আতা ফল ও গাছ – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ - Ata fol – Brikkher Kotha – Humayun Ahmed |
আতা ফল ও গাছ – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ - Ata fol – Brikkher Kotha – Humayun Ahmed
আতাগাছকে ইংরেজিতে বলে ‘সুইট সপ’— মিষ্টি দোকান। আমেরিকায় বলে সুগার আপেল। আরবি নাম শরিফা। এ দেশের অনেকেই শরিফা নামে চেনে। আমি ছোটবেলায় যে ফলকে আতাফল বলে চিনতাম সেটা আসলে নোনাফল। নামের এই ঝামেলা আমার মতো আরো অনেকের আছে।
পথের পাঁচালী-র দুর্গা নোনাফল চুরি করেছিল। সেই নোনা কিন্তু শরিফা না।
আমাদের মীরাবাজারের বাসায় প্রকাণ্ড একটা আতাগাছ ছিল। যখন ফল আসত এমনভাবে আসত যে গাছের পাতা দেখা যেত না। আমি আমার দীর্ঘ জীবনে কোনো গাছকে এত ফল দিতে দেখি নি। ছোটবেলায় আতাফল প্রচুর খেতে হয়েছে বলেই হয়তো এই ফল এখন আমার অপছন্দের তালিকায়।
আগরতলা থেকে প্রকাশিত প্রশান্ত কুমার ভট্টাচার্যের লেখা বিষাক্ত গাছ থেকে সাবধান বইটিতে আতাগাছকে বিষাক্ত তালিকায় ফেলা হয়েছে। বলা হয়েছে, আতাগাছের মূল, বীজ, পাতা, কাঁচাফল সবই বিষাক্ত। আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য চিরঞ্জীব বনৌষধি বইয়ে এই গাছের পাতা, বীজ, ফল কোনো কিছুই যেন গর্ভবতী মেয়েরা ব্যবহার না করে এই সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছেন। আন্দামানের সেলুলার জেলে এই গাছের পাতার রস চোখে লেগে অন্ধ হয়ে যাবার ঘটনাও না-কি ঘটেছে।
গ্রামে এই গাছের কাঁচা ফল ও পাতার রস গোপন গর্ভপাতে ব্যবহার করা হয়। এতে জরায়ু অতি দ্রুত সংকুচিত হয়। গর্ভপাতের পর প্রচুর রক্তক্ষরণে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি।
গাছের পাতা ও বীজে একধরনের এলকালয়েড থাকে (এনোলাইন, সোয়াভিনোলাইন। গাছটির কোনো অংশেই গ্লুকোসাইড থাকে না। বীজ থেকে পাওয়া তেলে থাকে সেসকিওটারফিন, পাইনিন, মিথানল, বেনজিন, মিথাইল এনগ্রানাইলেট, সেলিসাইলেট। কিছু পরিমাণে সেপোনিনও থাকে।
গাছটার বোটানিক্যাল নাম Annona quarmosa। পরিবার হলো Anonaceae।
আতাগাছ ভারতবর্ষের গাছ না বলে অনেকে মনে করেন। কারণ প্রাচীন কোনো আয়ুর্বেদ গ্রন্থে {চরক, শুশ্রুত} এই গাছের কোনোরকম উল্লেখ নেই।
আতা ফল এর ঔষধি ব্যবহার
গাছের পাতা, ফল এবং বীজ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গাছের পাতার রস মাথার উকুন ধ্বংসে কাজে লাগে। ব্রণ, পুরনো ক্ষতে পাতার রস কাজে আসে। জীবজন্তুর ক্ষতে পোকা হলে গাছের পাতার রস লাগালে পোকা মরে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন