সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

সে দিনের ফ্রান্স




১৬০০ থেকে ১৭০০ সালের মধ্যে, যখন আপনি প্যারিসের ভার্সাই প্রাসাদ পরিদর্শন করবেন, তখন আপনি লক্ষ্য করবেন যে, এর অপূর্ব জাঁকজমক থাকা সত্ত্বেও, প্রাসাদে কোনো বাথরুম ছিল না।
মধ্যযুগে টুথব্রাশ, ডিওডোরেন্ট, পারফিউম এবং টয়লেট পেপারও ছিল না। মানুষের মলমূত্র সরাসরি ভবনের জানালা দিয়ে ফেলে দেওয়া হতো।
উৎসবের সময়, ভার্সাই প্রাসাদের রান্নাঘর ১,৫০০ জনের জন্য ভোজ প্রস্তুত করত, যা ছিল সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।

আধুনিক চিত্রগুলোতে আমরা প্রায়শই সে যুগের চরিত্রদের পাখা হাতে দেখতে পাই, কিন্তু কারণ ছিল না গরম, বরং নারীদের স্কার্টের নিচে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াত, কারণ তখন ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার কোনো উপায় ছিল না। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং প্রবাহমান পানির অভাবের কারণে গোসল করাটা ছিল বিরল।
শুধুমাত্র অভিজাতরাই চাকর-চাকরানিদের উপর নির্ভর করতে পারত, যারা তাদের শরীর এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে এবং পোকামাকড় তাড়াতে পাখা ঝাপটাত।

আজকের দিনে ভার্সাইয়ের দর্শনার্থীরা সুদৃশ্য উদ্যান উপভোগ করেন, কিন্তু রাজত্বকালে বিখ্যাত রাজসভাগুলোর সময় এগুলো বাথরুম হিসেবে ব্যবহৃত হতো, কারণ কোনো শৌচাগার ছিল না।

মধ্যযুগে বেশিরভাগ বিয়ে জুন মাসে অনুষ্ঠিত হতো, অর্থাৎ গ্রীষ্মের শুরুতে। কারণ? বছরের প্রথম গোসল নেওয়া হতো মে মাসে, তাই জুনে গন্ধ সহনীয় থাকত। তবে, যেকোনো দুর্গন্ধ ঢাকতে কনে তার শরীরের কাছে ফুলের তোড়া রাখত, যা থেকেই "বউকনের তোড়া"র (history of bridal bouquet,) প্রথা শুরু হয়।

গোসল করা হতো একটি বড় টবে, যেখানে গরম পানি ভরা থাকত। পরিবারের প্রধান প্রথমে গোসলের সুযোগ পেত, তারপর বয়স অনুসারে অন্যরা। নবজাতকেরা ছিল শেষ, ফলে পানি এতটাই ময়লাযুক্ত হয়ে যেত যে, তা তাদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারত।

বাড়ির ছাদে সাধারণত কোনো অভ্যন্তরীণ আবরণ থাকত না, কাঠের বিমগুলো কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর এবং তেলাপোকার জন্য আশ্রয়স্থল ছিল। বৃষ্টি হলে ছাদে ফাঁটল দিয়ে পানি চুঁইয়ে পড়ত এবং এসব প্রাণী নিচে লাফিয়ে পড়ত।

যারা সামর্থ্যবান ছিল তারা টিনের প্লেটে খেত, কিন্তু কিছু খাবার, যেমন টমেটো, এই ধাতুকে জং ধরাত এবং বিষক্রিয়ার ফলে মৃত্যু হতো। বছরের পর বছর টমেটোকে বিষাক্ত বলে মনে করা হতো।

টিনের গ্লাসে বিয়ার বা হুইস্কি পান করা হতো, কিন্তু অ্যালকোহলের সঙ্গে টিন অক্সাইডের সংমিশ্রণ নরকোলেপ্সির মতো অচেতন অবস্থা সৃষ্টি করত। পথচারীরা এমন ব্যক্তিদের মৃত বলে ধরে নিত, এবং তাদের মরদেহ কফিনে রাখা হতো।

মৃতদেহ রান্নাঘরের টেবিলে রাখা হতো, যেখানে পরিবার এবং বন্ধুরা খাওয়া-দাওয়া করত এবং অপেক্ষা করত, যদি মৃতব্যক্তি জেগে ওঠে। এখান থেকেই ওয়েক বা শোকপ্রহরের প্রথা জন্ম নেয়।

ইংল্যান্ডে, কবরস্থানে স্থান সংকুলানের অভাবে পুরোনো কবর পুনরায় ব্যবহার করা হতো। মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে হাড়গুলো একত্রিত করে সংরক্ষণ করা হতো। পুরোনো কফিন খুললে প্রায়শই ঢাকনার ভেতরে আঁচড়ের দাগ পাওয়া যেত, যা ইঙ্গিত দিত যে, কবরস্থ ব্যক্তি তখনো জীবিত ছিল।

এ থেকেই মৃতব্যক্তির কবজিতে একটি দড়ি বাঁধার ধারণা আসে, যা কফিনের ঢাকনার ছিদ্র দিয়ে বাইরে একটি ঘণ্টার সঙ্গে যুক্ত থাকত। একজন পাহারাদার কয়েকদিন ধরে এটি পর্যবেক্ষণ করত, এবং যদি "মৃত" ব্যক্তি জীবিত থাকত, তাহলে সে হাত নড়ালে ঘণ্টা বাজত।

এই প্রথা থেকেই "Saved by the Bell" বা "ঘণ্টায় বেঁচে যাওয়া" কথাটির জন্ম হয়েছে, যা আমরা আজও ব্যবহার করি।

Tags:  ফ্রান্স এর ইতিহাস, Saved by the Bell, history of bridal bouquet,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন