শুরু করে শক্তিশালী ঘূর্ণায়মান রাইফেল পর্যন্ত নানা ধরনের পুনঃক্রিয়াশীল আগ্নেয়াস্ত্র তৈরী হতে লাগলো। কোল্টের অস্ত্রগুলো পৃথিবীর চারদিকে—ইউরোপ থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সগৌরবে ছড়িয়ে পড়লো। স্যাম সত্যি-সত্যিই একদিন অবশেষে তার সৌভাগ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হলো। সে অ্যামেরিকার ধনকুবেরদের অন্যতম হয়ে পড়লো মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই।
সাতচল্লিশ বছর বয়সে ১৮৬২ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে ইউনিয়ন সৈন্যবাহিনীর প্রয়োজন মেটাবার উদ্দেশ্যে তাঁর কারখানার আরো সম্প্রসারণ করেছিলেন। তাঁর অবর্তমানেই তাঁর পরিকল্পনার কাজ এগিয়ে চললো। এদিকে ইউনিয়ন বাহিনীর প্রধান পার্শ্ব-অস্ত্র হিসাবে কোল্ট রিভলবার স্থান পেয়ে গেলো। অনেক অশ্বারোহী সৈন্য দুটো বেল্টে, আর দুটো জিনের মধ্যে মোট চারটো কোল্ট রিভলবার’ বয়ে নিয়ে চারগুণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখতো। নিজের জন্যেতো বটেই--দেশের জন্যেও।
গৃহযুদ্ধের সময় থেকেই অস্ত্রে ভীষণ রকম আকার অবয়বের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; কিন্তু আজকাল পশ্চিম বিজয়ী বন্দুক নামে পরিচিত কোল্টের সেই ছয় গুলীওয়ালার মতো পিস্তল ও রিভলবার খুব কম আগ্নেয়াস্ত্রের ইতিহাসের উপর এতোটা প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিলো।
কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের মালিকানাধীন কোল্ট রিভলভারের পুরোনো এক মূল্যবান সংগ্রহশালার মাধ্যমে স্যামের জীবনকাহিনীর পুরো পরিচয় পাওয়া যায়। সেই সংগ্রহের মধ্যে রয়েছে,—কাঠের মডেলের সেই ঘূর্নায়মান পিস্তলের অংশ যা স্যাম কার্ভো জাহাজে করে সমুদ্রযাত্রার সময়ে তৈরি করেছিলেন।
স্যামুয়েল কোল্টের সেই সংগ্রহশালার জন্যে কেবলমাত্র একটা জিনিসই পাওয়া যায়নি--যা আজও সরকার পৃথিবীর সবকটি দেশে খুঁজে খুঁজে দেখছেন। তা হলো, এক ডলার মূল্যের যে বড়ো চাকুটা দিয়ে ষোলো বছরের ইয়াংকী যুবক, আজকের বিশ্ববিখ্যাত আবিষ্কার তার সৌভাগ্যের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন সেই চাকুটা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন