আদা – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ – Ada Brikkher Kotha - Humayun Ahmed |
আদা – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ – Ada Brikkher Kotha - Humayun Ahmed
‘বেহেশতে তোমাকে দেয়া হবে আদা মিশ্রিত পানীয়।’ - আল কোরআন, সূরা দাহর
“And they shall drink therin a cup tempared with Zanjabil (Ginger).”
আদার মতো নগণ্য কন্দমূল যা বাংলাদেশের ঝোপঝাড়ে জন্মে, তার স্থান হয়েছে বেহেশতের পানীয়তে?
অদ্ভুত ব্যাপার না?
বিপুল উৎসাহে কোনো কাজে লেগে পড়াকে আমরা বলি ‘আদা জল খেয়ে লাগা’। এই বাগধারাইবা কেন এসেছে। আদা পানি খেয়ে দেখেছি অতি অখাদ্য। আমেরিকায় Ginger Beer নামের এক ধরনের পানীয় আছে। আদা, চিনি, ক্রিম অব টারটার পানিতে মিশিয়ে ইস্ট দিয়ে ফার্মেন্টেড করে এই পানীয় তৈরি। সেটাও অখাদ্য। (অখাদ্য না বলে অপেয় বলা উচিত। তবে অখাদ্য শুনতে ভালো লাগে)।
তিব্বিয়া হাবিবিয়া ইউনানী কলেজের প্রভাষক হেকিম হযরত মাওলানা মোঃ মোস্তফা ‘আম আদা’ নামের এক আদার উল্লেখ করেছেন (রোগোপকারী গাছগাছালি ও লতাপাতা) । এই আদা শুধু আচার তৈরিতে ব্যবহার হয়। আমি এ ধরনের আদার কথা শুনি নি। ভারতীয় এবং চৈনিক ভেষজবিদরা আদার ঔষধি গুণাগুণ হাজার বছর আগেই জানতেন। অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা নানান রোগে আদা ব্যবহার করে আসছেন। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য রোগ প্রতিকারে আদার যেসব ব্যবহারের কথা বলেছেন তার কয়েকটি হলো— অক্ষুধায় এবং অরুচিতে। খাবারের আগে সৈন্ধব লবণ দিয়ে সামান্য আদা খাওয়া। সর্দি জ্বরে আদার রসে মধু মাখিয়ে খাওয়া। নেফ্রাইটিসে রোগীর খাবারের সঙ্গে আদার রস বা শুঠের (ঋক আদা) গুঁড়া মিশিয়ে পাওয়া। পুরনো আমাশয় গরম পানিতে গুঠের গুড়া মিশিয়ে খাওয়া। মাঢ়ি ফোলা রোগে দাঁতের গোড়ায় যন্ত্রণা এবং মাঢ়ি ফুলে রক্ত বের হলে গরম পানিতে দু’চামচ আদার রস মিশিয়ে দশ-পনেরো মিনিট মুখে রাখতে হবে। রক্তপাত বন্ধ করতে শুকনো আদাগুড়া (শুঁঠ) কেটে যাওয়া জায়গায় চেপে ধরলে কুঁক্তপাত বন্ধ হবে।
আমি নিজে আদা-চিকিৎসার ভেতর দিয়ে কখনো যাই নি। সিগারেট ছাড়ার কৌশল হিসেবে কিছুদিন শুকনা আদা চিবিয়েছি। লাভের মধ্যে লাভ এই হয়েছে, সিগারেট খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। নুহাশ পল্লীতে প্রতিবছর আদার চাষ হয়। বর্ষার পরপর আদা কেটে কেটে লাগানো হয়। পাঁচ থেকে ছয় মাসে গাছ বড় হয়। যখন পাতা হলুদ হয়ে যায়, তখন মাটি খুঁড়ে আদা বের করা হয়। একেকটা আদা একেক রকম। দেখতে এত ভালো লাগে!
আদা গাছের পাতার স্বাদও যে অবিকল আদার মতো এই তথ্য কি সবাই জানেন? আদার বদলে 'আদার পাতা দিয়ে গরুর মাংস অতি সুস্বাদু। পরীক্ষা প্রার্থনীয়।
“আদায় কাঁচকলায়” ব্যাপারটা কি জানেন?
আদা এবং কাঁচকলা বিপরীতধর্মী। একটি রেচক অপরটি বিরেচক। দুই বিপরীতধর্মীকে একসঙ্গে করা যাবে না। শুনেছি কাঁচকলার তরকারিতে আদা দিলে কাঁচকলা সিদ্ধ হয় না। বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার প্রয়োজন বোধ করি নি বলেই পরীক্ষা করা হয় নি।
আদার রসায়ন হচ্ছে— আদায় আছে শতকরা দুই ভাগ 'Essential oil যার প্রধান অংশ Zingiberene. আদার ঝাঁঝালো ব্যাপারটা আসে Zingerene থেকে। কিছু লবন থাকে (Potassium Oxalate) আর থাকে Terpenoids (Comphene, cineol, citral, Shogaoi, gingerol, bomeol Rosih)
ভেজা (আদ্র) মাটিতে জন্মে বলেই এর নাম আর্দ্রক। বোটানিক্যাল নাম Zingiber officinate Rose. আদার ফ্যামিলি Zingiberaceae. এই ফ্যামিলির কয়েকটি প্রজাতি পৃথিবীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। নওয়াজেশ আহমেদের লেখায় পড়েছি (বাংলার বনফুল) বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে এর এক প্রজাতি আছে। বনআদা (Wild ginger). যার বোটানিক্যাল নাম Zingiber spectabile.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন