বৃহস্পতিবার, ৬ জানুয়ারী, ২০২২

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর জীবনী এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব যেভাবে এলো – The Quantum Theory and Life of Max Planck

 

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর জীবনী এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব যেভাবে এলো – The Quantum Theory and Life of Max Planck  - Biography of  Max Planck
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর জীবনী এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব যেভাবে এলো – The Quantum Theory and Life of Max Planck  - Biography of  Max Planck

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এর জীবনী এবং কোয়ান্টাম তত্ত্ব যেভাবে এলো Life of Max Planck  and The Quantum Theory

ষোল বছর বয়স্ক ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (Max Karl Ernst Ludwig Planck) ১৮৭৪ সালে জিমনাসিয়াম পরীক্ষায় (আবিটুর) উত্তীর্ণ হওয়ার পর খোঁজ করেছিলেন পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যত কেমন হবে। মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পরামর্শদাতা তাঁকে জোরের সঙ্গে পদার্থবিজ্ঞানে ঢুকতে নিষেধ করলেন। কেননা যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তা এর মধ্যেই আবিষ্কার করা হয়ে গিয়েছে, আর এখানে সেখানে দুএকটা ফাক যা আছে তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। ফিলিপ ভন জলি কেবল একলাই যে এ ধরনের চিন্তা করতেন তা নয়। বার্লিনের বিখ্যাত শারীরতত্ত্ববিদ এমিল দ্যু বোয়ারেমন্ড মনে করতেন, শক্তি সংরক্ষণের নীতি পদার্থবিজ্ঞানের চূড়ান্ত এবং সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত এবং এর বেশি আর বিশেষ কিছু করা যাবে না।  

১৮৭৯ সালের জুন মাসে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাঁর পিএইচ. ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। মনে রাখা দরকার যে, ওই বছরই অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, অটো হান এবং ম্যাক্স ভন লাউএ (Max Theodor Felixvon Laue) জন্মগ্রহণ করেন (১৪ মার্চ, ৮ মার্চ এবং ৯ অক্টোবর)। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এক সময়ে রসিকতা করে বলেছিলেন যে, ১৮৭৯ সালে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তারা বিশেষ করে পদার্থবিজ্ঞানের জন্যই পৃথিবীতে এসেছিলেন। কিন্তু সেই নতুন পদার্থবিজ্ঞান সৃষ্টি করার প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক।

পি. এইচ. ডি. করার পর তাঁর বিখ্যাত কাজটি করার আগে প্ল্যাঙ্ক প্রায় চল্লিশটা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। এ সময়ে তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল তাপ তত্ত্ব। সুতরাং কোয়ান্টাম-তত্ত্ব আবিষ্কারের আগেই তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছিলেন। কিন্তু কোয়ান্টাম ধারণা প্রবর্তন করার সময়ে এটা ঠিক যে, প্র্যাঙ্ক ঠিক সময়ে ঠিক জায়গাটিতে ছিলেন। সময় ১৮৯০ সাল। স্থান বার্লিন। এখানেই কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের বর্ণালি বণ্টনের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ পরীক্ষণ চলছিল। এখানেই ১৯০০ সালের অক্টোবর মাসে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক তার বিস্ময়করভাবে সার্থক কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের ফর্মুলাটি পেলেন, যা কম্পাঙ্ক এবং তাপমাত্রার আপেক্ষিক হিসেবে বর্ণালির শক্তি বণ্টন প্রকাশ করে। কিন্তু সেটাই শেষ নয়, বরং এখান থেকেই এই সাহসী যুগের গৌরবময় যাত্রা শুরু। প্রথমে প্ল্যাঙ্ক অনুপ্রাণিত অনুমানের সাহায্যে একটি ফর্মুলা লিখলেন, যাকে আজকাল প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ ফমুর্লা বলে এবং যা দিয়ে পরীক্ষার ফল সঠিকভাবে প্রকাশ করা যায়। কিন্তু শুধু অনুমান করেই শান্ত থাকার মানুষ তিনি ছিলেন না। তিনি এই ফর্মুলার মূল ভিত্তিভূমি খুঁজতে শুরু করলেন। দু' মাসের মধ্যেই তিনি একটা নতুন অনুমানের সাহায্যে বিকিরণ ফর্মুলাটি নির্ধারণ করতে সক্ষম হলেন। এটাই সেই বিখ্যাত কোয়ান্টামের ধারণা, যা চিরায়ত বলবিদ্যার সম্পূর্ণ পরিপন্থী এবং যা দিয়ে বিংশ শতাব্দীর বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের শুরু।

বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানে সবচেয়ে বৈপ্লবিক আবিষ্কার কোনটি? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে অনেকেই নির্দ্বিধায় ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের কোয়ান্টাম ধারণা প্রবর্তনের কথা বলবেন। এই একটি ধারণা বিজ্ঞানের চেহারা আমূল পাল্টে দিয়েছে এবং আজকের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মূলে রয়েছে এই কোয়ান্টামের ধারণা।

ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এই ধারণার প্রথম পদক্ষেপটি নিয়েছিলেন ১৯০০ সালের ৭ অক্টোবর রবিবার সন্ধ্যায়। তখন তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক (প্রফেসর এক্সট্রাঅর্ডিনারিয়াস)। তার পরীক্ষণ সহকর্মী হাইনরিখ রুবেন্স স্ত্রীকে সঙ্গে করে ওই দিন বিকেলে প্ল্যাঙ্কের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। কথা প্রসঙ্গে রুবেন্স উল্লেখ করলেন যে, তার পরীক্ষণে দেখা যায় যে কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের বর্ণালি ঘনত্ব (প্রতি একক আয়তনে শক্তি ঘনত্ব) তাপমাত্রার সমানুপাতিক, যদি অবশ্য কম্পাঙ্ক খুব কম নেয়া হয়। এটা র‍্যালে-জীনস্ এর সূত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, কিন্তু ভিনের সূত্রের সঙ্গে মোটেই মেলে না। অন্যদিকে কম্পাঙ্ক বড় হলে ভিনের সূত্র যে সার্থক তাও এর আগে পরীক্ষণবিদ ফ্রিডরিশ প্যাশেন প্রমাণ করেছেন। সুতরাং কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের বর্ণালি ঘনত্ব ব্যাখ্যা করতে দুটো পরস্পর বিরোধী সমীকরণ প্রয়োজন হয় বলে মনে হয়। এই সমস্যার সমাধান কী?

অতিথিরা বিদায় নেয়ার পর প্ল্যাঙ্ক কাজে বসে গেলেন এবং সেই সন্ধ্যায়ই একটা ফর্মুলা পেয়ে গেলেন, যা বড় এবং ছোট কম্পাঙ্কের দুই আসন্ন মানে দু রকম ব্যবহার করে। ওই সন্ধ্যায়ই একটা পোস্টকার্ডে তিনি ফর্মুলাটি রুবেন্সকে পাঠিয়ে দিলেন এবং অক্টোবরের ১৯ তারিখ এক বৈজ্ঞানিক আলোচনায় তা জনসমক্ষে প্রকাশ করলেন। এভাবেই কোয়ান্টাম ধারণা সৃষ্টির প্রথম পদক্ষেপটি নেয়া হলো। এই আবিষ্কারের গুরুত্ব বুঝতে হলে মনে রাখতে হবে যে, ঊনিশ শতকের শেষের দিকে পদার্থবিজ্ঞানীদের একটা ধারণা হয়েছিল যে, পদার্থবিজ্ঞানে মৌলিক সূত্র সব আবিস্কৃত হয়ে গিয়েছে। যা বাকি আছে, তা হলো আরো পরীক্ষণের মাধ্যম সবকিছু নিখুঁত করে তোলা। কিন্তু মনে করা হতো যে, পরীক্ষণের যন্ত্র যতই উন্নতমানের করা হোক না কেন, নতুন কোনো তত্ত্ব আর আবিষ্কার করা যাবে না। জ্যোতির্বিদরা সব কিছু নিউটনের অভিকর্ষ তত্ত্ব দিয়েই ব্যাখ্যা করা যাবে বিশ্বাস করা হতো, যদিও বুধগ্রহের গতি ঠিক নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না। বিকিরণের সব সমস্যাই ম্যাক্সওয়েলের সমীকরণের মাধ্যমে সমাধান করা যাবে বিশ্বাস করা হতো, যদিও কী প্রক্রিয়ায় বস্তু বিকিরণ নিঃসরণ বা শোষণ করে জানা ছিল না। মজার ব্যাপার এই যে, ওই সময়েই পদার্থবিজ্ঞানীরা একটা উত্তপ্ত আবদ্ধ আধারের দেয়াল থেকে নিঃসৃত বিকিরণের প্রকৃতি বুঝতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হচ্ছিলেন। আপাতদৃষ্টিতে এই সমস্যাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হবে না। কিন্তু এটাই সেই হিমশৈল, যার গায়ে আঘাত লেগে চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের জাহাজটি ভেঙে চুর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল।

এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়েই ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক (১৮৫৮-১৯৪৭) কাজের কোয়ান্টামের ধারণা প্রবর্তন করেন। সমস্যাটা কী বোঝার জন্য লক্ষ্য করা দরকার যে, কোনো বস্তু উত্তপ্ত করলে তার থেকে তাপশক্তি নির্গত হয়। তাপমাত্রা যত বাড়ে, প্রতি সেকেন্ডে নির্গত শক্তিও তত বাড়ে। শুধু তাই নয়, নিঃসৃত বিকিরণের প্রকৃতিও লক্ষণীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে রঙ পরিবর্তিত হয়ে হলুদ এবং সবশেষে নীলাভ সাদা রঙে পর্যবসিত হয়।

উনিশ শতকের শেষে গুস্তাফ কার্শফ (Gustav Robert Kirchhoff), লর্ড র‍্যালে (John William Strutt, 3rd Baron Rayleigh), জেমস্ জিনস্ (Sir James Hopwood Jeans) এবং ভিলহেলম্ ভিন (Wilhelm Carl Werner Otto Fritz Franz Wien) বিকিরণের বেশিরভাগ গুণ বিদ্যুৎচৌম্বকতত্ত্ব এবং তাপগতিবিদ্যা থেকে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু একটা মৌলিক ব্যাপার কিছুতেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হচ্ছিল না, তা হলো নিঃসৃত শক্তির বর্ণালি বণ্টন। অর্থাৎ কৃষ্ণবস্তু থেকে নিঃসৃত বিকিরণকে তার বিভিন্ন উপাংশে বিশ্লেষণ করে প্রতি রঙে বিকিরণ, শক্তির পরিমাণ মাপা যায়। দেখা যায় যে, শক্তি ঘনত্ব কম্পাঙ্কের অপেক্ষক হিসেবে প্রথমে কম থেকে একটা সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়। তারপর আবার তা কমে যায়। এই ব্যাপারটা চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান থেকেই কিছুতেই ব্যাখ্যা করা যায় না। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞান অনুসারে শক্তিঘনত্ব কম্পাঙ্কের অপেক্ষক হিসেবে কেবলই বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। উত্তপ্ত আবদ্ধ আধারের ভিতরে বিকিরণের গুণ আলোচনা করার জন্য আধারের দেয়াল সরল ছন্দিত স্পন্দক নিয়ে তৈরি কল্পনা করা যায়। এই ছবি যুক্তিসঙ্গত। কেননা, কার্শফ অত্যন্ত সাধারণভাবে এর আগেই প্রমাণ করেছিলেন যে, বিকিরণ দেয়ালের বস্তুর ওপর নির্ভর করে না, শুধু তার তাপমাত্রার ওপরেই তা নির্ভরশীল। সরল ছন্দিত স্পন্দকের নকশা থেকে দেখানো যায় যে, কৃষ্ণবস্তুর নিঃসৃত শক্তি সব সম্ভাব্য তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে বণ্টিত থাকে। সামগ্রিক শক্তির একটা নির্দিষ্ট ভগ্নাংশ প্রতিটি রঙে কেন্দ্রীভূত থাকে, কিন্তু ঠিক কতটা তা নির্ভর করে আধারের তাপমাত্রা এবং বিকিরণের তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর।

সুতরাং সমস্যা হলো বিশেষ রঙে কেন্দ্রীভূত শক্তি, তাপমাত্রা এবং তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের মধ্যে একটা সম্পর্ক নির্ধারণ করা। প্ল্যাঙ্কের আশা ছিল যে, এই সম্পর্কটা তিনি চিরায়ত বিদ্যুৎচৌম্বকতত্ত্ব থেকেই আবিষ্কার করতে পারবেন। কিন্তু চিরায়ত বিদ্যুৎচৌম্বকতত্ত্বের সরল ছন্দিত স্পর্শক একই কম্পাঙ্কের বিদ্যুৎচৌম্বক বিকিরণ নিঃসরণ অথবা শোষণ করে। সুতরাং এমন কোনো উপায় নেই, যা দিয়ে ভিন্ন কম্পাঙ্কের ছন্দিত দুটো স্পন্দক পরস্পরকে প্রভাবিত করতে পারে। কিন্তু পরীক্ষণলব্ধ বিকিরণ বণ্টন পাওয়ার জন্য এমন একটা পদ্ধতি আবিষ্কার করতে হবে যাতে স্পন্দক একটা কম্পাঙ্কের বিকিরণ শোষণ করলেও সব কম্পাঙ্কের বিকিরণ নিঃসরণ করতে পারে।

অন্যভাবে বলা যায় যে, স্পন্দক যে হারে বিকিরণ শক্তি শোষণ করে এবং নিঃসৃত করে তাদের সম্পর্ক প্রতিসাম্যহীন হবে। এই ধরনের সম্পর্ককে তাপমাত্রার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারলেই সাম্যবস্থার শর্তটি পাওয়া যাবে, যার থেকে শক্তিবণ্টনের সূত্রটি আবিষ্কৃত হবে। কিন্তু মুশকিল হলো এই যে, চিরায়ত বলবিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে শক্তি নিঃসরণ এবং শোষণ অবশ্যই সম্পূর্ণরূপে প্রতিসম হতেই হবে। এই প্রতিসাম্যের জন্যই প্ল্যাঙ্ক শেষমেষ বিদ্যুৎচৌম্বক পদ্ধতি বাদ দিয়ে তাপবলবিদ্যার সূত্র নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলেন। কেননা, তিনি এইসব সূত্র আরো ভালো বুঝতেন এবং তাপবলবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র নিয়ে তিনি যথেষ্ট গবেষণাও করেছিলেন। তাপবলবিদ্যার প্রথম সূত্র হলো শক্তি সংরক্ষণের সূত্র। দ্বিতীয় সূত্রে তাপকে যান্ত্রিক শক্তিতে বা কাজে পরিণত করার শর্ত দেয়া হয়েছে। কাজকে অবশ্য সব সময়েই তাপে পরিবর্তিত করা যায়, কিন্তু উল্টোটা সত্য নয়। তাপকে বিশ্বের অন্যত্র কোনো পরিবর্তন না করে সম্পূর্ণরূপে কাজে পরিবর্তন করা যায় না। তাপবলবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র কোনো বস্তুনিচয় রেখে দিলে তা কোন দিকে পরিবর্তিত হবে অথবা তার কী অবস্থা সম্ভব এটাই নির্দেশ করে। এই সম্ভাব্য অবস্থা গণনা করার জন্য একটা অপেক্ষকের সংজ্ঞা দেয়া হয়, যাকে বলে এন্ট্রপি। এন্ট্রপি অপেক্ষক দিয়ে বস্তুনিচয়ের বিবর্তিত হওয়ার সম্ভাবনা পাওয়া যায়। কোনো অবস্থার এন্ট্রপি বেশি হওয়ার তাৎপর্য হলো বস্তুনিচয়কে ওই অবস্থায় পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গরম বস্তু থেকে শীতল বস্তুতে তাপ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সঞ্চালিত হলে এন্ট্রপি বাড়ে অর্থাৎ গরম থেকে ঠাণ্ডার দিকে তাপ যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এন্ট্রপি ধারণা প্রবর্তনের প্রথম দিকে মনে করা হতো যে, এই অপেক্ষকের কোনো পরম মান নেই। কেননা, আমরা দুটি অবস্থার এন্ট্রপির পার্থক্যই মাপতে পারি। বাস্তবিকপক্ষে শক্তির পার্থক্যকে তাপমাত্রা দিয়ে ভাগ করলে যে রাশি পাওয়া যায়, তাকেই এন্ট্রপি বলা যায়। এই সংজ্ঞার জন্যই প্ল্যাঙ্কের ধারণা হলো যে, স্পন্দকের গুচ্ছ নিয়ে তাদের এন্ট্রপি গণনা করা প্রয়োজন। কেননা, তাহলেই স্পন্দক থেকে নিঃসৃত বিকিরণের শক্তিবণ্টন পাওয়া যাবে।

এদিকে ভিলহেলম ভিন কৃষ্ণবস্তু থেকে নিঃসৃত বিকিরণের বর্ণালি বণ্টনের একটা সূত্র আবিষ্কার করেছিলেন, যা উচ্চ কম্পাঙ্কের ক্ষেত্রে সার্থক। এখন প্লাঙ্ক ভিনের সূত্রকে এন্ট্রপির সঙ্গে একত্রিত করে একটা রাশি পেলেন (তাঁর নোবেল বক্তৃতায় R), যা শক্তির সমানুপাতিক। প্ল্যাঙ্ক প্রথমে মনে করেছিলেন যে, এটাই তার ঈপ্সিত সর্বজনীন সূত্র। কিন্তু দেখা গেল তা ক্ষুদ্র কম্পাঙ্কের ক্ষেত্রে সঠিক নয়। এ সময়েই রুবেন্স তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন এবং বলেন যে, তাদের পরীক্ষায় দেখা যায় যে, ওই R রাশি শক্তির বর্গের সমানুপাতিক, যখন কম্পাঙ্ক ক্ষুদ্র। ওইদিন সন্ধ্যায় প্ল্যাঙ্ক একটা সূচক অপেক্ষকের ফর্মুলা বের করলেন। যা আসন্নমানে, ভিন এবং র‍্যালে জিনসের প্রান্তিক সূত্র দুটোই দেয়। শুধু এইটুকু করেই যদি প্ল্যাঙ্ক ক্ষান্ত হতেন তবু তাঁর নাম পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে সম্মানের সঙ্গেই উল্লিখিত হতো। কিন্তু প্ল্যাঙ্ক অত অল্পে সন্তুষ্ট হওয়ার মতো মানুষ ছিলেন না। তিনি লিখেছেন, যদিও এই বিকিরণ সূত্রটি পরমভাবে নিখুঁত বলে প্রমাণিত হয়, তবুও এটা একটা সংযোজনী সূত্র ছাড়া আর কিছুই হতো না। যা কিছুটা ভাগ্যক্রমে আন্দাজে পাওয়া গিয়েছে। এটা আমাদের অসন্তুষ্টই রেখে দিত।

সুতরাং এই সূত্রের অন্তর্নিহিত মৌলিক তাৎপর্য খোঁজাই প্ল্যাঙ্কের কাজ হয়ে দাড়াল।।

আবারো প্ল্যাঙ্ক এন্ট্রপির ধারণা থেকে শুরু করলেন। আসলে এন্ট্রপি হলো বস্তুনিচয়ের কোনো অবস্থায় থাকার সম্ভাবনা। বোলৎসমান অনেক আগেই সম্ভাবনা এবং এন্ট্রপির সঙ্গে সম্পর্কটি আবিষ্কার করেছিলেন। এন্ট্রপি এবং সম্ভাবনার এই সম্পর্ক ব্যবহার করতে হলে প্রয়োজন পরম এন্ট্রপির একটা সূত্র নির্ধারণ করা। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত এন্ট্রপি পার্থকের কথাই বলা হয়েছে, পরম এন্ট্রপির কথা নয়। সুতরাং প্ল্যাঙ্ক পরম এন্ট্রপির সংজ্ঞা এভাবে দিলেন যে, এন্ট্রপির সংজ্ঞায় একটি ধ্রুব সংখ্যা থাকবে, যা পরম তাপমাত্রায় শূন্য হয়ে যায়। কৃষ্ণবস্তু বিকিরণের বর্ণালি বণ্টনের জন্য এই নতুন এন্ট্রপির সংজ্ঞা ব্যবহার করে প্ল্যাঙ্ক। তার পুরনো সূত্রটি পেয়ে গেলেন, যা তিনি রুবেন্সকে পোস্টকার্ডের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তাঁর পদ্ধতি যে সঠিক এ সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ রইল না। কিন্তু একটা সমস্যা ছিল, যেটা মৌলিক।

প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ ঘনত্বের সূত্রে দুটো ধ্রুব সংখ্যা ছিল, যার তাৎপর্য জানা দরকার। এটা সহজেই বোঝা যায়, কেননা তা তথাকথিত বোলৎসমানের (Ludwig Eduard Boltzmann) ধ্রুবক। এটা হলো ছন্দিত স্পন্দকের গড় গতিশক্তির দ্বিগুণকে তাপমাত্রা দিয়ে ভাগ করলে যে ধ্রুব সংখ্যা পাওয়া যায় সেটাই।

কিন্তু প্ল্যাঙ্কের সূত্রের দ্বিতীয় ধ্রুবকটি অত সহজে ব্যাখ্যা করা যায় না। এই ধ্রুবকটি চিরায়ত বলবিজ্ঞানের এবং বিকিরণ তরঙ্গ-তত্ত্বের কাঠামোর মধ্যে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। অনেকটা বাধ্য হয়েই প্ল্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এই নতুন ধ্রুবকটি চিরায়ত বলবিদ্যার ব্যর্থতাই নির্দেশ করে। এই নতুন সর্বজনীন ধ্রুবককে এখন বলা হয় প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক, যার মান হলো 6.6 x 10-27 erg-sec। অর্থাৎ এটা শক্তি এবং সময়ের গুণফল, সুতরাং তা কার্যের একক। চিরায়ত বলবিজ্ঞানে কার্য একটা অবিচ্ছিন্ন রাশি যা শূন্যমান থেকে শুরু হতে পারে। কিন্তু প্ল্যাঙ্ক এখন বললেন যে, কার্যের সর্বনিম্ন মান হলো ওই ধ্রুবক, যার নিচে কার্য কখনও হতে পারে না।

এই নতুন ধ্রুবকটি তাই প্রকৃতির ঘটনা সম্বন্ধে আমাদের চিন্তাধারাই আমূল পরিবর্তন করে দিয়েছে। সব ঘটনার কার্যকারণসম্মত অবিচ্ছিন্নতা রয়েছে; এই চিরায়ত ধারণার বদলে এখন আমরা জানি যে, প্রকৃতির ঘটনার জন্য একটা কোয়ান্টাম বা বিচ্ছিন্ন বর্ণনা প্রবর্তনের প্রয়োজন। কেননা, কার্য বা অ্যাকশন হলো কোয়ান্টায়িত বা বিচ্ছিন্ন। কার্যের এই বিচ্ছিন্নতা এখন পারমাণবিক, কেন্দ্রিন এবং উচ্চশক্তির সব বিক্রিয়াতেই দেখা যায়। প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ সূত্র থেকে র‍্যালে জিনস্-এর সূত্র পাওয়া যায়, যখন প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকটিকে শূন্য করে দেয়া হয়। অর্থাৎ প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক শূন্য হলে আমরা চিরায়ত বলবিজ্ঞান ফিরে পাই। যে জগতে প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকের মান শূন্য নয় সেটাই হলো কোয়ান্টাম জগৎ, যেখানে বিকিরণের, কার্যের, শক্তির প্রকৃতি বিচ্ছিন্ন। আসলে এই কারণেই পরমাণুর বিচিত্র গঠন এবং ইলেকট্রন আর ফোটনের অস্তিত্ব সম্ভব। যদি প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকটি শূন্য হতো তাহলে পরমাণুর অস্তিত্ব সম্ভব হতো না, জৈব রসায়ন বলে কোনো কিছু থাকত না এবং জীবনও হতো অসম্ভব। কার্যের কোয়ান্টামের গুরুত্ব প্রমাণিত হয় জিন (gene)-এর আশ্চর্যজনক অবিচ্ছিন্নতা আর স্থায়িত্ব থেকে। কার্য যদি বিচ্ছিন্ন না হতো, তাহলে পরিবেশের সামান্য পরিবর্তনের ফলেই জেনেটিক গঠন পরিবর্তিত হয়ে যেত। কিন্তু কার্যের কোয়ান্টাম আছে বলেই জিন তার গঠন বজায় রাখতে পারে, যতক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট শক্তি আরোপ করে এই গঠন না ভেঙে ফেলা হয়। সুতরাং জিন তার গঠন বিচ্ছিন্নভাবে পরিবর্তন করতে পারে, অবিচ্ছিন্নভাবে নয়।

প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবকটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র বলে প্রকৃতির বিচ্ছিন্নতাও অত্যন্ত ক্ষুদ্র। খালি চোখে তাই শক্তি, ভরবেগ ইত্যাদি অবিচ্ছিন্ন বলেই মনে হয়। কিন্তু বিজ্ঞানীর যন্ত্রেই মৌলিক বিচ্ছিন্নতা ধরা পড়ে, যেখানে শুরু হয় কোয়ান্টামজগৎ। কার্যের বিচ্ছিন্নতার অর্থ হলো এই যে, বস্তু যখন বিকিরণ নিঃসরণ বা শোষণ করে তখন তা হয় বিচ্ছিন্নভাবে। অর্থাৎ বিকিরণের কম্পাঙ্ক যদি v হয় তাহলে শোষিত বা নিঃসৃত শক্তি হবে hv, যেখানে h হলো প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। এটাই হলো শক্তির কোয়ান্টাম। কম্পাঙ্ক বড় হলে কোয়াটামের শক্তি বড়, ছোট হলে তা ছোট। এই কারণেই স্পন্দক যখন বিকিরণ, নিঃসরণ এবং শোষণ করে তখন বড় কম্পাঙ্কের স্পন্দকের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম। কেননা, এ ধরনের স্পন্দক উত্তেজিত করতে প্রতি কোয়ান্টামে বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়। সুতরাং উচ্চশক্তির স্পন্দনের ভূমিকা আর তেমন থাকে না এবং তাই কৃষ্ণবস্তুর বিকিরণের সঠিক বর্ণালির বণ্টন পাওয়া যায়। প্ল্যাঙ্ক তাঁর বিকিরণ সূত্রের প্রয়োজনে কোয়ান্টাম ধারণা প্রবর্তন করলেও এই ধারণা সর্বত্র সম্প্রসারিত করতে প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি বলেছেন যে, তিনি আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন মৌলিক কার্যের কোয়ান্টামকে চিরায়ত বলবিজ্ঞানের আওতায় নিয়ে আসতে। তিনি ছিলেন একজন অনিচ্ছুক বিপ্লবী। অনুপ্রাণিত অনুমানের ভিত্তিতে তিনি এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিলেন, যে বিপ্লবের ফলে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞান নিউটনের তুলনায় আজ এত ভিন্ন। ১৯০০ সালের ডিসেম্বরের পর আরো অনেক আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু পৃথিবী প্ল্যাঙ্কের মতো এমন একজন চরিত্র আর পায়নি।

১৮৫৮ সালের ২৩ এপ্রিল ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক জার্মানির কীল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই-বোন এবং স্নেহপরায়ণ পিতামাতার সঙ্গে ছোটবেলাটা তার আনন্দেই কেটেছে। তার মেধা, মননশীলতা এবং সঙ্গীতের চর্চা খুব যত্নের সঙ্গেই লালন করা হয়েছিল। সঙ্গীতবাদ দিয়ে তিনি যখন বিজ্ঞানকেই পেশা হিসেবে পছন্দ করলেন, তখন তার পিতামাতাই তাকে উৎসাহ দিয়েছেন সবচেয়ে বেশি। ১৮৭৪ সালের অক্টোবর মাসে গণিত অধ্যয়ন করতে প্ল্যাঙ্ক মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন, কিন্তু তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানই তাকে আকর্ষণ করল প্রবলভাবে। বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্বে তাঁর গভীর আগ্রহই তাঁকে গণিতবিদ না হয়ে পদার্থবিজ্ঞানী হতে প্রেরণা যোগাল। কিন্তু উচ্চতর গণিত তিনি কোনোদিনই বাদ দেননি এবং তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় গণিতই হয়ে দাঁড়াল তার প্রিয় সঙ্গী। এরপরে তিনি যখন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলেন, তখন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানই তার একমাত্র গবেষণার বস্তু হয়ে দাঁড়াল। এখানেই তিনি ক্লসিয়াসের তাপের যান্ত্রিক তত্ত্ব নামক গ্রন্থটি গভীর মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করা শুরু করেন। তাপবলবিদ্যাই এখন তাঁর প্রধান প্রেম হয়ে দাঁড়াল এবং তাপবলবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের উপরেই তিনি তাঁর ডক্টরেট গবেষণার বিষয় হিসেবে পছন্দ করে নিলেন। তাপবলবিদ্যার প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণের কারণ এই যে, তিনি মনে করতেন যে, এই বিজ্ঞানের প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে সাধারণ নীতি এবং এই দুই সূত্রের উপর ভিত্তি করেই দৃঢ় তাত্ত্বিক উপরিকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। ১৮৮৫ সালের ২ মে প্ল্যাঙ্ক কীল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর এক্সট্রাঅর্ডিনারিয়াস নিযুক্ত হন। এই পদটি সহযোগী অধ্যাপকের সমতুল্য। তাঁকে পূর্ণ প্রফেসর করা হয়নি। কেননা, জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানকে এই সময়ে পরীক্ষণ পদার্থবিজ্ঞানের মতো উঁচুমানের মনে করা হতো না। পদার্থবিজ্ঞানের যে কোনো অংশের উপরই প্ল্যাঙ্কের সমান দখল ছিল এবং অনেক বিষয়ের উপরই তিনি বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু তাঁর ছাত্রসংখ্যা ছিল খুবই কম। তবু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী পদ এবং মোটামুটি ভালো বেতনের জন্য তিনি এই সময়ে মারি মের্ক-এর সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হলেন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের বৈজ্ঞানিকজীবন সত্যিকারভাবে শুরু হয় ১৮৮৮ সালের ২৫ নভেম্বর যখন তিনি বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্শফের উত্তরাধিকারী হিসেবে তাঁর চেয়ারে এসে যোগদান করলেন। এই পদটি প্রথমে বোলৎসমান এবং পরে হার্জকে প্রদান করা হয়, কিন্তু দু জনই অপরাগতা প্রকাশ করায় প্ল্যাঙ্ক মনোনীত হলেন। একই সঙ্গে তাকে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিযুক্ত করা হয়। ১৮৯২ সালে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক পূর্ণ প্রফেসর হলেন এবং ১৯২৬ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি এই পদে নিযুক্ত ছিলেন।

প্ল্যাঙ্কের বিকিরণ সূত্রের গুরুত্ব সমসাময়িক পদার্থবিজ্ঞানীরা দ্রুত বুঝতে পেরেছিলেন। প্ল্যাঙ্ক মনে করতেন যে, বস্তু এবং বিকিরণের বিক্রিয়ার সময়েই শুধু শক্তি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গুচ্ছে নিঃসৃত এবং শোষিত হয়, কিন্তু মহাকাশে বিকিরণ তরঙ্গ হিসেবেই সঞ্চালিত হয়। আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে প্রমাণ করেন যে, মহাকাশেও বিকিরণ শক্তিগুচ্ছ হিসেবেই সঞ্চালিত হয় এবং বিকিরণের এই শক্তিগুচ্ছকেই বলে ফোটন।

আইনস্টাইন ছিলেন ওই সময়ে সম্পূর্ণ অপরিচিত এক তরুণ এবং তার প্রবন্ধ এনালেন ডার ফিজিক নামে গবেষণা পত্রিকায় ছাপানোর পিছনে ছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। কেননা, তিনি তখন ওই পত্রিকার সম্পাদক। দশ বছর পরে আইনস্টাইনকে সুইজারল্যান্ড থেকে বার্লিনে নিয়ে আসার পেছনেও ছিলেন ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক। আইনস্টাইনও ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ককে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করতেন।

প্ল্যাঙ্ক তার দীর্ঘ জীবনে প্রচুর সম্মান পেয়েছেন। যার মধ্যে প্রধানতম হলো ১৯১৮ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ। কিন্তু এই গৌরবময় জীবন একদিক দিয়ে অত্যন্ত বেদনারও। ১৯০৯ সালে তাঁর প্রথমা পত্নী মারা যান। তার এক পুত্র কার্ল প্রথম মহাযুদ্ধে নিহত হন। তাঁর দুই কন্যা সন্তান জন্মদানকালে মৃত্যুমুখে পতিত হন। সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা, তার আর এক পুত্র এরউইন ১৯৪৪ সালে হিটলারের জীবনের উপর আক্রমণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন, সেই সন্দেহে নাৎসিদের হাতে নিহত হন। তিনি ১৯১১ সালে তাঁর প্রথমা পত্নীর আত্মীয়া মার্গা ভন হোয়েসলিনকে বিবাহ করেন এবং তাদের হেরমান নামে একটি পুত্র হয়েছিল। প্ল্যাঙ্কের শেষ দুবছর গুটিনজেনে কাটে, যেখানে তাঁর সম্মানে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল বিজ্ঞানে গবেষণার কাজে সহায়তা করার জন্য। আজ এই সোসাইটি পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

১৯৪৭ সালের ৪ অক্টোবর ৮৯ বছর বয়সে বিরল প্রতিভার অধিকারী এই যুগস্রষ্টা অনিচ্ছুক বিপ্লবীর জীবন অবসান ঘটে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন