শুক্রবার, ৭ জানুয়ারী, ২০২২

লুই দ্য ব্রগলি এবং কণা-তরঙ্গ দ্বৈতবাদ (Louis de Broglie and Wave–particle duality)

লুই দ্য ব্রগলি এবং কণা-তরঙ্গ দ্বৈতবাদ, Louis de Broglie and Wave–particle duality,লুই দ্য ব্রগলির জীবনী
লুই দ্য ব্রগলি এবং কণা-তরঙ্গ দ্বৈতবাদ, Louis de Broglie and Wave–particle duality,লুই দ্য ব্রগলির জীবনী

লুই দ্য ব্রগলি এবং কণা-তরঙ্গ দ্বৈতবাদ (Louis de Broglie and Wave–particle duality)

১৯২০ সালের দিকে এই গল্পের শুরু। শতাব্দীর প্রথম দশকে পদার্থবিজ্ঞানে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হয়েছে জে. জে. থমসন (Sir Joseph John Thomson) ইলেকট্রন আবিষ্কার করেছেন, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max Karl Ernst Ludwig Planck) কোয়ান্টাম তত্ত্ব প্রবর্তন করেছেন, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন আলোককণা বা ফোটনের অস্তিত্ব অনুমান করে আলোকবিদ্যুৎ ব্যাখ্যা করেছেন, আর্নস্ট রাদারফোর্ড পরমাণুর অভ্যন্তরে কেন্দ্রিনের ধারণা সৃষ্টি করেছেন এবং নীলস বোর এই ধারণা ব্যবহার করে পরমাণু থেকে কেমন করে বিকিরণ নিঃসরণ হয় তার তত্ত্ব দিয়েছেন। কিন্তু এর প্রত্যেকটাই বিচ্ছিন্ন প্রতিভাসের বিচ্ছিন্ন সমাধান! প্রতিটি উত্তর থেকে আরো প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি উলফগ্যাং পাউলি (Wolfgang Ernst Pauli) পর্যন্ত বলতে বাধ্য হয়েছেন, এখন পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থা খুবই জটিল; অন্তত আমার পক্ষে বোঝা এটা খুবই শক্ত। চলচ্চিত্রের কমেডিয়ান বা ওই ধরনের কিছু আমার হওয়া উচিত ছিল; পদার্থবিজ্ঞানের কোনো কিছু না শুনলেই ভালো হতো।  

কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই অবস্থার সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেল। ১৯২৩ সালের অগ্রগতির প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন লুই দ্য ব্রগলি। এই ফরাসি বিজ্ঞানী শুরু করেছিলেন মধ্যযুগের ইতিহাস পড়তে, কিন্তু মাঝপথে বিষয় পরিবর্তন করে এসে গেলেন পদার্থবিজ্ঞানে। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় তিনি বেতার নিয়েও কাজ করেছিলেন। ১৯১৪ সালের আগে দ্য ব্রগলি আপেক্ষিক তত্ত্বের দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি লিখেছেন, দীর্ঘকাল অনুপস্থিত থাকার পর প্রথম মহাযুদ্ধের শেষে আমি যখন আরো কিছু পরিণত অবস্থায় আবার লেখাপড়ায় ফিরে এলাম তখন আইনস্টাইনের ধারণাগুলোই আমাকে প্রভাবিত করেছিল সবচেয়ে বেশি।

১৯১৯ সালে ফরাসি সৈন্যদলের দীর্ঘ দায়িত্ব পালন শেষ করে তিনি তাঁর বড় ভাই মরিস দ্য ব্রগলির গবেষণাগারে এসে যোগ দিলেন। এখানে সে সময়ে রঞ্জনরশ্মি নিয়ে কেলাসতত্ত্বের উপর প্রচুর কাজ হচ্ছিল। ১৯২৪ সালে এখানেই গবেষণা করতে এসেছিলেন ঢাকার সত্যেন্দ্রনাথ বসু (Satyendra Nath Bose)। এখানে লুই দ্য ব্রগলি আলোর প্রকৃতি নিয়ে মৌলিক প্রশ্নের সম্মুখীন হলেন। আইনস্টাইন আলোককণার ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন, কিন্তু তখনও তা সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি। একটি প্রবন্ধে দ্য ব্রগলি আলোককণার ধারণা ব্যবহার করে বিকিরণের অবস্থা-ঘনত্ব গণনা করলেন। সত্যেন বসুও একই সময় ঢাকায় বসে একই গণনা করেছিলেন। অবশ্য বসু এছাড়াও আলোককণার পরিসংখ্যান সৃষ্টি করেছিলেন, যা বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান নামে বিখ্যাত।

কিন্তু লুই দ্য ব্রগলি অন্য একটি ধারণার জন্য বিখ্যাত, যা হলো তরঙ্গ ও কণার দ্বৈত সত্তার ধারণা। তার এই নীতি অনুসারে প্ল্যাঙ্কের ধারণা মতো শুধু আলোই যে তরঙ্গ এবং কণা উভয় প্রকৃতির তা নয়। বস্তুকণাও তরঙ্গ-প্রকৃতি দেখায়। অর্থাৎ একটি ইলেকট্রন শুধু কণাই নয়, এটি একটি তরঙ্গও বটে। এটাই হলো কণা-তরঙ্গের দ্বৈতবাদ, যার স্রষ্টা লুই দ্য ব্রগলি।

নিউটনের পর থেকে সকলে আলোর কণাতত্ত্বেই বিশ্বাস করতেন। কিন্তু অষ্টাদশ শতকের তরঙ্গ তত্ত্বই প্রধান হয়ে ওঠে। ঊনবিংশ শতক ছিল ম্যাক্সওয়েলের তরঙ্গ..তত্ত্বের জয়জয়কারের সময়। সুতরাং বিংশ শতকে আবার আলোককে কণা হিসেবে কল্পনা করার মধ্যে একটি প্রতিবিপ্লবী সুর হয়তো আছে, কিন্তু এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না।

আলোক যে তরঙ্গ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হলো এই যে, দুটি আলোকরশ্মি একত্রিত করলে শুধু যে উজ্জ্বলতর আলোর সৃষ্টি হয় তাই নয়, কোথাও কোথাও অন্ধকারেরও সৃষ্টি হয়। আলোক মিলে অন্ধকার এই প্রতিভাস নিউটনের মতো আলোক কে কণা হিসেবে কল্পনা করলে কখনোই ব্যাখ্যা করা যায় না। দু'টি আলোকরশ্মি এক করে যে কোথাও আলোক আর কোথাও অন্ধকার সৃষ্টি হয় এই ঘটনাকে বলে ব্যতিচার এবং তার একমাত্র ব্যাখ্যা হলো আলোককে তরঙ্গ হিসেবে কল্পনা করা। এই ব্যতিচার ঘটিয়েই হাইনরিখ হার্জ (Heinrich Rudolf Hertz) প্রমাণ করেছিলেন যে, ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎচৌম্বকতরঙ্গ আসলে একটি সঠিক তত্ত্ব। এরপর থেকে সকলেই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, আলোক বিদ্যুৎচৌম্বক তরঙ্গ ছাড়া আর কিছু নয়।

দেড়শ বছর ধরে কণাতত্ত্ব আর মাথা তুলতে পারেননি। এতদিন মাথা নুইয়ে থাকার পর কণাতত্ত্বের পক্ষে তরঙ্গকে সরাসরি আক্রমণ করা সম্ভব ছিল।

তাই তাকে এমন এক জায়গায় আঘাত করতে হলো, যেখানে তরঙ্গের ক্ষমতা পৌঁছায় না। এ ধরনের সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা হলো আলোক-বিদ্যুৎ প্রতিভাস (Photo-electric effects)। ধাতুর উপর আলোক ফেলা হলে দেখা যায় যে, ইলেকট্রন-কণা নির্গত হয়। এই ঘটনা আলোক তরঙ্গ হলে মোটেই ব্যাখ্যা করা যায় না। সমুদ্রের ধারে এক সারি বোতল খাড়া করে রেখে আপনি একটু হাঁটতে যান। ফিরে এসে দেখবেন কয়েকটা ছাড়া সবগুলো বোতল আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি একটা বিশাল তরঙ্গ এসে শুধু কয়েকটি বোতলকেই ফেলে দিয়েছে? এটা তো মোটেই সম্ভব নয়। আসলে মনে হয় কোনো ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়ে নুড়ি মেরে কয়েকটি বোতলকে ফেলে দিয়েছে। একইভাবে অতিবেগুনি আলো কোনো ধাতুর পৃষ্ঠদেশে পড়লে তার সব জায়গা থেকে ইলেকট্রন ধাক্কা দিয়ে বার করে দেয় না, শুধু কোনো কোনো জায়গা থেকে ইলেকট্রন ধাক্কা খেয়ে বার হয়। আলো তরঙ্গ হলে এটা সম্ভব হতো না। সুতরাং আলোক-বিদ্যুৎ প্রতিভাস থেকে বলা যায় যে, আলো কণা দিয়ে তৈরি।

ব্যতিচার থেকে আলো তরঙ্গ আবার আলোক-বিদ্যুৎ থেকে আলো কণা এ কথাই এখন বলতে হয়। অথচ তরঙ্গ এবং কণা দুটো পরস্পরবিরোধী ধারণা; তরঙ্গ বহুদূর বিস্তৃত, কিন্তু কণা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। আলোক তরঙ্গ এবং কণা দুটোই একই সময়ে কেমন করে হয়?

তরঙ্গ এবং কণার এই যুদ্ধে কোনো পক্ষই শেষ পর্যন্ত জয়ী হতে পারেনি। আলোক কণা মোটেই তরঙ্গের জগৎ দখল করে নিতে পারেনি। তরঙ্গও আলোক কণাকে তার নিজস্ব জগৎ থেকে হটাতে পারেনি। একটা অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল -- একই সঙ্গে আলোককে কণা ও তরঙ্গ দুভাবে কল্পনা করা প্রয়োজন হয়ে পড়ল। যেন সোমবার, বুধবার আর শুক্রবারে আলোক হলো তরঙ্গ এবং মঙ্গলবার, বৃহস্পতিবার আর শনিবারে আলোক হলো কণা। রবিবার শুধু প্রার্থনার সময়। কিন্তু কণা তো তরঙ্গ হতে পারে না, আবার তরঙ্গও কণা হতে পারে না। কেমন করে আলোক কখনও তরঙ্গ, কখনও কণা হিসেবে আচরণ করতে পারে?

১৯১৯ সালের দিকে আইনস্টাইন এই সমস্যার একটা সমাধানের আভাস পেয়েছিলেন। তাপীয় বিকিরণের শক্তিবিক্ষোভের উপর এক কাজে তিনি দেখেন যে, তাঁর সমীকরণের একটা অংশ তরঙ্গ-প্রকৃতির এবং অন্য অংশটি কণা প্রকৃতির। উভয়ই সহাবস্থান করছে স্বচ্ছন্দে। তাই তিনি ওই সময়েই লিখেছিলেন, আমার মত হলো এই যে, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের পরবর্তী পর্যায়ে আমরা এমন একটি তত্ত্ব পাব, যেখানে তরঙ্গ এবং কণা-প্রকৃতির এক ধরনের সমন্বয় সম্ভব হবে।

এই সমন্বয় সম্ভব করেছিলেন লুই দ্য ব্রগলি। তাঁর সমাধান ছিল যেমন সহজ তেমনি যুগান্তকারী। তার তত্ত্ব হলো এই যে, দ্বৈত প্রকৃতি শুধু যে আলোর ক্ষেত্রেই সত্যি তা নয়, কণার ক্ষেত্রেও তা সত্যি। তার ভাষায়, একাকী গভীর চিন্তার মাধ্যমে আমি হঠাৎ ১৯২৩ সালে এই ধারণায় উপনীত হলাম যে, ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন যে আবিষ্কার করেছিলেন তা সাধারণীকৃত করে সব বস্তুকণা, বিশেষ করে, ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করতে হবে।

অর্থাৎ আলো যে তরঙ্গ এবং কণা উভয় প্রকৃতির তাই নয়, যে কোনো বস্তুকণারও তরঙ্গ প্রকৃতি থাকবে। আমার হঠাৎ প্রেরণা এসে গেল। আইনস্টাইনের তরঙ্গ-কণা দ্বৈততা আসলে ভৌত প্রকৃতির সবকিছুর ক্ষেত্রেই সাধারণভাবে প্রযোজ্য। সুতরাং বস্তুকণা, ফোটন, ইলেকট্রন, প্রোটন বা সবকিছুর ক্ষেত্রে তাদের গতির সঙ্গে এক তরঙ্গ প্রবাহের সংযোজন করা প্রয়োজন।

১৯২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে লুই দ্য ব্রগলি তার এই ধারণা প্রকাশ করেন। সহজভাবে বলা যায় যে, শক্তি == প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক x কম্পাঙ্ক। বোর-আইনস্টাইনের এই সমীকরণ শুধু যে আলোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা নয়, তা ইলেকট্রনের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা যাবে। এ জন্য ইলেকট্রনের সঙ্গে একটি তরঙ্গ জড়িত রয়েছে তা কল্পনা করতে হবে। ইলেকট্রনের ভরবেগ পাওয়া যাবে, ভরবেগ = প্ল্যাঙ্ক ধ্রুবক x তরঙ্গসংখ্যা - এই সমীকরণ থেকে। এই দুই সমীকরণের বামদিকে রয়েছে কণা প্রকৃতির ধারণা এবং ডানদিকে রয়েছে তরঙ্গ প্রকৃতির বৈশিষ্ট্য।

১৯২৩ সালে প্রকাশিত তিনটি প্রবন্ধে দ্য ব্রগলি বস্তুকণার সঙ্গে তরঙ্গ প্রকৃতি জড়িত করার এই প্রস্তাব করেছিলেন শুধু মেধাভিত্তিক সৌন্দর্য রক্ষার খাতিরে। তিনি লিখেছেন, তারপর কয়েক মাস আমার এই ধারণা সম্প্রসারণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম আমার ডক্টরেট থিসিস কাজের জন্য। এটা করার আগে আমি পল লাঞ্জেভাকে (Paul Langevin) আমার সিদ্ধান্তসমূহ পরীক্ষা করতে বলেছিলাম। তিনি কোয়ান্টাম তত্ত্ব এবং আপেক্ষিক তত্ত্ব ভালোভাবে জানতেন। তিনি আইনস্টাইনের কাছে পাঠানোর জন্য দ্বিতীয় একটি কপি চাইলেন। আইনস্টাইন দ্রুত বুঝতে পারলেন যে, তাঁর আলোককণা তত্ত্বের এই সাধারণীকরণ পরমাণু বিজ্ঞানে সম্পূর্ণ নতুন দিগন্ত খুলে দেবে এবং তিনি লাঞ্জেভাকে জানালেন যে, আমি বিশাল যবনিকার একটা কোণা তুলে ফেলতে সক্ষম হয়েছি।  

১৯২৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত তাঁর দ্বিতীয় প্রবন্ধে দ্য ব্রগলি তার কণাতরঙ্গের ধারণা কীভাবে পরীক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে তার ব্যাখ্যা দিলেন। একটি ছিদ্র দিয়ে যদি ইলেকট্রনের ধারা পাঠানো যায়, তাহলে ইলেকট্রনের তরঙ্গ অপবর্তন (diffraction) প্রতিভাস দেখাবে। অবশ্য ছিদ্রের আকার ইলেকট্রনের তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যের কম হতে হবে। পরবর্তীকালে আমেরিকায় ডেভিসন (Clinton Joseph Davisson) এবং গার্মার (Lester Halbert Germer) আর ইংল্যান্ডে জি. পি. টমসন (Sir George Paget Thomson) ইলেকট্রনের অপবর্তন সুপ্রতিষ্ঠিত করেন।  

অনেককাল পরে লুই দ্য ব্রগলি আব্রাহাম পায়েসকে (Abraham Pais) জানিয়েছেন, ১৯২৩ সালে আমি যখন থিসিসের পাণ্ডুলিপি রচনা করি, যা আমি বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রির জন্য দাখিল করব আশা করছিলাম, তখন আমি তিনটি কপি টাইপ করিয়েছিলাম। এর একটি আমি লাঞ্জেভকে (Paul Langevin) দেই, যাতে তিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, অভিসন্দর্ভটি গ্রহণ করা যায় কিনা। বোধ হয় আমার ধারণাগুলোর অভিনবত্ব দেখে লাঞ্জেভ বেশ আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি আর একটি কপি চাইলেন, যা তিনি আইনস্টাইনের কাছে পাঠাতে পারেন। আইনস্টাইন আমার কাজটি পড়ে বলেছিলেন যে, আমার ধারণা তাকে অত্যন্ত আকৃষ্ট করেছে। এর ফলেই লাঞ্জেভ আমার থিসিস গ্রহণ করতে রাজি হন।  

সুতরাং আইনস্টাইন যে কোয়ান্টাম তত্ত্বের অন্যতম জনক ছিলেন তাই নয়, তিনি কোয়ান্টাম বলবিদ্যারও একমাত্র প্রপিতামহও ছিলেন বলা যায়। কেননা, দ্য ব্রগলির কণাতরঙ্গের ধারণা ব্যবহার করেই পরবর্তীকালে এরউইন শ্রোডিঞ্জার কোয়ান্টাম তরঙ্গ-বলবিদ্যা সৃষ্টি করেন।

আইনস্টাইন লোরেনৎসের (Hendrik Antoon Lorentz) কাছে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, মরিস দ্য ব্রগলির এক ছোট ভাই একটা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে, যা দিয়ে বোর-সমারফেল্ডের কোয়ান্টাম সূত্রগুলোর ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব হবে। আমার মনে হয় আমাদের পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে দুর্বোধ্য রহস্যের ওপর এটাই প্রথম ক্ষীণ আলোকপাত।

এই ক্ষীণ আলোকরশ্মি পরে শ্রোডিঞ্জারের হাতে উজ্জ্বলতম মশাল হয়ে দাঁড়ায়। শ্রোডিঞ্জার দ্য ব্রগলি-আইনস্টাইনের চলমান বস্তুকণার তরঙ্গ প্রকৃতিকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কোয়ান্টাম তরঙ্গ বলবিদ্যা সৃষ্টি করেছিলেন এটা তাঁর নিজেরই কথা।।

কিন্তু বস্তুকণার সঙ্গে জড়িত তরঙ্গের তাৎপর্য কী?

এই তাৎপর্য নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সত্যিকারের তাৎপর্য আইনস্টাইন সারাজীবন বুঝতে চেষ্টা করেছেন। তাঁর সঙ্গে এ ব্যাপারে হাইজেনবার্গ, বোর, বর্ন এবং অন্যান্য পদার্থবিজ্ঞানীর ঐকমত্য হয়নি। লুই দ্য ব্রগলিও তাঁর সৃষ্ট তরঙ্গ-কণার দ্বৈত তত্ত্বের ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করেছেন যা বেশিরভাগ পদার্থবিজ্ঞানী গ্রহণ করেননি। তরঙ্গকণার সত্যিকারের জ্ঞানতাত্ত্বিকের ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে এমন দাবি করার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু তবু লুই দ্য ব্রগলির এই যুগান্তকারী কাজের জন্য ১৯২১ সালে তাঁকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। 

ট্যাগসঃ লুই দ্য ব্রগলি এবং কণা-তরঙ্গ দ্বৈতবাদ, Louis de Broglie and Wave–particle duality,লুই দ্য ব্রগলির জীবনী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন