বুধবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২১

টক ঢেকুর বা বুক জ্বালাপোড়ার রোগ কেনো হয় এবং করণীয় - GERD SYMPTOMS, TREATMENT AND REMEDIES,

টক ঢেকুর বা বুক জ্বালাপোড়ার রোগ কেনো হয় এবং করণীয় -GERD SYMPTOMS, TREATMENT AND REMEDIES
টক ঢেকুর বা বুক জ্বালাপোড়ার রোগ কেনো হয় এবং করণীয় -GERD SYMPTOMS, TREATMENT AND REMEDIES

টক ঢেকুর বা বুক জ্বালাপোড়ার রোগ কেনো হয় এবং করণীয় -GERD SYMPTOMS, TREATMENT AND REMEDIES

লেখা: অধ্যাপক ডা. চঞ্চল কুমার ঘোষ

গ্যাস্ট্রো ইজোফেগিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা জিইআরডির (GERD) নাম আপনার শুনে থাকবেন। নামটা খটমটে বটে, তবে আমাদের প্রায় প্রত্যেকেরই পাকস্থলীতে কমবেশি এইরিফ্লাক্সেরঅভিজ্ঞতা আছে। সহজ কথায় বলা যায়, ঢেকুর তুললে মুখের মাঝে টক বা ঈষৎ তেতো স্বাদ অনুভব করা বা কখনো বুকে জ্বালাপোড়া অনুভব করাএসবই হলো রিফ্লাক্সের মানে জিইআরডি এর লক্ষণ। আর ধরনের উপসর্গ সপ্তাহে দুই বা তার বেশি বার হলে তাকে গ্যাস্ট্রো ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) বলা হয়। বিশ্বের প্রায় চোদ্দ শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগে থাকেন।

কেন হয় জিইআরডি

আমাদের খাদ্যনালী পাকস্থলীর সংযোগস্থলে একটি ভাল্ বা বৃত্তাকার পেশির তৈরি রিং আছে, যার নাম লোয়ার ইসোফেগিয়াল স্ফিংটার (lower esophageal sphincter) এর কাজ হলো খাদ্যনালি থেকে পাকস্থলীতে খাবার প্রবেশের সময় শিথিল বা প্রসারিত হওয়া, আবার খাবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করার পর শক্তভাবে এর মুখ আটকে দেওয়া। কোনো কারণে এর কার্যকারিতা হ্রাস পেলে পাকস্থলীর অ্যাসিড মিশ্রিত পাচক রস (HCL acid) খাবারের অংশবিশেষ ওপরে ঠেলে খাদ্যনালিতে চলে আসে আর বুক জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি সৃষ্টি হয়।

জিইআরডির সঠিক কারণ সব সময় স্পষ্টভাবে বোঝা না গেলেও কিছু বিষয়ের ঝুঁকি বাড়ায়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্সের অন্যতম কারণ হলো হায়াটাস হার্নিয়া (hiatus hernia) এতে খাদ্যনালি পাকস্থলীর উপরিভাগ বুকের মধ্যচ্ছদা ওপরে উঠে আসে। কখনো কখনো স্ফিংটারের পেশি শিথিল হয়ে পড়লে বা পেটের চাপ অতিরিক্ত বেড়ে গেলেও জিইআরডি হতে পারে।

জিইআরডি এর ঝুঁকিগুলো কী?

ধূমপান, স্থূলতা, মদ্যপান, গর্ভধারণ, অতিরিক্ত পেট ভরে খাদ্য বা পানি গ্রহণ করার পর পর শুয়ে পড়া অথবা কাত হয়ে বা উপুড় হয়ে শোয়ার ফলে রিফ্লাক্স হয়। কার্বনেটেড বেভারেজ (যেমন কোমল পানীয়) বা চা-কফি বেশি পান করলে কিংবা অধিক মসলা চর্বিযুক্ত খাবার, চকলেট, অতিরিক্ত টক জাতীয় খাবার খেলে এর ঝুঁকি বাড়ে। অ্যাসপিরিন, বিভিন্ন ধরণের ব্যথানাশক, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, পেশি শিথিলকরণ ওষুধ সেবনে সমস্যা বাড়ে।

জিইআরডির সমাধান দরকার (জিইআরডিতে করণীয়)

জিইআরডির কারণে দৈনন্দিন জীবনযাপনে অস্বস্তি কষ্ট তো হয়ই, এটির দ্রুত চিকিৎসা না করালে কিছু জটিলতা তৈরী হতে পারে। খাদ্যনালির প্রদাহ (Barrett's esophagus) অন্যতম জটিলতা। প্রায় পনেরো শতাংশ রোগীর ধরনের প্রদাহ হয় যা পাকস্থলীর ক্যানসারের অন্যতম একটি কারণ। ছাড়া থেকে হাঁপানি, নিউমোনিয়া, শ্বাসনালির প্রদাহ, কণ্ঠনালির প্রদাহ, ঘুমের সমস্যা (Sleep apnea) ইত্যাদি হতে পারে।

তাই রিফ্লাক্স বা জিইআরডির সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

জিইআরডির প্রতিকার

১। জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে জিইআরডি থেকে অনেকাংশে সুস্থ থাকা সম্ভব।

২। একসঙ্গে অতিরিক্ত পেট ভরে না খেয়ে সারা দিনে অল্প অল্প করে কয়েকবার খেতে হবে।

৩। ধূমপান অবশ্যই বর্জন করতে হবে।

৪। অ্যালকোহল এবং বেশি বেশি কফি, জুস, কোমল পানীয় ইত্যাদি সেবন বন্ধ করতে হবে।

৫। খাবার গ্রহণের দুই-তিন ঘণ্টা পর বিছানায়/ঘুমাতে যাবেন।

৬। বিছানার মাথার দিকটি - ইঞ্চি উঁচু করে দিতে পারেন। খাবার পর দরকার হলে হেলানো চেয়ারে বসতে পারেন। শোবার সময় ডানকাতে শুবেন।

৭। ঘন ঘন দাওয়াত খাওয়া, বাইরের তেল-মসলাযুক্ত খাবার, ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।

৮। আঁটসাঁট পোশাক শক্ত বেল্ট পরিহার করুন।

৯। শরীরের ওজন বেশি হলে খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন কমান।

১০। যেসব ওষুধ সমস্যা বাড়ায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সেগুলো পরিবর্তন করা যায় কি না, দেখুন।

জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসক আপনাকে উপসর্গ কমাতে কিছুদিনের জন্য অ্যান্টাসিড, এইচ ব্লকার, পিপিআই (Proton pump inhibitors), সোডিয়াম অ্যালজিনেট বা ডমপেরিডোন জাতীয় ওষুধ দিতে পারেন। তবে তীব্রতা বাড়তে থাকলে বা সমাধান না হলে কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোস্কপিক বা শল্যচিকিৎসাও প্রয়োজন হতে পারে।

লেখক: গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন