হ্যান্স বেথে ও সূর্যশক্তির উৎস - নক্ষত্র গুলোর শক্তি ও আলোর উৎস - হ্যান্স বেথের জীবনী - Hans Bethe and The source of the energy of the stars |
নিউ মেক্সিকোর
দিগন্ত
বিস্তৃত
প্রান্তরে
এক
জ্যোৎস্না
প্লাবিত
রাতে
হ্যান্স
বেথে
স্ত্রীর
সঙ্গে
বেড়াতে
বেরিয়েছেন।
স্ত্রী
বললেন,
“আকাশের
তারাগুলো
কী
সুন্দর
আর
উজ্জ্বল
দেখাচ্ছে!”
হ্যান্স বললেন, “তুমি এমন একজনের পাশে দাঁড়িয়ে আছ, যে পৃথিবীর একমাত্র মানুষ, যার জানা আছে ওইসব তারার শক্তি কোথা থেকে আসে।”
ওই সময়ে ১৯৩৭ সালে হ্যান্স বেথে (Hans Albrecht Bethe) তারকাশক্তির উৎস যে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া তা আবিষ্কার করেছেন। পরের বছর নিউইয়র্ক একাডেমি অব সায়েন্স এই মৌলিক গবেষণার জন্য তাঁকে এ. সি. মরিসন পুরস্কার প্রদান করে। তারপর ১৯৪৭ সালে তিনি ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের ড্রেপার মেডাল, ১৯৬৩ সালে রয়াল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল সোসাইটির এডিংটন মেডাল এবং ১৯৬৭ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে বিভূষিত হন।
১৯৬৯ সালে হ্যান্স বেথে উপমহাদেশে এসেছিলেন। সে সময়ে রাওয়ালপিন্ডির হোটেলে তাঁর সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলাপ হয়। হ্যান্স বেথের একটি কথা আমার সবসময়ই মনে হয়, “পরীক্ষণের কাজ তোমাদের পক্ষে হয়তো করা কষ্টসাধ্য। কিন্তু তাত্ত্বিক গবেষণায় তোমাদের যে ঐতিহ্য রয়েছে তাকে বাঁচিয়ে রাখাই হবে তোমাদের কাজ।”
বেথেকে মনে হয়েছে সহৃদয় এবং পরিশীলিত একজন মানুষ, যাঁকে দেখে আবহমানকালের ইউরোপীয় সংস্কৃতির কথাই মনে হয়।
আলসাস-লোরেনের (Alsace–Lorraine) স্ট্রাসবুর্গ শহরে ১৯০৬ সালে হ্যান্সের জন্ম। পিতা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরতত্ত্বের নামকরা অধ্যাপক। আর মা ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী। ছোটদের নাটক লিখতেন তিনি। গ্যেটে জিমনাসিয়াম, পাবলিক স্কুল শেষ করে হ্যান্স ১৯২৬ সালে ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর মাত্র বাইশ বছর বয়সে হ্যান্স মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। তাঁর গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আর্নল্ড সমারফেল্ড (Arnold Johannes Wilhelm Sommerfeld)। তিনিই প্রথম হ্যান্সকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের নাটকীয় উত্তেজনার মধ্যে নিয়ে আসেন। ১৯৩০-৩২ সালে হ্যান্স বেথে রকফেলার ফেলো হিসেবে রোমে এনরিকো ফার্মির (Enrico Fermi) সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান। ১৯৩৫ সালের মধ্যে হ্যান্স বেথে নাৎসি জার্মানি থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন এবং তখন থেকেই কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
হ্যান্স বেথে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম স্রষ্টা। তার কাজ বহুমুখি এবং সৃষ্টিধর্মী। তরুণ বয়সে তিনি প্রোটনের সঙ্গে ইলেকট্রনের সংঘর্ষ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। এর কিছুদিন আগে ম্যাক্স বর্ন (Max Born) তার আসন্নমান প্রকাশ করেছেন। বেথে বর্নের আসন্নমান ব্যবহার করে ইলেকট্রনের শক্তি হ্রাসের একটি সহজ সমীকরণ বের করলেন। কিন্তু কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পি. এম. ব্ল্যাকেট (Patrick Maynard Stuart Blackett) তাঁকে বললেন, “দেখো, আহিত বস্তুকণার শক্তি হ্রাসের সমীকরণ তুমি দিয়েছ, কিন্তু এটা আমার কোনো কাজে আসছে না। আমি এটা সংখ্যাভিত্তিকভাবে জানতে চাই, যাতে বস্তুকণার পথদৈর্ঘ্য থেকে তার শক্তি পেতে পারি।”
সুতরাং বেথেকে জটিল পরমাণুর সঙ্গে ইলেকট্রনের সংঘর্ষ নিয়ে আলোচনা করতে হলো এবং গড় বিভবের ধারণা প্রবর্তন করতে হলো। এভাবেই পথদৈর্ঘ্য এবং শক্তির সঙ্গে যে সম্পর্ক পাওয়া যায় তা পরীক্ষণবিদদের কাছে অত্যন্ত ফলপ্রসু বলে প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু হ্যান্স বেথে নিজেই বলেছেন যে, তাঁর জীবনের সবচেয়ে সার্থক সময় হলো ত্রিশের দশক। ওই সময়ে তিনি নিউক্লিয়ার পদার্থবিজ্ঞানের সৃষ্টির দিনগুলোতে অমূল্য অবদান রাখতে পেরেছিলেন। শুরু হয় ম্যানচেস্টারে যখন হ্যান্স বেথে এবং পায়ার্লস (Sir Rudolf Ernst Peierls) ডিউটারনের বাঁধুনি শক্তি নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। দেখা গেল নিউট্রন এবং প্রোটনের বিক্ষেপণ প্রস্থচ্ছেদ নিউট্রন-প্রোটনের শক্তি এবং ডিটারনের বাঁধুনি শক্তির যোগফলের ব্যস্ত সমানুপাতিক। এভাবে বিক্ষেপণের সঙ্গে বাঁধুনির একটা সম্পর্ক পাওয়া গেল, কিন্তু পরীক্ষণের সঙ্গে দুর্ভাগ্যক্রমে তা মেলে না। ১৯৩৫ সালে নিউইয়র্কের ভূগর্ভস্থ ট্রেনে বসে ইউজিন উইগনার (Eugene Paul "E. P." Wigner) এই সমস্যার সমাধানটি বাতলে দিয়েছিলেন। আসলে নিউট্রন-প্রোটনের সংঘর্ষে স্পিনের বা ঘূর্ণনের ধারণা নিয়ে আসা দরকার। স্পিন ট্রিপলেট এবং স্পিন সিংগলেট (ঘূর্ণনত্রয়ী এবং ঘূর্ণন একক) অবস্থা বিবেচনা করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। হ্যান্স বেথে তার রিভিয়ু অব মডার্ন ফিজিক্স প্রকাশিত তিনটি প্রবন্ধের একটিতে এই সমাধান প্রকাশ করেছিলেন।
এক সময়ে নিউক্লিয়াস পদার্থবিজ্ঞানের বাইবেল ছিল এই তিনটি প্রবন্ধ। প্রবন্ধ তিনটিকে বলা হয়েছে ‘ম্যাটনচিনো’ বা ক্ষুদ্র পাহাড়। বেথে লিখেছেন, “দেখলাম পরীক্ষণবিদরা নিউক্লিয়াস পদার্থবিজ্ঞান সম্বন্ধে বিশেষ কিছুই জানেন না। একই ব্যাপার একেক জনের কাছে ব্যাখ্যা করা বেশ কষ্টসাধ্য। তাই ভাবলাম, সবকিছু লিখে ফেলাই সহজতর এবং এভাবে রিভিয়ু অব মর্ডান ফিজিক্সের প্রবন্ধ তিনটি লেখা হয়।” তখন পর্যন্ত জানা অনেক কিছুর মধ্যে যেসব ফাঁক ছিল তা এই প্রবন্ধ তিনটি ভরে দিতে সক্ষম হয়েছিল। অনেক কিছু নিয়ে প্রণালীবদ্ধ আলোচনা করা হয়েছিল। যেমন—উত্তেজক অপেক্ষক (excitation function), নিউট্রন পরিবহন (neutron diffusion) এবং হাল্কা নিউক্লিয়াসের বাঁধুনি শক্তি (binding energy of light nucolear)! প্রবন্ধে সুবিস্তৃত তত্ত্বের যাচাই করার সুযোগ এভাবে পরীক্ষণবিদদের সামনে এসে গেল এবং বলা যায় যে, কেন্দিন পদার্থবিজ্ঞানের সত্যিকারের গোড়াপত্তন হলো।
১৯৩৭ সালের দিকে হ্যান্স বেথের বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড এক সম্পূর্ণ নতুন দিকে মোড় নিল। ওই বছর জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যামো (George Gamow) এবং টেলার (Edward Teller) একটি ছোট সম্মেলন আহ্বান করেছিলেন। সম্মেলনে সূর্য এবং অন্যান্য তারকার শক্তির উৎস কী, এই প্রশ্ন বেথের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিল। কয়েক মাস ধরে তিনি সম্ভাব্য সবকটি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া পরীক্ষা করলেন, যা দিয়ে তারকার অভ্যন্তরে শক্তি তৈরি হতে পারে। সবশেষে ১৯৩৮ সালে তারকায় শক্তি প্রস্তুতকরণ (energy production in star) শিরোনামে একটি যুগান্তকারী প্রবন্ধ প্রকাশ করে হ্যান্স বেথে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে নতুন দিগন্ত খুলে দিলেন।
আজকাল আমরা জানি যে, হ্যান্স বেথের কার্বনচক্র এবং প্রোটনচক্র হলো প্রধান ধারার তারকার শক্তি তৈরির মূল উৎস। কার্বনচক্রে একটি কার্বন-১২ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে একটি প্রোটনের সংঘর্ষের ফলে একটি নাইট্রোজেন-১৩ নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। নাইট্রোজেন-১৩ নিউক্লিয়াস থেকে পজিট্রন নির্গত হয়ে তা কার্বন-১৩ নিউক্লিয়াসে পর্যবসিত হয়। তারপর কার্বন-১৩ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে প্রোটনের সংঘর্ষের ফলে নাইট্রোজেন-১৪ এবং ওই নাইট্রোজেন-১৪ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে প্রোটনের সংঘর্ষের ফলে অক্সিজেন-১৫ নিউক্লিয়াস তৈরি হয়। অক্সিজেন-১৫ পজিট্রন নিঃসরণ করে নাইট্রোজেন-১৫ এবং নাইট্রোজেন-১৫ নিউক্লিয়াসের সঙ্গে প্রোটনের সংঘর্ষের ফলে কার্বন-১২ এবং একটি আলফা-কণা (হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) তৈরি হয়। কিন্তু হাজারে একটা সংঘর্ষে নাইট্রোজেন-১৫ নিউক্লিয়াস থেকে অক্সিজেন-১৬ নিউক্লিয়াস এবং আরো দুবার সংঘর্ষের ফলে একটি নাইট্রোজেন-১৪ নিউক্লিয়াস এবং আলফা কণা তৈরি হতে পারে।
কার্বন-চক্র
cl2 + H1→ N13 + গামারশ্মি
N13 → Cl3 + পজিট্রন + নিউট্রিনো
cl3 + H1→ N14 + গামা
N14 + H1 → O15 + গামা
Ol5 → N15 + পজিট্রন + নিউট্রিনো
N15 + H1 → Cl2 + He4
এবং হাজারে একবার,
N15 + H1 → Ol6 + গামা।
O16 + F1 → F17 + গামা
F17 → Ol7 + পজিট্রন + নিউট্রিনো
Ol7 + H1 → N14 + He4
মোট ফল : 4H1 → He4
এভাবে ৪টি প্রোটন সংশ্লেষণ করে একটি আলফা-কণা তৈরি এবং প্রচুর পরিমাণে শক্তি নির্গত হয়। চক্রের শেষে কার্বন-১২ নিউক্লিয়াস ফিরে পাওয়া যায় অর্থাৎ কার্বন-১২ নিউক্লিয়াস আসলে সংশ্লেষণ বিক্রিয়ার অনুঘটকের ভূমিকা পালন করে।
কিছুদিন পরে বেথে এবং ক্রিচফিল্ড (Charles Louis Critchfield) সংশ্লেষণের একটি বিকল্প পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এটাকে বলে প্রোটন-প্রোটন চক্র (proton–proton chain or p–p chain)। এই চক্রে প্রোটন থেকে প্রথমে ডিউটোরিয়াম, তারপর হিলিয়াম-৩ এবং তারপর হিলিয়াম-৪ তৈরি হয়।
প্রোটন-প্রোটন চক্র
H1 + H1 + পজিট্রন + নিউট্রিনো
D2 + H3 → He3 + গামা
He3 + He3 → He4H1
অথবা,
He3 + He4 →Be7 + গামা
Be7 + e → Li7 + গামা + নিউট্রিনো
Li7 + H → 2He4
অথবা,
Be7+ H1 → B৪ + গামা
B৪ → Be8 + পজিট্রন + নিউট্রিনো
Be8 →2He4
তারকার অভ্যন্তরে তাপ এবং চাপের যে অবস্থা তাতে এইসব বিক্রিয়াই সম্ভব। আমাদের সূর্যের অভ্যন্তরে শক্তি তৈরির প্রধান পদ্ধতি প্রোটন-প্রোটন চক্র বলে মনে করা হয়, যা দেড় কোটি কেলভিন তাপমাত্রায় সংঘটিত হয়। সূর্যের চাইতে আরো ভারি তারার তাপমাত্রা দুই কোটি কেলভিন এবং সেক্ষেত্রে কার্বনচক্র হলো শক্তি তৈরির মূল উৎস।
পৃথিবীর বুকে প্লাজমার মাধ্যমে এইসব সংশ্লেষণ বিক্রিয়া ঘটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বহুদিন যাবৎ। এই প্রচেষ্টা সফল হলে মানুষের শক্তির সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে বেথে তাঁর অসাধারণ জ্ঞানভাণ্ডার ফলিত সমস্যা সমাধানের কাজে লাগান। প্রথমে তিনি এম আইটি’র রেডিয়েশন গবেষণাগারে রেডার সমস্যা নিয়ে কাজ করেন। পরে তিনি লস এলামস গবেষণাগারের তাত্ত্বিক বিভাগের প্রধান হিসেবে পারমাণবিক বোমা তৈরির কাজে অংশগ্রহণ করেন।
যুদ্ধের পরে হ্যান্স বেথের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো ল্যাম্ব-সরণ (Lamb shift)-এর গণনা। ১৯৪৭ সালে ল্যাম্ব (Willis Eugene Lamb Jr.) এবং রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford) এক অতি সূক্ষ্ম পরীক্ষণের মাধ্যমে হাইড্রোজেন পরমাণুর 2s (1/2) এবং 2p (1/2) অবস্থার শক্তিপার্থক্য নির্ণয় করেন। ডিরাকের (Paul Adrien Maurice Dirac) তত্ত্বে এই দুই অবস্থা একই শক্তির, কিন্তু পরীক্ষণের ফলে দেখা গেল যে, তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো ১০৬০ মেগাসাইকলস/সেকেন্ড। ওই সময়ে শেল্টার দ্বীপে এক সম্মেলনে এই পরীক্ষাই প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল। তাত্ত্বিকভাবে এই শক্তি পার্থক্য গণনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। কেননা, এটা গণনা করতে গেলেই ইলেকট্রনের স্বীয়-শক্তি (self energy) এসে যায়, যা অসীম। ক্র্যামারস (John Gleason Cramer, Jr.) প্রস্তাব করলেন যে, যেহেতু বিদ্যুৎ চৌম্বকক্ষেত্রের সঙ্গে বিক্রিয়ার ফলে ইলেকট্রনের ভর অসীম হয়ে যায়, তাই ওই ভরকে পুনঃসাধারণীকরণ করা উচিত। অর্থাৎ অসীম রাশিটি অন্তর্ভুক্ত করে ভরের সংজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন।
শেল্টার দ্বীপ থেকে ফেরার পথে ট্রেনের মধ্যে বসে এই ধারণা ব্যবহার করে গণনাটি করে ফেললেন। তিনি লিখেছেন, “আমার অবশ্য ভয় ছিল যে, ইলেকট্রন আর বিদ্যুৎচৌম্বকক্ষেত্রের বিক্রিয়া লেখার সময় হয়তো কোনো উৎপাদন লিখতে ভুল করে ফেলেছি--ট্রেনের মধ্যে এসব উৎপাদক তো আর ঠিক মনে রাখা যায় না।”
কিন্তু তার ভুল হয়নি এবং তাঁর উত্তর ১০৬০ মেগাসাইকলস/সেকেন্ড সকলের কাজে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হয়েছিল। এই গণনাই পরে আপেক্ষিক তত্ত্বসম্মতভাবে করে সুইংগার (Julian Seymour Schwinger), ফাইনম্যান (Richard Phillips Feynman) এবং টোমোনাগা (Shinichiro Tomonaga) নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
পরবর্তীকালে হ্যান্স বেথে প্রধানত অসীম নিউক্লিয়ার বস্তু (infinite nuclear matter) নিয়ে গবেষণা করেছেন। কেননা, তার ভাষায় উচ্চশক্তির পদার্থবিজ্ঞান তাঁর মতো একজন বৃদ্ধ ব্যক্তির জন্য নয়। অসীম নিউক্লিয়ার বস্তু বাঁধুনি শক্তি ১৬ এমইভি, কিন্তু বেথের তত্ত্বে ১৩.৫ এমইভি পর্যন্ত পাওয়া যায়। সসীম নিউক্লিয়ার বস্তু নিয়েও তিনি কাজ করেছেন এবং উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। আশ্চর্য এই যে, আটাশি বছর বয়সেও হ্যান্স বেথে মৌলিক গবেষণায় প্রথম শ্রেণীর অবদান রেখে যাচ্ছেন। ২০০৫ এর মার্চ মাসের ৬ তারিখ এই বিজ্ঞানী পরলোকগমন করেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন